ইনসাইড টক

‘ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতরে আরও ঢুকে পড়বে’


প্রকাশ: 01/10/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় সেখানে পশ্চিমাদের অবস্থান দুর্বল হলো কিনা সেটা এত তাড়াতাড়ি বলা মুশকিল। তবে দুর্বল হওয়ার কথা নয়। কারণ, অনেক আগে থেকেই রাশিয়া বলে আসছিল যে, ওই চার অঞ্চল তাদেরই হয়। সেটা পশ্চিমাও ভালো করে জানেন। আর এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতি বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনও হবে না।

অভিযানরত রুশ বাহিনী ও রুশভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের চার প্রদেশ খেরসন, ঝাপোজ্জিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে সেখানে পশ্চিমাদের অবস্থান, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ভবিষ্যতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এখন ইউক্রেন যদি যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে রাশিয়া তো ইউক্রেনের ভেতরে আরও সরাসরিভাবে ঢুকে পড়বে। এর মাধ্যমে অবস্থান যেমন আছে তেমনই থাকবে। আর যদি যুদ্ধ চলতে থাকে তাহলে তো ইউরোপের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কিন্তু ইউরোপ ভোগান্তি বাড়াবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ ইউরোপ এখন বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেন সেটা আগে থেকেই জানতো। সেখানে প্রায় ৮ বছর ধরে যুদ্ধ চলছিল কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া সে খবর প্রচার করেনি। ইউক্রেনের ডানপন্থীরা এই আট বছর ধরে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। এখন এই ঘটনার পর ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য দেয়া হবে কিনা সেটাও আগ্রহের বিষয়। পশ্চিমারা যদি এখন বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপই। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এখন অনেকটা ইউরোপের ওপরই নির্ভর করে। এখন ইউরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া সময় এসেছে তারা কি যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে নাকি তারা বিকল্প কিছু ভাববে সেটা তাদের বিষয়।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা জানি যে, ন্যাটোর সদস্য সব সময় আমেরিকাই অংশ হিসেবে ছিল বা বলা যায় সব বিষয়ে আমেরিকাকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। তারা নিজেরা কতখানি স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়। এই প্রশ্ন সব সময় ছিল। এখন এই প্রশ্ন আরও বড় হয়ে দাঁড়ালো। কারণ ইউরোপে একেকটি দেশে যে পরিমাণ মিলিটারি বছরের পর বছর ধরে আছে এবং এর ফলে ইউরোপের দেশগুলো কতটুকু স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালন করতে পেরেছে সেটি বড় প্রশ্ন। অর্থাৎ ইউপি সদস্য দেশগুলো নিজেরাই কতটা স্বাধীন সেটি বড় প্রশ্ন।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে ইউরোপের জনগণ। এখন এটা দেখার বিষয় যে, ইউরোপের জনগণ কি সিদ্ধান্ত দেয়। তারা রাশিয়ার এই পদক্ষেপ মেনে নেবে কিনা নাকি তারাও যুদ্ধমুখী হবে। তবে আমি মনে করি যুদ্ধমুখী হওয়ার সম্ভাবনা কম। যুদ্ধমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আরও আগেই হতে পারতো। কিন্তু তেমনটা হয়নি। সেখান যুদ্ধমুখী হওয়া মানেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়া। কারণ রাশিয়া বারবার বলে আসছে তাদের ওপর কোনো ধরনের আক্রমণ হলে তারা এটাকে সহজভাবে নেবে না। এ সমস্ত বিষয় বিবেচনা করলে ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়া সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি একটি সমাধানের বিষয়ও হতে পারে। কারণ যে অঞ্চল নিয়ে এতদিন বিতর্ক ছিল সেই ২০০৮ সাল থেকেই এবং তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়া এতদিন পিছু পা ছিল। আর এখন তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন যদি এটা মেনে না নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে রাশিয়াও তাদের শক্তি দেখাবে এবং হয়তো তখন ইউক্রেন আরও অঞ্চল হারাবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থামানোর জন্য নিজে যুদ্ধে জড়াবে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এটা বুঝা যাচ্ছে যে ইউরোপের জনগণ সেটা চাইবে না। ফলে সেখান শান্তি সৃষ্টি হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে ইউক্রেনের ওপর। তারা কি প্রক্রিয়া দেখায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭