ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপিতে নিষিদ্ধ ডা: জাফরুল্লাহ?


প্রকাশ: 01/10/2022


Thumbnail

ডা: জাফরুল্লাহ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির দুর্দিনের সাথী। কঠিন সময়ে বিএনপির পাশে যিনি দাঁড়িয়েছেন। গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিএনপির একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে তারেক জিয়া তার ওপর অনেক নির্ভর করতেন। বিএনপিতে তার প্রভাব প্রতিপত্তির কথা সবাই জানত। কিন্তু সেই ডা: জাফরুল্লাহই এখন বিএনপিতে অপাংক্তেয়। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, বিএনপিতে তিনি এখন নিষিদ্ধ। গত এক বছর ধরেই ডা: জাফরুল্লাহর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের টানাপোড়েন চলছিল। ডা: জাফরুল্লাহ স্পষ্টবাদী, সত্য কথা বলেন এবং সরাসরি তার অভিপ্রায়গুলো ব্যক্ত করেন। এটি বিএনপির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। এ কারণেই ডা: জাফরুল্লাহর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

ডা: জাফরুল্লাহ একবার তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার বদলে জাইমাকে নেতৃত্বে আনার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি একটি জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখাও প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি বিএনপির হাটু ভেঙ্গে গেছে বলে সমালোচনা করেছিলেন এবং বিএনপিকে ড্রয়িং রুম ছেড়ে মাঠে-ময়দানে, তৃণমূলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। আবার এই জাফরুল্লাহই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নিপীড়নেরও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি ডা: জাফরুল্লাহর কাছে শুধু প্রশংসাই চেয়েছে এবং বিএনপিকে যেন বড় করে দেখানো হয় সেটাই প্রত্যাশা করেছে। কিন্তু ডা: জাফরুল্লাহর মতো মুক্তিযোদ্ধারা সব সময় কারও তল্পিবাহক হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না। এ কারণেই তিনি যেটি বিশ্বাস করেন সেই বিশ্বাসের কথা বলেছেন। তার ধারণাগুলো ভুল হতে পারে বা তার বক্তব্যগুলো অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু তিনি যেটি মনে করেছেন সঠিক তিনি সেটি বলেছেন। এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে ডা: জাফরুল্লাহকে অন্তত দুটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া না করে দিয়েছেন। এমনকি বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর আলোচনা অনুষ্ঠানেও ডা: জাফরুল্লাহর নিষিদ্ধ হয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, ডা:জাফরুল্লাহ গাছেরটাও খান তলারটাও খান। তিনি সরকারের এজেন্ট। ওই নেতা দাবি করেছেন যে, ডা: জাফরুল্লাহ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। তিনি অনেক বিষয়ে সরকারের প্রশংসা করেন। কাজেই তিনি সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি হিসেবেই কাজ করছেন বলে বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির একটি গ্রন্থের প্রকাশনী উৎসব অনুষ্ঠানে ডা: জাফরুল্লাহকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ছিল এবং ডা: জাফরুল্লাহকে সেটি জানানোও হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এইখানে ডা: জাফরুল্লাহকে যেন না ডাকা হয় সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পরে আলোচকরা ডা: জাফরুল্লাহকে জানান যে, তাকে এই অনুষ্ঠানে আসতে হবে না। এরকম ঘটনা এখন হরহামেশাই হচ্ছে। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপিতে কি তাহলে ডা: জাফরুল্লাহর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল? সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে হাটুভাঙ্গা দল হিসেবে পরিচিত করেছেন। এর প্রতিবাদ করে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, বিএনপি হাটু ভাঙ্গা নয় বরং আওয়ামী লীগের কোমর ভেঙে গেছে। এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, এটি তার বক্তব্য নয় বরং বিএনপির থিংক ট্যাংক ডা: জাফরুল্লাহর বক্তব্য। এরপর বিএনপির নেতারা বলেছেন যে, ডা: জাফরুল্লাহ বিএনপির কেউ নন। তাহলে কি ডা: জাফরুল্লাহর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক সমাপ্ত হয়ে গেল?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭