প্রকাশ: 03/10/2022
গত শুক্রবারেই
ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজনে
ইউক্রেনে আরও কয়েক লাখ সেনা পাঠাবেন তিনি। এদিকে রুশ বাহিনীকে মরিয়া হয়ে প্রতিরোধ করে
চলেছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট। মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষায় ‘শেষ
পর্যন্ত’ লড়াই করবেন তাঁরা।
ইউক্রেনের চার
অঞ্চল রাশিয়ার অংশ করে পুতিনের ঘোষণার পর পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন
প্রকাশ করেছে বিবিসি। ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে,
তার মধ্যে একটি দোনেৎস্ক। সেখনাকার বাখমুত শহরের যে এলাকায় রুশ বাহিনী ও ইউক্রেনীয়
বাহিনীর যুদ্ধ চলছে, সেখানে গিয়েছিলেন বিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক। সম্মুখসমর দেখতে কয়েকটি
ধাপ পেরোতে হয়েছিল তাঁদের।
‘ফ্রন্ট লাইনে’
থাকা সেনাদের কাছে পৌঁছে তারা একটি ভবন দেখতে পান। ভেতরে যাওয়ার পরই তাঁরা ছোট আগ্নেয়াস্ত্র
থেকে গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পান। সেখানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সেনারা এতটা কাছাকাছি
অবস্থানে যে বন্দুক দিয়েই তাঁরা একে অপরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারেন। রাশিয়ার সেনাদের
অবস্থান মাত্র ৪০০ মিটার দূরে। তাঁরা আরও কাছে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ভেতরে বসে আছেন
একজন ইউনিট কমান্ডার। বিষণ্ন ও মলিন মুখে বসে আছেন তিনি। সেখানে একটি বিড়াল তাঁর সঙ্গী।
ওলেক্সান্দার নামের ৩১ বছর বয়সী ওই সেনা কমান্ডার বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি এখন খুব কঠিন।
এটা ক্লান্তিকর। প্রত্যেকে চাপে আছে। শুত্রুরা সন্নিকটে। কিন্তু আমাদের লড়তে হচ্ছে।’
পুতিনের নির্দেশে
সম্প্রতি ওই চারটি অঞ্চলে রাশিয়া যে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল, সেটাকে অর্থবহ কিছু
মনে করেন না ওলেক্সান্দার। রাশিয়ার বন্দুকের নল দিয়ে ইউক্রেনীয়দের শাসন করা যাবে না
বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওলেক্সান্দার বলেন, ‘আমার মতে, গণভোটে কিছুই বদলাবে না। আমরা
পুতিনের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব এবং তাঁদের আমাদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য
করব।’
যুদ্ধের জন্য
কতটা মূল্য দিতে হয়, তা ভালো করেই বুঝেছেন ওলেক্সান্দার। শুধু নিজের লড়াই থেকে নয়,
পরিবার ও বন্ধুদের দিয়েও তিনি এটা অনুভব করতে পারছেন।
ওলেক্সান্দার
বলেন, ‘আমার ভাই নিহত হয়েছে। কিন্তু এটা কখন কোথায় হয়েছে আমি জানি না। কারণ, ভিন্ন
একটি অঞ্চলের ভিন্ন একটি কার্যালয়ে এই যুদ্ধে লড়ার জন্য তাঁকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
তার সঙ্গে আমার কয়েকজন সহযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন, যাঁরা আমার সঙ্গেই
প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তারা আর কেউ নেই। এই যুদ্ধে আমি আমার
পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের হারিয়েছি।’
তবে এত কিছুর
পরেও যুদ্ধের ময়দান থেকে পিছপা হননি ওলেক্সান্দার। যেমনটা পিছপা হননি ২৫ বছর বয়সী ইউক্রেনের
আরেক সেনা রোমান। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র ড্রোন দিয়ে হামলা
পরিচালনা ও নজরদারির দায়িত্বে আছেন তিনি। বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি
ভবনের ওপরের কক্ষে বসে কাজ করেন তিনি। সেই কক্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বোমা হামলার সৃষ্ট
নানা ধ্বংসাবশেষ আর কাচের টুকরা। কক্ষটিতে রোমানের সঙ্গে আর দুই বাসিন্দা রয়েছে, তারা
দুটি বিড়াল। রোমানের মুঠোফোনের পর্দায় যে ছবি দেওয়া, সেটি তাঁর পাঁচ মাস বয়সী সন্তান
কিরিলোর। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস পর প্রথম সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি।
সন্তানকে নিয়ে
রোমান বলেন, ‘তাকে আমি শুধু ছবি ও ভিডিওতে দেখেছি, সরাসরি এখনো দেখতে পারিনি। আমার
জন্য এটা খুবই কঠিন একটা বিষয়। তবে একই সঙ্গে এটা কল্পনা করা কঠিন যে রাশিয়ার সেনারা
যদি আমার পরিবার পর্যন্ত চলে আসে, তাহলে তারা আমার পরিবারের সঙ্গে কী করবে? বুচায় যেটা
হয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে সেটা হতে দিতে চাই না। আমি কিয়েভের বাসিন্দা এবং ভালোভাবে অনুধাবন
করতে পারি নারীরা কেমন বোধ করছেন। আমরা যদি দুর্বল হয়ে যাই, তাহলে তারা (রুশ বাহিনী)
আমাদের পরিবার পর্যন্ত চলে যাবে।’
রাশিয়ার আরও
সেনা সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে এই ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। আগামী
মাসগুলোতে ক্রেমলিন যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন করে সেনা পাঠাবে। তারা কতটা প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রসস্ত্রে
সজ্জিত হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা তাদের (রুশ সেনা) সক্ষমতা নয়, বরং
তাদের সংখ্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনীয়
সেনারা সংখ্যায় কমে গেছেন। এখানকার (বাখমুত) যুদ্ধে তাদের অগণিত রুশ যোদ্ধার সঙ্গে
লড়তে হচ্ছে। কারণ, বিরামহীনভাবে সেনা পাঠাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একজন
মুখপাত্র ইরিয়ানার তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে পাঁচ ধাপে সেখানে সেনাবহর পাঠিয়েছে রুশ
বাহিনী।
ইরিয়ানা বলেন,
‘তারা (রাশিয়ার যোদ্ধা) শুধু সম্মুখে আগায়, কখনো থামে না। তাদের লক্ষ্য করে গুলি করলে
বা গোলা ছুড়লে তারা এর পাল্টা জবাবও দেয় না। যেসব রুশ যোদ্ধাকে আমরা বন্দী করেছি, তাঁদের
মধ্যে কয়েকজন ওয়াগনার গ্রুপের (রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদল)। তাদের কাছে যেসব অস্ত্র আছে,
সেগুলো বেশি আধুনিক।’
বাখমুতের যুদ্ধে
জয়ের জন্য রাশিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করছেন ইউক্রেনের সেনারা। এর কারণ হিসেবে
সম্প্রতি ইউক্রেনের উত্তর–পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর লজ্জাজনক হারের কথা বলেছেন
তাঁরা। এই দুই অঞ্চলে রুশ সেনাদের তাড়িয়ে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে
নিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
এখন প্রেসিডেন্ট
পুতিনের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে বাখমুত। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দনবাস এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে
রাশিয়ার জন্য এখন বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে সেখানে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ লড়াই। দোনেৎস্ক
ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাসে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এই যুদ্ধে তাদের
জিততে হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭