ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক সংকট: আমলাতান্ত্রিক পথে সমাধান হবে কি?


প্রকাশ: 03/10/2022


Thumbnail

অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ্য ঘনীভূত হচ্ছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট একদিকে যেমন কমছে না, ডলার সংকট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে তেমনি রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয়ও কমেছে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী আয়ের ওপর যে হিসেবে দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৮ কোটি ডলারের কিছু বেশি, যা গত মাসের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ কম। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনা করলে দেখা যাবে যে, প্রবাসী আয় কমেছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। আর সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। টানা ১৩ মাস রপ্তানি আয় বাড়ার পর এখন কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রমাগত গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ সংকট ইত্যাদি কারণে রপ্তানি আয়ের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়ছে।

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত হলো রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের আয়। এই দুটি খাতেই যখন সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিক সংকট কি তবে দানা বেধে উঠছে? এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত কয়েক মাস ধরেই অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংক,আইএমএফ এর কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে, শুধুমাত্র ঋণ সহায়তা নিয়ে অর্থনৈতিক সংকট কাটানো সম্ভব হবে না। বরং আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রবাসীদের আয় যেন বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমদানি সংকোচন নীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পরও এখন পর্যন্ত আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের আশাব্যঞ্জক কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বরং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়নের নিচে অবস্থান করছে। এই অবস্থায় সরকার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কি ভাবছে?

এখন পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার মূল দায়িত্বটি আমলাদের হাতে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একজন আমলা। তিনি অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি আসার পর বিভিন্ন নীতি কৌশল গ্রহণ করছেন অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্যে। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করছেন আমলারা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভূমিকা খুবই গৌণ। এমনকি অর্থনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তিনি অবগত থাকছেন না বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। সে বিবেচনা থেকে অনেকে মনে করেন যে, বর্তমানে অর্থনীতি পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দ্বারা। কিন্তু এরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে যারা অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আস উচিত। এক্ষেত্রে ড. আতিউর রহমান, ড. আবুল বারাকাত, ড. নাজনীন আহমেদ, বিনায়ক সেনের মত অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ প্রয়োজন এবং অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে তাদের পরামর্শগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে ধারণা  করা হচ্ছে।

ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। তাছাড়া তিনি গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর একজন পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব। কৃষিক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন বাড়ানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি এরকম সংকটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ড. আতিউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে অনেকে মনে করেন। অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতও তৃণমূলের অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন এবং বর্তমান সংকট মোকাবেলায় তার পরামর্শগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তিনিই প্রথম অর্থনীতিবিদ, যিনি নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা যাবে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে তথ্য উপাত্ত উত্থাপন করছিলেন। এছাড়াও কৃষি নিয়ে কাজ করা ড. বিনায়ক সেনেরও চিন্তা এবং গবেষণাগুলো বর্তমান সংকটে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু তা না করে সরকার এখন আমলাদের হাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে তা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭