ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলনের চমক কি জাতীয় পার্টি?


প্রকাশ: 03/10/2022


Thumbnail

২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি দ্বিতীয় দফা সংলাপ করছে। গতকাল কল্যাণ পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রথম দফার সংলাপে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করার ব্যাপারে নীতিগত ঐক্যমত পোষণ করেছি। দ্বিতীয় দফা আলোচনায় আমরা কোন কোন ইস্যুতে আন্দোলন করবো সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি। কল্যাণ পার্টির সঙ্গে বিএনপি ঐক্যমতে পৌঁছেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন যে, আন্দোলনে চমক আছে। এই আন্দোলনের চমক কি? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনে যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে সবগুলোই গুরুত্বহীন। উপরন্তু এখন জামায়াতকে বাদ দিয়ে তারা সংলাপ করছে। কাজেই কল্যাণ পার্টি বা অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করতে চাচ্ছে সেই দলগুলো কার্যত প্ল্যাটসবর্স্ব, নামসর্বস্ব এবং ব্যক্তি সর্বস্ব। কাজেই এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনই পরিণত হবে। কিন্তু তারপরও কিভাবে বিএনপি এবং কল্যাণ পার্টির নেতারা বলছেন যে, আন্দোলনে চমক আছে।

রাজনৈতিক একাধিক সূত্র বলছে, এই চমকের নাম জাতীয় পার্টি। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে তারা সংশয় প্রকাশ করছেন। গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে। ইত্যাদি কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কি বিএনপির কোনো গোপন যোগাযোগ হচ্ছে? কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে যে, বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির একটি সমঝোতা হতে পারে এবং জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এই সমঝোতা করছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে যে, আসলে সরাসরি জাতীয় পার্টির সাথে বিএনপি সমঝোতা হচ্ছে না। জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হচ্ছে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন  রাজনৈতিক মেরুকরণে জাতীয় পার্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টি হতে পারে তৃতীয় শক্তি। আর সে লক্ষ্যেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য করার জন্য বিএনপিকে কোনো কোনো কূটনীতিকরা পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবর রয়েছে। আর এই কারণেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি এখন ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করছে এবং সে লক্ষ্যে কিছু কিছু আলাপ-আলোচনা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, এরশাদ স্বৈরাচার ছিলেন, জিএম কাদের নয়। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নবজন্ম হয়েছে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন। তার মধ্যে জাতীয় পার্টি এখন একটি রাজনৈতিক দল এবং সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এই বাস্তবতায় জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যে কোনো সমস্যা নাই নেই বলে তারা মনে করেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন যে, জামায়াত প্রকাশ্যে থাকুক না থাকুক শেষ পর্যন্ত জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানে থাকবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে জাতীয় পার্টিকে যদি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে পরে সরকারের বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনের স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে। কারণ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচন কোনোভাবেই অর্থবহ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হবে না। এই বিবেচনা থেকেই জাতীয় পার্টিকে কাছে জানতে চাইছে বিএনপি। আর এটিই বিএনপির আন্দোলনের সবচেয়ে বড় চমক হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে।

তবে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে যে, জাতীয় পার্টির নেতারা কোনো অবস্থাতেই বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাবে না। জিএম কাদের চাইলেও তিনি জাতীয় পার্টিকে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নিতে পারবেন না বলেই জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতারা বলেছেন। জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেছেন যে, আমরা সরকারের সমালোচনা করছি এটা সত্যি। কিন্তু আমাদের স্বাতন্ত্র্য অবস্থায় রেখেই আমরা সরকারের সমালোচনা করছি। সরকারের সমালোচনা মানে এই না যে বিএনপির সঙ্গে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কাজেই বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির ঐক্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই শেষ পর্যন্ত বিএনপি যে চমকের কথা বলছে সেই চমক শুধু কথার ঘোষণাই থাকবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭