ইনসাইড বাংলাদেশ

নানা চাপে সরকার


প্রকাশ: 05/10/2022


Thumbnail

সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটা খারাপ বার্তা নিয়ে এসেছিল। এই সময়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রবাসী আয় কমেছে ১৩ শতাংশের মতো। সাত মাসের মধ্যে সর্ব নিম্ন প্রবাসী আয় এসেছে সেপ্টেম্বর মাসে। এই মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল বেশি। যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির হার প্রকাশ করেনি। কিন্তু বিবিএস সূত্রগুলো বলছে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছিল মুদ্রাস্ফীতি। এর মধ্যেই নানা সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। সরকারের সামনে চাপ বাড়ছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আগামী দেড় সরকারের জন্য বড় ধরনের দায়িত্ব বলে অনেকে মনে করছেন। সরকার কি পারবে এই চাপ সামলাতে? সরকারের ওপর যে চাপগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-

১. অর্থনৈতিক সংকট: অর্থনৈতিক সংকট কমছে না বরং ঘনীভূত হচ্ছে। আমদানি ব্যয় সংকোচন, অর্থনীতিতে কৃচ্ছ্বতা সাধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও সরকার সকল পাচ্ছে না। বরং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আস্তে আস্তে কমছে। গত মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। একই সাথে বিভিন্ন ঋণ এবং আমদানি দায় মেটানোর জন্য সামনের দিনগুলোতে সরকারকে আরও খরচ করতে হবে। যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হচ্ছে সেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে না। এর ফলে সরকার বিকল্প অনুসন্ধান করছে। চীনের সঙ্গে সরাসরি চীনা টাকায় লেনদেন করা বা পাউল এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কার্যকারিতা নিয়ে সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে কিন্তু সময় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছে। কারণ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্য এখন সংকট অপেক্ষা করছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভাল না। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চেহারাটা যে ফেকাসে ছিল তা আরও বিবর্ণ হয়ে উঠতে পারে সামনের দিনগুলোতে। 

২. রাজনৈতিক চাপ: সরকারবিরোধী আন্দোলন আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। এতদিন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো কেবল মুখেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলতো। কিন্তু এখন এই আন্দোলন গুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন সামনে আরও ব্যাপক হবে বলে অনেকের ধারণা করছেন। অনেকে মনে করছেন যে সামনের দিনগুলোতে  সরকারকে রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলা করতে হবে এবং এই চাপ মোকাবেলা কতটুকু সরকার করতে পারবে সেটি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।

৩. আন্তর্জাতিক চাপ: সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি নিয়ে অনেকদিন ধরেই সোচ্চার। সাম্প্রতিক সময়ে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও কথা বলতে শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে সামনের দিনগুলোতে এই আন্তর্জাতিক চাপ আরও দৃশ্যমান হবে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই কমিশনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন কমিশনও এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। সব কিছু মিলিয়ে সরকারের জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে বলেই অনেকে মনে করছে। এই চাপ মোকাবেলা করে একটা নির্বাচন আয়োজন করাই সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

৪. আওয়ামী লীগের একলা হয়ে যাওয়া: বিভিন্ন চাপের মধ্যে আওয়ামী লীগের ছিল সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ ছিল দীর্ঘদিন তারাও এখন আস্তে আস্তে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করছে। ১৪ দলীয় জোটের কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরাসরি এখন আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। মহাজোট কার্যত নেই। এ অবস্থায় একলা আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করবে সেটিও একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আর এই সমস্ত চাপগুলো মোকাবেলা করেই সামনে নির্বাচনের জন্য সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে এবং সেই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের উপর একটি চাপ আছে। দেখার বিষয় এই চাপ সরকার কিভাবে মোকাবেলা করে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭