ইনসাইড আর্টিকেল

দেশে দেশে 'ব্লাকআউট'


প্রকাশ: 06/10/2022


Thumbnail

গত মঙ্গলবার (৪ঠা অক্টবর)  সারা দেশে একটি বড় ধরণের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। সেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়াকে ব্ল্যাকআউট বলা হয়ে থাকে। একে ব্লাকআউট বলা হয় কারণ এর ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় বলে। ব্লাকআউট হয়  সাধারণত ফ্রিকোয়েন্সি গরমিলের কারণে। বিদ্যুৎ যে তরঙ্গে প্রবাহিত হয়, কোনও কারণে এর হেরফের হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ধরণের ঘটনা খুব দ্রুতই ঘটে যেতে পারে। যেমন মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই এই  ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে,  যদি কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে এর দশ ভাগ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গ্রিড ট্রিপ (বিপর্যয়) করার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশে ৫০ মেগা হার্টজ তরঙ্গে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কোনও কারণে এই তরঙ্গ যদি ৪৮-এ নেমে আসে বা ৫২-তে উঠে যায়, তাহলেই ট্রিপের ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালে যখন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল তখন ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে জাতীয় গ্রিড ট্রিপ করে। একবার গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। বড় বিপর্যয় ঠেকাতে কেন্দ্রগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে কারিগরি কারণে সেটি চালু হতে সময় লাগে। ফলে চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না।

 ব্লাক আউট কোন দেশের জন্যই কাম্য নয়। কারণ ব্লাকআউট হলে দেশের মানুষের ভোগান্তিতে পরতে হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, ব্যংক লেনদেনের মত গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পরে। যা একটি দেশের সার্বিক নানা বিষয়ের জন্য অসুবিধার, ভোগান্তির এবং ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।শুধুমাত্র আমাদের দেশই নয়, অনেক সময় অনেক দেশই এমন  ব্লাকআউটের মত পরিস্থিতে পরেছিল এর আগে। আজ আমরা তেমন কয়েকটি দেশের ব্লাকআউট সম্পর্কে জেনে নেই। প্রথমেই শুরু করা যাক আমাদের পাশের দেশ ভারতকে দিয়ে। ভারত সব থেকে বড় দুইটি ব্লাকআউট দেখেছে।


ভারত  ব্ল্যাকআউটঃ

২০১২  সালের ৩০ এবং ৩১ জুলাই ভারতের দুটি মারাত্মক বিদ্যুৎ বিভ্রাট উত্তর ও পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অংশে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। ২০১২ সালের  ৩০সে  জুলাই  ৪০০  মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে সমস্যার মুখে  ফেলেছিল। ভারতের এই বিদ্যুৎ বিভ্রান্তিকে  ইতিহাসে বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিভ্রাট বলা হয়। ভারতের এই ব্লাকআউটটি ভারতে হওয়া  ২০০১  সালের জানুয়ারী মাসের আরেকটি ব্ল্যাকআউটের থেকেও অনেক্ষন স্থায়ী ছিল।এই ব্লাকআউটে প্রায় ২২ টি রাজ্যের মানুষ অন্ধকারে নিমজ্বিত হয়। আর সব থেকে ভয়াবহ বিষয় যেটা ছিল সেটি হল এ সময় পশ্চিমবজ্ঞের খনির নিচের লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত খনি শ্রমিক মাটির নিচে আটকা পরেছিল। আনুমানিক 32 গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অফলাইনে হওয়ায় এই ব্লাকআউটটি হয়েছিল। ১ লা আগষ্ট বিদ্যুতের পুনরুদ্ধার করা হয়।


শ্রীলঙ্কা ব্ল্যাকআউটঃ

 ২০২০  সালের ১৭ ই আগস্ট শ্রীলঙ্কায় যে  ব্ল্যাকআউট ঘটে, তাকে বলা যেতে পারে বৈদ্যুতিক ব্ল্যাকআউটগুলির একটি সিরিজ। কারণ  রাত সাড়ে ১২ টা থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়টি  সাত ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়েছিল৷  এই বিপর্যয়টি ঘটেছিল কেরাওয়ালপিটিয়া গ্রিড-সাব স্টেশনে একটি ট্রান্সমিশন প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার কারণে। সে সময় শ্রীলঙ্কার  ইলেকট্রিসিটি বোর্ড ঘোষণা করেছিল যে ব্ল্যাকআউটের কারণ তারা নির্ধারণ করতে পারেনি, যা পরে তাদের একটি অনির্দিষ্ট ব্যর্থতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল  যে ব্ল্যাকআউটের মূল কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি বিশেষ কমিটি নিয়োগ করা হয়েছিল।


পাকিস্থান ব্লাকআউটঃ

২০২১ সালে বড় ধরনের ব্ল্যাকআউটের কবলে পরেছিল পাকিস্তান। এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বড় শহরগুলোসহ পুরো দেশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। ব্লাকআউটের  বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায় করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মুলতানের মতো বড় বড় শহরের পাশাপাশি অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ব্লাকআউটের কথা জানিয়ে টুইট করেন দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী ওমর আইয়ুব খান।  জাতীয় পর্যায়ে জ্বালানি সরবরাহের মাত্রা হঠাৎ করেই ৫০ থেকে শূন্যতে নেমে আসায় এই ব্ল্যাকআউট হয়েছিল  বলে সে সময় পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে বড় ধরনের ব্লাকআউটের কবলে পড়েছিল পাকিস্তান। ওই সময়ে গোটা দেশের ৮০ শতাংশ এলাকা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল।



তুরস্ক ব্ল্যাকআউটঃ 

২০১৫ সালে তুরস্ক ব্ল্যাকআউট ছিল একটি ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ৩১শে মার্চ ২০১৫  সালের মঙ্গলবার সকালে তুরস্কের প্রায় সমস্ত অংশে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছিল। প্রধান পূর্ব-পশ্চিম করিডোরে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ওসমানকা-কুরসুনলু লাইন ছিটকে যাওয়ার পরে অবশিষ্ট লাইনগুলি ওভারলোড হয়ে যায়, কারণ সিস্টেমটি এন-1 সুরক্ষিত ছিল না। এই কারণেই এই গোলযোগের প্রভাব শুধুমাত্র তুরস্কেই নয় বরং প্রতিবেশি দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পরেছিল। ব্ল্যাকআউটের ৬.৫  ঘন্টা পরে পুরো সিস্টেমটি পুনরূদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।


ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ে ব্ল্যাকআউটঃ

২০০৯ সালে  প্যারাগুয়ে-ব্রাজিল সীমান্তে ইতাপিউ জলবিদ্যুৎ বাঁধটি হঠাৎ করে ১৭,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিলে, বিভ্রাট দ্রুত উভয় দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় এই ব্লাকআউটটি করা হয়েছিল হ্যাকারের মাধ্যমে।

থাইল্যান্ড  ব্ল্যাকআউটঃ

১৯৭৮ সালের ১৮ই মার্চ থাইল্যান্ডে এই ব্লাকআউটটি হয়। থাইল্যান্ডের বিদ্যুৎ  পাওয়ার প্ল্যান্টের জেনারেটর ব্যর্থ হলে, থাইল্যান্ড জুড়ে দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউটের শিকার হয়। কর্তৃপক্ষ এই  বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে নয় ঘণ্টারও বেশি সময় লাগায় । এরপর  ২০১৩ সালের মে মাসে থাইল্যান্ড আরও একটি ব্লাকআউট দেখে যা ৭৮ সালের সেই বিশাল ব্লাকআউটের কথা তাদের আবার মনে করিয়ে দেয়। 

উত্তরপূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ব্ল্যাকআউটঃ

২০০৩ সালে একটি উচ্চ-ভোল্টেজ পাওয়ার লাইনের উপর একটি বৃদ্ধ গাছ ভেজ্ঞে পরলে সিস্টেম অপারেটররা  কি ঘটেছে তা বের করার চেষ্টা করতে করতে প্রথম লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থতার ফলে অন্য তিনটি লাইন বন্ধ হয়ে যায়।  ফলে বিকেল ৪ টা নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব কানাডা এবং আটটি উত্তর-পূর্ব আমেরিকার রাজ্য বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পরে। আর এটি ছিল সব থেকে বড় ব্লাকআউটের ঘটনা।এর ফলে ৫০ মিলিয়ন মানুষ দুই দিন অসুবিধা ভোগ করে এবং ১১ জন মানুষ মারা যায়। এই ঘটনার পর ভবিষ্যতে যাতে  ব্ল্যাকআউট কমানো যায় তার  জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করতে সাহায্য করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭