ইনসাইড পলিটিক্স

নতুন সংবিধান: কার এজেন্ডা?


প্রকাশ: 06/10/2022


Thumbnail

বিএনপি এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। কেবল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নয়, বিএনপি তিন ধাপে তাদের আইন এবং সাংবিধানিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বিএনপি বলছে যে, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। নির্বাচনের পর যে সমস্ত দলগুলো একসাথে আন্দোলন করবে তাদের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হবে এবং এই জাতিয় সরকার সংবিধান সংশোধন করবে। এই ত্রিমাত্রিক কর্মসূচীর কোন ধাপ কখন করবে সে সম্পর্কেও বিএনপি নেতারা বলছেন। তারা বলছেন যে, প্রথম তাদের লক্ষ হলো একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন যে, আগে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেভাবে ছিল সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে, দ্বিতীয় ধাপে তারা যুগপৎ আন্দোলনে যে সমস্ত শরিকদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করবেন তাদেরকে নিয়েই একটি জাতিয় সরকার গঠন করবেন এবং তৃতীয় দফায় তারা সংবিধান সংশোধন করবেন। নতুন সংবিধান কেমন হবে সে সম্পর্কে বিএনপি নেতারা কিছু কিছু ধারণা দিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন সংবিধানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়ত তারা বলছেন যে, সংসদ হবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। হঠাৎ করে নতুন সংবিধানের এজেন্ডা কেন বিএনপির মধ্যে আসল, তা নিয়ে রাজনৈতিক অজ্ঞানে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যখন বিএনপি আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে সে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী যখন সাংবিধানিক ভাবে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন এবং শূন্যতার সৃষ্টি করেছে ঠিক তখন কিভাবে নতুন সংবিধানের কথাটি আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, নতুন সংবিধানের ধারণাটি এসেছে সুশীল সমাজের কাছ থেকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. শাহদীন মালিক, আসিফ নজরুলসহ যারা বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত রয়েছেন তারাই নতুন সংবিধানের কথা বলছেন। আর নতুন সংবিধান করার পেছনে বিএনপির একটি উদ্দেশ্য আছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, বর্তমানে তারেক জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়া দুজনেই দন্ডিত। এই সংবিধান অনুযায়ী তারা কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি সরকারপ্রধান বা সংসদের নেতাও হতে পারবেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি, এটা ভাবতেই তারা নতুন সংবিধানের বিষয়টি সামনে এনেছে। অন্যদিকে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুশীল সমাজেরও উৎসাহ রয়েছে। সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা চায়। যখনই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তখনই সুশীল সমাজ ক্ষমতার কেন্দ্রে জাঁকিয়ে বসতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যখন থেকে প্রতবর্তীত হলো তখন থেকে সুশীল সমাজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মানেই সুশীল সমাজের শাসন। ২০০৭ সালের সুশীল সমাজের এই কর্তৃত্ব আরও প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় দুই বছর সুশীল সমাজনিয়ন্ত্রিত সরকার দেশ পরিচালনা করে। আর এ কারণেই সুশীল সমাজ মনে করছে যে, ক্ষমতায় তাদের স্থায়ী হিস্যা দরকার। আর এই হিস্যা লাভের জন্যেই তারা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছে, যেখানে উচ্চকক্ষে সুশীল প্রতিনিধিরা থাকবে। আর এ কারণেই তারা বিএনপিকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট এবং রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছেন। সুশীলদের প্রস্তাবনা হলো যে, রাষ্ট্রপতি হবেন সুশীল নিয়ন্ত্রিত এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন দলীয়। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে সুশীল সমাজ যেটি পারেনি, সেটিই তারা এখন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে হাসিল করতে চায়। এ কারণেই তারা এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবীর সাথে সাথে নতুন সংবিধানের দাবিকে যুক্ত করেছে। কিন্তু সুশীলদের এই অভিপ্রায় পূরণ করতে পারবে কি বিএনপি?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭