ইনসাইড পলিটিক্স

সুলতানা কামালকে আক্রমণ, তোপের মুখে রিজভী


প্রকাশ: 06/10/2022


Thumbnail

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রায় বেসামাল কথাবার্তা বলেন। দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তার জন্য তিনি দল এবং দলের বাইরে আলোচিত-সমালোচিত। মাঝে মাঝেই তার বক্তব্য কৌতুকের জন্ম দেয়, মাঝে মাঝে তার বক্তব্য জনমনে নানা রকম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে তার একটি বক্তব্য নিয়ে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদেরই তোপের মুখে পড়েছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন যে, সুলতানা কামাল কিসের বুদ্ধিজীবী, তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের মত কথা বলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাডার। তার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সুশীল সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সঙ্গে সুশীল সমাজে আধা গোপন-আধা প্রকাশ্য এক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সুশীল সমাজ বিএনপিকে নানারকম তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করছে। শুধু তাই নয়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিএনপির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করছে। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য সুশীল সমাজ অর্থনৈতিক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম তথ্য সরবরাহ করছে। এই তথ্যগুলোই উগড়ে দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। সুশীল সমাজের কোন কোন নেতা এখন প্রতিনিয়ত বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এরকম পরিস্থিতিতে সুলতানা কামালকে আক্রমণ করাতে সুশীল সমাজের বিএনপিপন্থী অংশরা অত্যন্ত বিব্রত এবং বিরক্ত। এ নিয়ে রুহুল কবির রিজভী মুখে পড়েছেন।

সুলতানা কামাল বেগম সুফিয়া কামালের কন্যা। কিন্তু তিনি স্বাধীন এবং স্বকীয় একটি অবস্থান সবসময় বজায় রেখেছেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও তিনি সবসময় সোচ্চার থাকেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন এবং যেখানে আওয়ামী লীগের দোষত্রুটি পান সেটি বলতে তিনি কার্পণ্য করেনা। বিশেষ করে মানবাধিকার ইস্যুতে তিনি সবসময় সোচ্চার। সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি নিয়েও সুলতানা কামাল সবসময় কথা বলেন। এখন বিএনপি যখন চাইছে যে সুশীল সমাজকে আওয়ামী লীগের থেকে আলাদা করতে তখন সুলতানা কামালকে এই ভাষায় কথা বলাটা একেবারেই অবিবেচকসূলভ বলে মনে করা হচ্ছে। ড. আসিফ নজরুল, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, বদিউল আলম মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, যারা এখন বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন হবে কাজ করছেন তারা বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মঈন খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে, সুলতানা কামালকে এভাবে আক্রমণ করাটা এই সময়ে সংযত হয়নি এবং সঙ্গত নয়। এর ফলে সুশীল সমাজের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যাবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপির অসহিষ্ণুতার চিত্রটি ফুটে উঠবে।

বিভিন্ন মহল মনে করবে যে, বিএনপি আসলে কতটুকু সহনশীল যতটুকু তাদের পক্ষে যায়। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তারা অসহনশীল হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতারা গত এক বছর ধরে কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে এবং সুশীল সমাজের মধ্যে তাদের যে বদলে দেওয়ার গল্প শোনাচ্ছেন এবং তাদের যে নতুন ধারার কথা বলছেন সেটি রিজভী এক কথায় কর্পূরের মত উড়ে গেছে। কারণ, রিজভীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপির অসহিষ্ণুতার প্রকাশ হয়েছে। যারা সুলতানা কামালকে শ্রদ্ধা করেন তারা এই ঘটনাটাতে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন। কারণ, সুলতানা কামাল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারোরই নন। তিনি একটি মুক্ত চিন্তার ধারক-বাহক। এজন্যই ড. আসিফ নজরুল বা আদিলুর রহমান খানের মত কট্টর বিএনপিপন্থীরাও তাকে সম্মান করে। তাকে এভাবে আক্রমণ আওয়ামী লীগও করতে পারেনি। এরকম মন্তব্য করে বিএনপিপন্থী সুশীলরা এখন রিজভীকে সাবধান হয়ে যেতে বলছেন। কিন্তু রিজভীর এই মুখ কি তারা সামাল দিতে পারবেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭