ইনসাইড আর্টিকেল

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: রূপকথার রাজ্যের সোনার খনি


প্রকাশ: 08/10/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দরগুলো এক একটি রূপকথার রাজ্য। রূপকথার রাজ্যে যেমন অলীক ব্যাপার ঘটা খুবই সাধারণ বিষয়, তেমনি বাংলাদেশের বিমান বন্দরগুলোতেও ঘটে এমন অলীক ঘটনা। ভাবছেন অলীক বিষয়ের সাথে  বাংলাদেশের বিমানবন্দরের যোগসূত্র কি? বলছি-

বাংলাদেশের যে কোন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যদি আপনি  যান তাহলে প্রথমেই বলে রাখি, ডাস্টবিন, ময়লার ভাগাড়, ময়লার ট্রলি এসব জিনিসকে নিতান্তই বাজে বা নগন্য জিনিস ভাববেন না মোটেই। ‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই,পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’, এই প্রবাদ বাক্যের সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর গুলোর এসব ময়লার স্তুপের ভীষণ মিল পাওয়া যায়। ময়লার ডাস্টবিন হাতালেই হয়ত পেয়ে যেতে পারেন কোটি কোটি টাকা মূল্যের  সোনার বার। রূপকথার রাজ্যের মতই কেউ যেন এই সোনার বার গুলো বিমান বন্দরের যেখানে সেখানে ফেলে রেখে গেছেন। 

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে চোরাই পথে আসা সোনা আটক হয়, উদ্ধার হয় এগুলো একদমই নতুন বিষয় নয়। মাসে কয়েকবার করেই এভাবে আটক হয় স্বর্ণ। গত বৃহস্পতিবার  (৬ই অক্টোবর) ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডাস্টবিনে পাওয়া গেছে প্রায়  ৩০টি সোনার বার । এগুলোর আনুমানিক ওজন ৩ কেজি ৪৮০ গ্রাম এবং বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ২৬ জুলাই সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ময়লার ঝুড়ি থেকে ১০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছিল। 

কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ১৬ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। আবার এপ্রিলের ২৭ তারিখ ওই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টয়লেটের ময়লার ঝুড়ি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের সোনা জব্দ করেছিল পুলিশ। সেখানে ৪৬টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়, যার ওজন ৫ কেজি ৩৫৯ গ্রাম। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আবার চলতি বছরেরই বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় আরও প্রচুর সোনা। একটু-আধটু নয়, পরপর ৭০ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয় বিমানবন্দর চত্বর থেকে। । মোট ৮ কেজি ১২০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার হয়েছিল সেই সময়।  

উপরের ঘটনাগুলো যাচাই করলে বলাই যায়, বিমানবন্দরের ময়লার ভাগার যেন তেন কিছু নয়। এগুলোও একেকটা কোটি টাকার সম্পদ। এখন প্রশ্ন আসে, এই ময়লার ভাগাড়গুলোকে কোটি টাকার সোনার আরত বানালো কারা?  উত্তর আসবে, সোনা চোরাকারবারিরা, কিন্তু তারা নাগালের বাইরে কেন? অনেক সময় যারা সোনা বহন করে তারাই ধরা পরে কিন্তু এসবের পেছনের মূল টনক যারা নাড়ছে তারা কেন ধরা পরছে না? তারা পর্দার আড়ালের পেছনে কিভাবে থাকছে, কিভাবে তারা এত অপ্রতিরোধ্য?  আর এসবের ফলে বাংলাদেশ সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করেন যে দেশি বিদেশি প্রভাবশালী চোরাচালানকারীর সাথে যোগসূত্র আছে আন্তর্জাতিক বিমান এয়ারপোর্টের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর। ফলে চোরাকারবারি হয় ভীষণ নির্বিঘ্নে। এছাড়া এই জমজমাট চোরাকারবারির গডফাদাররা থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, ফলে এরা মূলত নাগালের বাইরের অদৃশ্য মানব।  আর যেসকল চোরাকারবারির সোনা এয়ারপোর্টে ধরা পরে তার সাথেও আছে আরেকটি বিষয়ের যোগসূত্র, আর তা হল অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা ভেতরের কর্মকর্তার সাথে লেনদেন নিয়ে বনিবনা না হওয়ার দরুন। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ ধরা পরতে দেখি বা ধরা পড়ে তা পাচার হওয়া সোনার দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। আর এই সকল গডফাদাররা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকে ফলে এরা থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনীর নাগালের বাইরে।

বাজুসের ২০২২ সালের তালিকা মতে বাংলাদেশে সোনার অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বছরে আনুমানিক ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে সবথেকে বেশি স্বর্ণ ব্যবহার হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই এই চোরাচালানের  রুট হিসেবে ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা। আর বাংলাদেশে অবৈধ পথে স্বর্ণ আসে বলেই এদেশের সরকার  তার  রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। সোনা চোরাচালানের ফলে দেশের বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সোনার দাম বৃদ্ধি পায়।এছাড়া দেশে চলমান ডলার সঙ্কট ও অর্থপাচারের সঙ্গে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেট সমূহের সম্পর্কও রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। ফলে এটি সরাসরি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সোনা চোরাচালানের ফলে গড়ে উঠছে অপরাধী চক্র এবং অবৈধ অস্ত্র লেনদেনও হয় এর মাধ্যেমে যা জঙ্গী উত্থানের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতেও পারে।
 
তাই সোনা চোরাকারবারি রোধ করতে আইন- প্রয়োগকারি সংস্থা সমূহের জোড়ালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭