ইনসাইড থট

বুদ্ধিজীবীরা খুব শিগগিরই অনেক কিছু ভুলে যান


প্রকাশ: 10/10/2022


Thumbnail

আমাদের বাঙালিদের একটি সবচেয়ে বড় গুণ হলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমূহ। এক বছর তিন মাসের মত আছে নির্বাচনের। এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হচ্ছে। ইভিএম নিয়েও আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আবার সেই অসাংবিধানিক পথে নির্বাচন করা যায় কিনা তা নিয়েও আলাপ হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা তো রীতিমতো নতুন সুট কোড বানাতে দিয়েছেন। শুধু ডেলিভারি নেন নাই। অনেকে তাদের আগের সুট কোট ধৌত করতে দিয়েছেন। কারণ অসাংবিধানিক পথে আসলেই তারা একবছর বা দুই বছরের জন্য যদি আবার গদি দখল করতে পারেন। আবার এরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলেন। বিশেষ করে দুটি প্রিন্টিং মিডিয়া এবং যেকোনো টিভি খুলি তাহলে সব জায়গায় দেখা যায় একই আলাপ আলোচনা। টকশোতেও একই আলাপ আলোচনা। সব আলাপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কি? এটা তো যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তার দায়িত্ব। সুতরাং দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দায়িত্ব দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর করা, দেশ উন্নত করা ইত্যাদি। তাদের এই যুক্তি ঠিক আছে।

কিন্তু এটা অক্টোবর মাস। আজ ১০ অক্টোবর। এই ১০ অক্টোবর প্রথম জামায়াত-বিএনপি মিলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। আমি এটাকে প্রথম বলছি অন্য কারণে। কারণ এর আগে জামায়াতের সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করলেও অন্যভাবে কায়দা করেছিল। কিন্তু এবারই প্রথম রাখঢাক ছেড়ে দিয়ে ১০ তারিখে যারা স্বাধীনতা চায় নাই, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যাদের পরবর্তীতে স্বাভাবিক আইন কানুন ফলো করে যাদের ফাঁসি হয়েছে প্রথম তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল বিএনপি। একথা নিয়ে কোনো আলাপ হচ্ছে না। কথা নিয়ে আজকে পত্রিকার প্রধান হেডিং হওয়ার কথা ছিল। সমস্ত পত্রিকায়, সমস্ত টেলিভিশনে এটা প্রচার করা উচিত ছিল যে, আজ১০ অক্টোবরবাঙালি জাতির জন্য কালো দিবস। কারণ হচ্ছে এদিনই যারা  আমাদের দেশে চায় নাই সেই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে আজকের দিনে জাতীয় পতাকা উঠেছিল।

আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলাম সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে।

এদেশের বঙ্গমাতা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তার বাচ্চারা, তারা খুব ছোট তাদের সকলেই অবরুদ্ধ বাংলাদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব করেছে। চোখের সামনে যখন দেখা যায় যে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করে দেশটাকে পেয়েছি, এই পতাকা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে। কিন্তু এই পতাকাটা দেয়া হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি তাদের গাড়িতে এবং সেই পতাকা তারা পাঁচ বছর উড়ালো। তাদের নিয়ে আবার আজ-কাল গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কি হিজরতের পক্ষে নাকি? আমার মনে হচ্ছে এই ১০ অক্টোবর শুধু কালো দিবস নয়, বুদ্ধিজীবীদের হিজরত দিবস উচিত। তাদের পাকিস্তানে চলে যা উচিত। যারা দেশ চায় নাই, তাদের হাতে যারা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে তাদের তো স্বাধীন দেশে থাকার কোন অধিকারই নেই। নির্বাচন তো অনেক দূরের কথা। নির্বাচন বিএনপি করবে কিসের জন্য? তারা আজকে বলছে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচন করবে না। কিন্তু আমি তো উল্টো বলি যে, তাদের নির্বাচন করার কোন অধিকার নাই। তারা তো বাংলাদেশকে বিশ্বাসই করে না। যদি বিশ্বাস করতো তাহলে যারা দেশ স্বাধীন চায় নাই তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে কেন? তাদের তো এই দেশে থাকার অধিকার নাই। সুতরাং নির্বাচন তো দূরের কথা। যে সকল বুদ্ধিজীবীরা তাদেরকে সমর্থন করছেন তাদেরও এদেশে থাকার কোন অধিকার নাই। সুতরাং একচেটিয়া নির্বাচন হবে, কোন দেশ মানল কি মানলো না তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ দেশটা আমাদের, আমরা আমাদের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছি এবং এই দেশের তারাই ক্ষমতায় থাকবে, তারাই শুধুমাত্র দেশ পরিচালনা করবে যারা দেশটাকে স্বাধীন করেছে। সুতরাং যারা স্বাধীন করেনি বরং এর বিরোধিতা করেছে, যারা পাকিস্তান চেয়েছে, তারা পাকিস্তানে যেয়ে নির্বাচন করুক। পাকিস্তানের নির্বাচনের কিছুদিন পরে হবে। এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশের পরপর ওখানে নির্বাচন হবে তারা সেখানে নির্বাচন করুক। বিএনপি তাদের সব বুদ্ধিজীবীসহ চলে যাক।

গণ আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, এমনকি এই মুক্তিযুদ্ধে বাম রাজনীতিবিদদের অবদান অনস্বীকার্য রাজনীতিতে কে কি ভুল করেছে সেটা অন্য জিনিস। কিন্তু যিনি বাংলাদেশ বিশ্বাস করেন, তিনি বাংলাদেশে বসে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা হতে পারে, তাদের মতবাদ আলাদা হতে পারে, তারা তর্ক বিতর্ক করতে পারে কিন্তু যারা দেশই চায় নাই তাদের সাথে তো কোন আলাপ হতে পারে না। সুতরাং এদেশে বাম দল আছে যারা, তারা নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে এবং যারা এই স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ চেয়েছে এবং আমাদের পতাকা দিয়েছে তারাই শুধু মাত্র একমাত্র এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমিসহ আমরা ভুল করেছি এতদিন তাদেরকে বিশেষ করে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবরের পরে  তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিয়ে। আমাদের বরং স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে, তোমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই এবং তোমাদের যারা সমর্থন করে তাদেরও কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশ সম্বন্ধে কোন কথা বলার। তোমাদের কথা বলতে হলে, তোমাদের কিছু লিখতে হলে তোমরা পাকিস্তানের পক্ষে লেখ। যারা দেশের কথায় বিশ্বাস করে না তাদের সাথে কিসের তাদের আলাপ-আলোচনা।

আমার মতে, শুধু আজকে জামায়াত নয়, জামায়াতের সাথে সাথে বিএনপিকেও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কেননা তারাই সেদিন রক্তের বিনিময়ে পতাকা স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সুতরাং শুধু জামায়াত না, জামায়াতের সাথে সাথে বিএনপি এবং যারা যারা আজকে বিএনপিকে সমর্থন করছে তাদের পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। আমার খুব দুঃখ লাগে যে, অবসরপ্রাপ্ত ইব্রাহীম সাহেব উনি একটা দল করেছেন। একাই একটা দল। কিন্তু এরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের কি সামান্য লজ্জা লাগে না? যাদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছেন, তাদের গাড়িতে যারা পতাকা তুলে দিয়েছিল তাদের সাথে কিভাবে একই সাথে মিলে নির্বাচন বয়কটের ডাক দেন।

ব্যক্তিগতভাবে এই ভদ্রলোককে অপছন্দ করার কিছু নাই। কিন্তু এরা তো রাজনীতির মাঠে রাজনীতি করেন নাই। হঠাৎ করে ভাবছেন যে, একটা ইঞ্জিন রেডি করতে পারলেই সেখানে অনেকে এসে যাবে এবং একটা পদ পাওয়া যাবে। যেভাবে তিনি চলতেছে তাতে যাওয়ার তো জায়গা নাই। আমি বলব অনেকেরই তো বয়স হয়েছে, মৃত্যুর আগে অন্তত যাদের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে তাদের সাথে যেমন, বিএনপি নেতা হাফিজ সাহেব এরকম অনেকেই সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধে অবদান আছে। তাদের সেই অবদানকে সামান্য ক্ষমতার লোভে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাদের গাড়ীতে পতাকা তুলে দিলেন। আবার তাদেরকে সাথে নিয়ে আবার নির্বাচন করতে চান? লজ্জা করে না তাদের? তাদের বিবেক বলে কিছু নাই? তারা এত বিবেকহীন হয়ে গেল কিভাবে? তাই বলে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে ভুলে যাবো? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে যাবো? পঁচাত্তরকে ভুলে যাবো? এমনকি ওয়ান ইলেভেন ভুলে যাবো? সবই যদি ভুলে যায় তাহলে আমাদের চোখ আর কান থাকার তো কোন দরকার নাই। আমরা বোধির হয়ে থাকবো।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হয়। এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক সত্য। এটা বারবার বিজ্ঞজনরা বলেছেন এবং লিখেছেন। আপনারা মুনতাসির মামুনের মত লোক অথবা জাস্টিস মানিকের মতো এদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। এরা আরও ভালোভাবে আপনাদেরকে বলতে পারবে যে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে কত কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু একজন রাজাকার-আলবদর তিনি আমৃত্যু রাজাকার-আলবদর থাকতে পারেন। এই কারণের জন্য এই ১০ অক্টোবর কালো দিবসে সকলের প্রতি আমার আবেদন, সকল দেশ প্রেমিকের প্রতি বিশেষ আবেদন, আপনারা আবার রুখে দাঁড়ান যারা এই কালো দিবসের সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাদের গাড়িতে যারা পতাকা তুলে দিয়েছে তাদেরকে দেশে নির্বাচন করার কোন অধিকার দেওয়া যেতে পারে না। বরং বিএনপি যদি অন্য নাম দিয়ে সেখানে যারা মুক্তিযুদ্ধ আছে তারা যদি একটি দল গঠন করে সেই দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

আমি সবার কাছে আশা করবো আমরা জাতি হিসেবে যেন সবসময় ১০ অক্টোবরকে কালো দিবস হিসাবে পালন করি। যাতে আমরা ভুলে না যাই যে, একসময় এদেশে যাদের সাথে আমরা সংগ্রাম করেছিলাম তাদের হাতেও কিছু লোক তাদের গাড়ীতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। সুতরাং তাদেরকে সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণভাবে তাদেরকে পরিত্যাগ করা প্রয়োজন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭