ইনসাইড আর্টিকেল

মধ্যরাতের উপহার


প্রকাশ: 11/10/2022


Thumbnail

সারাদিনের কর্মব্যস্তাতা শেষে রাতের সময়টুকু মানুষ চায় একটা প্রশান্তির ঘুম। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকের দেয়াল জুড়ে খেয়াল করলাম অনেকেরই এই প্রশান্তির ঘুম অস্বস্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই মানুষ ফেসবুককেই ব্যবহার করছে ক্ষোভ উগ্রে দেয়ার জন্যে। আর এই অস্বস্তিতর কারণ হল চলমান লোডশেডিং। ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলি লোডশেডিংয়ের। কেউ কেউ আবার লোডশেডিংকে উপহাস করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন মধ্যরাতের উপহার হিসেবে। গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার উপর পাওয়ার গ্রীডের সমস্যার পর থেকে সেটি এখন চরম আকারে বেড়েছে।

বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে ১৯ জুলাই থেকে সারাদেশে চলছে শিডিউলভিত্তিক লোডশেডিং। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে লোডশেডিং হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে লোডশেডিং কেন মধ্যরাতে দেয়া হচ্ছে। সারাদিন দুই থেকে চারবারের বেশি লোডশেডিং দেখার পর দুই ডন্ড প্রশান্তির ঘুম মানুষ আশা করতেই পারে। মধ্যরাতে লোডশেডিং তার উপর ভ্যাপসা  গরম, মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছেছে। এর উপর  লোডশেডিং শিডিউলও না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে মধ্যরাতে লোডশেডিং সাধারণ মানুষকে হতাশ  ক্রুদ্ধও করে তুলছে।

রাজধানীতে এখনো দৈনিক দুই-তিন ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। আর জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও গড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। লোডশেডিংয়ের শিডিউল অনুযায়ি রাত ১১ টার পর লোডশেডিং হওয়ার কথা না থাকলেও এখন মধ্যরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে।  গরমের দিনে মরার উপর খারার ঘা হিসেবে সবাই লোডশেডিংকে দেখছে । রাত ১১ টার পর কেন লোডশেডিং হচ্ছে সেই প্রশ্নও  খুঁজে  ফিরছে ভোগান্তিতে থাকা সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়নের মতে বাংলাদেশে দিনের বেলা ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করা হয়েছে ১৩ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল এক হাজার ২৫৭ মেগাওয়াট। আর মধ্য রাতে লোডশেডিং হওয়ার পেছনে তারা কারন দেখিয়েছে রাতের বেলা চাহিদার বিপরিতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেনা বরং বাড়ে, ফলে এখন মাঝরাতেও লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ জনগন মনে করছে সারাদিনে যদি চার থেকে পাঁচ বারেরো বেশি লোডশেডিং হয় তাহলে রাত ১১ টার পরে কেন বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়ছেনা বলে লোডশেডিং দেয়া হব। অনেকে আবার একে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার অভাব বলে মনে করছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নওশাদ শুভ, তিনি জানান সারাদিন ধরতে গেলে বাসার বাইরেই থাকা হয় তার। সকালে ক্লাস এরপর পার্টটাইম চাকরি করে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে রাত ১১ টার মতো বেজে যায়। এরপর ঘুমাতে গেলে শুরু হয় লোডশেডিং। একে গরম তার উপর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হতে হয়। আর মধ্যরাতেও সে দুবার লোডশেডিংয়ের দেখতে হয় বলে জানান তিনি।এক ঘন্টার বেশি চলমান লোডশেডিংয়ে একে তো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তার উপর বাসায় এসে করা যায়না অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ। রাতের বেলা যেন লোডশেডিং না হয় সে ব্যাপারেও কর্তিপক্ষের কাছে অনুরোধ জ্ঞাপন করেন তিনি।

শিডিউল শতভাগ মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে অনেক গ্রাহক। শহরের অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও গ্রামের দিকে এই শিডিউল না মানার প্রবণতা আরও গুরুত্বর। গ্রামের দিকে লোডশেডিং শুধু চার পাঁচবারেই সিমাবদ্ধ নেই, এর থেকেও বেশি লোডশেদিং দেখছে গ্রামের মানুষ। রাত এবং দিন দুই সময়েই নিয়ম করে লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি। শুরুতে সেপ্টেম্বরের শেষে এবং এরপর জানানো হয় অক্টোবর থেকে লোডশেডিং সহনীয় হয়ে আসবে কিন্তু হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা। দিনের বেলা লোডশেডিং মানা গেলেও মধ্যরাতে এমন লোডশেডিং মানা যায়না।দিন শেষে রাতের স্বস্তিটুকু প্রত্যেকতি মানুষকে পরের দিনের কর্মব্যস্ততার নতুন উদ্যম দেয় কিন্তু লোডশেডিংয়ের জন্য তা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে জনমনে দেখা দিচ্ছে অসন্তোষ। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট  কর্তিপক্ষের এখনি নজর দেয়া উচিৎ বলে মনে করছে অনেকে। আর এই বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মধ্যরাতের উপহার চায়না সাধারণ জনগন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭