ঘরে ঘরে ডেঙ্গু , ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেশজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীতে শনাক্ত হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুরোগী। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। অন্যান্য বছর অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে থাকে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর  দেশজুড়ে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর বিপরীত চিত্র। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী একদিনের দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে ৪ জন মারা গেছেন এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী। আর মোট ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৪৯৩ জন, যা হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীর প্রায় ৯ গুণ।

ডেঙ্গুর এ ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার জানান, সাধারণত সেপ্টেম্বরের পর ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কমে আসে। এ জন্য আমরা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় অক্টোবরেও ডেঙ্গুর দাপট বাড়ছে। এটা পুরো মাসই বাড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে হবে।

তিনি জানান, আমরা রাজধানীর হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন হটস্পট চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে ১ নম্বরে আছে মিরপুর, ২ নম্বরে উত্তরা, ৩ নম্বরে মুগদা ও ৪ নম্বরে আছে ধানমন্ডি। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর এলাকায়ও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এসব স্থান থেকে সর্বাধিক রোগী হাসপাতালে আসছেন। হটস্পটগুলোতে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে উড়ন্ত এডিস মশা মেরে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন ও ডেঙ্গুবিরোধী কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। বছরের প্রথম দিনে ৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জানুয়ারিতে ভর্তি হন মোট ১২৬ জন। তবে ১২৫ জন সুস্থ হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ছিলেন ১ জন। এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই তিন মাসে হাসপাতালে মোট ভর্তি হন ৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। মে মাসে ১৭২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জুনে ৭৫০ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ৬৩৬ জন, আগস্টে ৩ হাজার ৬১০ জন, সেপ্টেম্বরে ১০ হাজার ৩৭০ জন ও অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনেই ৫ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি বছর প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ২১ জুন। গতকাল পর্যন্ত মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৭৪ জন।

চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা আগের মাসে ছিল ৩৪৫ জন। এর মধ্যে গত ৮ অক্টোবর একদিনেই সর্বোচ্চ ৭১২ জন হাসপাতালে ভর্তির খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের ৭৫ শতাংশই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। চলতি বছরে মোট ২১ হাজার ৮৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৪৭ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৫২৩ জন। মোট সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৯ হাজার ৩০৩ জন।