ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর নতুন কৌশল কি?


প্রকাশ: 12/10/2022


Thumbnail

সম্প্রতি ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগকারী ‘কের্চ সেতুতে’ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এরপরই ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বড় শহরে গত দু’দিনে প্রায় একশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। পানি সরবরাহ ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার দখল করা অনেক এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। বাধ্য হয়ে তিন লাখ সৈন্যের রিজার্ভ তলব করতে হয়েছে রাশিয়াকে। অন্যদিকে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেন এখন যুদ্ধে কী কৌশল নিচ্ছে রাশিয়া?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনজুড়ে এভাবে ব্যাপক হামলার ঘটনা গত কয়েক মাসে দেখা যায়নি। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যখন রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন এরকম কিয়েভের আশেপাশের এলাকায় হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া।

কিন্তু পরবর্তীতে কিয়েভ থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হওয়ার পর মূলত পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো দখলে রাখতেই রাশিয়া মনোনিবেশ করেছিল।

কিন্তু ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাশিয়া আবার হামলা শুরু করেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তিনিই এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার তৈরি একটি সেতুর বিস্ফোরণের জন্য তিনি ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও রাশিয়া ইউক্রেনে পুরাদস্তুর সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে না। তিনি মনে করেন, আসলে তারা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে একটা বার্তা দিতে চাইছে।

“রাশিয়া প্রথমে কিয়েভে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনে সরকার পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক এলাকাগুলো দখল করে নেওয়া এবং দক্ষিণের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। তারা কিয়েভ বা উত্তরের এলাকায় সাফল্য পায়নি কিন্তু পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ এলাকায় কিছুটা সফলতা পেয়েছিল,” যোগ করেন তিনি।

কিন্তু গত ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ন্যাটোর ব্যাপক সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে রুশ বাহিনীকে অনেকটা হটিয়ে দিতে পেরেছে।

রাশিয়ার দখলে ছিল, এমন প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা ইউক্রেনের বাহিনী আবার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল তারা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে গাড়ি বোমা হামলা করে রুশ ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে।

অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, “আমার ধারণা, সেজন্য সৈন্য না পাঠিয়ে, ভূমি যুদ্ধ না করে, ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনীয়দের বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে যুদ্ধ এখানেই আপাতত তোমরা ঠেকিয়ে রাখো। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পাল্টা আক্রমণ করার সম্ভাবনা ও সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে। ইউক্রেন ও ন্যাটোকে সেটা রাশিয়া পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে চাইছে।”

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। ইউক্রেনীয়রা সাফল্য পেতে থাকলে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণে যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।

ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক মুরাত আসলান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এসব হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জনগণের কাছেও প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করতে সক্ষম। ক্রিমিয়ার ব্রিজে হামলায় এটা প্রমাণ হয়েছে যে, রাশিয়ার সৈন্যরা দেশকে বাইরের হামলা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছে না। ফলে তিনি নিজের দেশের জনগণকে জানাতে চান যে, রাশিয়ার ওপর হামলা হলে তারা শক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই সঙ্গে রাশিয়া ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই বার্তাও দিতে চায়, তারা কোনওভাবেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা মেনে নেবে না।”



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭