ইনসাইড পলিটিক্স

গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন: হতবাক আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 12/10/2022


Thumbnail

গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন কমিশন গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটি উপ-নির্বাচন স্থগিত করল। এই উপ-নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় সরকার পরিবর্তনে কোনো কিছুতেই ভূমিকা রাখতো না। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ঢাকা থেকে উড়ে গিয়েছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের জাহাঙ্গীর কবির নানক। এমনকি  আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালও নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মৃত্যুজনিত কারণে এই আসন শূন্য হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তারপর সংসদীয় বোর্ডের সভায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদ হাসান রিপনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ছিল সেখানে বিভক্ত। তাছাড়া ঐতিহাসিকভাবে গাইবান্ধার-৫ আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির। তাছাড়া এখানে জাতীয় পার্টিও শক্তিশালী ছিল। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এখানে ভোট বর্জন করল। গোপনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করেছে। এরকম একটি বাস্তবতা গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় থেকেই লড়াই করেছে। কিন্তু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ যখন শুরু হয় তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে, আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে মরিয়া হয়েছে।

অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে যেভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হয় বিনা ভোটে অথবা ভোট কারচুপি করে বিজয়ী হওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেছেন। এখানেও সেরকম একটা চেষ্টা তারা করছিলেন। অনেকেই মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে কোনো রকম সমর্থন এবং প্রশয় ছিল না। বরং আওয়ামী লীগ সভাপতি বারবার বলেছিলেন নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ যেন এখন হাঁটতে ভুলে গেছে। আওয়ামী লীগের যারাই মনোনয়ন পান, তারাই যেকোনো মূল্যে জেতাটাকে একমাত্র আরাধ্য মনে করেন। গাইবান্ধাতেও এই অতি উৎসাহের করুণ পরিণতি ঘটল। নতুন নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই বলে আসছে তারা অতীতের মতো নয়, তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করে বলেছে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কুমিল্লার মেয়র নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন হোঁচট খেয়েছিল। কিন্তু গাইবান্ধায় আর হোঁচট খেলো না। বরং গাইবান্ধায় নির্বাচন স্থগিত করে তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় নেতারা এতে হতবাক। এই ঘটনার পরপর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, এরকম ভাবে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলো কেন তা তারা বুঝতে পারছে না। তারা এটাও বলেছেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু একটি বার্তা দিল। আওয়ামী লীগের জন্য এ নির্বাচন একটি বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়াল। এতদিন ২০১৮ সালের পর থেকে যেভাবে ভোটারহীন ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা গোল দিয়ে আসছিল সেই যুগের অবসান হলো। এটা রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক। তাই আওয়ামী লীগ এখন হতবাক হলেও ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় শিক্ষা। 

নির্বাচন করতে গেলে জনগণের কাছে যেয়ে নির্বাচন করতে হবে। জনগণের ভোট পেয়ে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনের যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে চায় তাহলে তার পরিণতি যে গাইবান্ধার মতো হতে পারে বার্তাটা পেল। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলছে, অল্পের ওপর দিয়ে আওয়ামী লীগ শিক্ষাটা পেল। যে নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ব নেই সেই  নির্বাচনে কেন জেতার জন্য মরিয়া হতে হবে আওয়ামী লীগকে? সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠবে। যদি আওয়ামী লীগ বলছে যে, কোনো কারচুপি হয়নি, শান্তিপূর্ণ ভোট দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এবার সিসিটিভি বসিয়ে সবকিছু দেখেছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এই সিদ্ধান্তের আলোকেই ভোট বন্ধ হয়েছে। ভোট বন্ধ আওয়ামী লীগের জন্য  ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে তা ভবিষ্যতই বলবে। তবে ভোট কারচুপির দায় থেকে আওয়ামী লীগ যে আপাতত মুক্ত হলো- এটাই বা কম প্রাপ্তি কি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭