ইনসাইড হেলথ

চোখকে ভালোবাসুন


প্রকাশ: 13/10/2022


Thumbnail

চোখ, আমাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কথায় আছে চোখ হলো কানের চেয়ে অধিকতর নির্ভুল প্রত্যক্ষদর্শী। এই সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর প্রকৃতি আমরা আমাদের চোখের মাধ্যমেই দেখি। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চিত্রও আমাদের দেখায় এই দুটি চোখই। কিন্তু আমরা এই চোখের যত্নেই থাকি সব থেকে বেশি উদাসীন। বাংলাদেশে অন্ধ মানুষের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই অন্ধত্বের পেছনে কারণ হচ্ছে  সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাব। 

আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার পালিত হয় দৃষ্টি দিবস। সে হিসেবে আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। এই দিবসটি ঘিরে এবারের থিম স্লোগান রাখা হয়েছে "চোখকে ভালোবাসুন"।  এই দিবসটির প্রাক্কালেই একটি দুঃখজনক বার্তা হলো আমরা আমাদের এই দৃষ্টি দানকারী চোখ দুটির প্রতি অনেক বেশি অসচেতন, এবং এই চোখ দুটির প্রতিই যেন অবজ্ঞা করি বেশি। আর এর ফলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি । 

বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের অন্ধত্ব বরণের জন্য ৭ টি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হল ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, এটা মূলত বয়স বাড়ার সাথে সাথে হয়, তাই একে বয়সজনিত কারণ হিসেবেই দেখা হয়। দ্বিতীয়টি হলো গ্লুকোমা, এটি একটি জটিল রোগ। এর ফলে খুব ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। গ্লুকোমারের কারণে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্তও হয় এবং এক সময় রোগী অন্ধত্ব বরণ করে। তৃতীয়টি হলো চোখের ছানি। ছানি পরা এমন একটি  সমস্যা বা অসুখ যেখানে চোখের লেন্স অস্বচ্ছ বা ঘোলা  হয়ে যায়, ফলে দেখতে অসুবিধা হয়। এছাড়া অন্যান্য কারণগুলো হল  আঘাতজনিত কারণ, ট্রাকোমা ও ভিটামিনের অভাব, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিজনিত কারণগুলো। 

বাংলাদেশে এক সময় ভিটামিন 'এ' এর অভাবে রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুলের ব্যবহার, শিশুদের 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এসব কারণে এই হার এখন সহনীয় পর্যায়ে। মূলত ভিটামিন 'এ 'এর অভাবে জেরোপথ্যালমিয়া নামের যে রোগটি হয়, এটিই আসলে  রাতকানা রোগ। এই রোগের মোট ৮ থেকে ৯ টি পর্যায় রয়েছে। এর মধ্যে শেষ পর্যায় চোখের কর্নিয়া একদম নষ্ট হয়ে যায়। এবং রোগী সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিশক্তি হারায়। তবে এই রোগের প্রথম পর্যায়টি হচ্ছে রাতকানা রোগ। বাংলাদেশে শিশুরা বেশি রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়।  এছাড়া বাংলাদেশের অন্ধত্ব বরণের  আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল ছানি পরা। বাংলাদেশে পূর্ণবয়স্কদের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের অন্ধত্বের কারণ এই ছানিপরা। আর এর ৭১ শতাংশ অন্ধত্বের কারণ হচ্ছে চোখের ছানির চিকিৎসা না করানো। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সারাবিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের শিকার। আর বাংলাদেশের মানুষ এই নিবারণযোগ্য অন্ধত্বেরই শিকার বেশি, যা হয়তো সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করালেই ঠিক হয়ে যেত। আর এই সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতা অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে অনেক মানুষকে যার অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষ মোটেই চোখের সমস্যা নিয়ে ভাবতে চায়না।

বাংলাদেশে চোখের সমস্যাকে কোনভাবেই গুরুত্বের সাথে নেয় না মানুষ। চোখের সঠিক পরিচর্যা বিষয়ক সাধারণ জ্ঞানের অভাব এবং অসচেতনতা অনেক মানুষের অন্ধত্বের কারণ। চোখের যত্ন ও সেবার ওপর গুরুত্বারোপ করা অপরিহার্য এখনই। একটু সচেতনতা, প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসা রোধ করতে পারে অন্ধত্বকে। আবার বাংলাদেশে এমন কিছু রোগী আছেন তারা বুঝতেই পারেননা তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ফলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার দরুন অন্ধত্বের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন । সময়মতো চিকিৎসা ও অপারেশন করা হলে ৮০ ভাগ অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব এবং সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে চক্ষু সমস্যা চিহ্নিত করা দরকার। এছাড়া বাংলাদেশে অন্ধত্ব দূরীকরণ ও প্রতিরোধে সরকারী ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়ারও প্রয়োজন রয়েছে।

অন্ধত্ব কোনভাবেই কারো কাম্য নয়, চোখ ছাড়া মানুষ পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমাদের নেয়া উচিৎ চোখের যত্ন। চোখের সমস্যা এড়াতে ছোটবেলা থেকেই নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ  খাবার গ্রহণ চোখকে ভালো রাখবে ছোটবেলা থেকেই। এছাড়া নিতে হবে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। কম্পিউটারে কাজের ক্ষেত্রে  ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের বিরতি নিতে হবে এবং বিরতি চলাকালীন কমপক্ষে ২০ ফুট দূরে থেকে স্ক্রিনের দিকে তাকাতে হবে। আবার তীব্র রোদ কিন্তু আমাদের চোখের সমস্যা করে। রোদের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি চোখের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক, তাই রোদে গেলে ব্যবহার করতে হবে সানগ্লাস। হ্যাঁ, যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ চোখের সমস্যার মধ্য দিয়ে যান কিন্তু বুঝতে পারেন না, তাদের জন্য বলি, প্রাথমিকভাবে চোখে সমস্যা দেখা গেলে  যেটি বোধ হয়, তা হলো দৃষ্টি কমে যাবে, অর্থাৎ আপনি চোখে ঝাপসা দেখবেন। এছাড়া  চোখ থেকে পানি পড়া, ময়লা জমা, চোখে ব্যথা বা লাল হওয়া এসব উপসর্গ দেখা দিলেও চিকিৎসকের দ্বারস্থ হবেন অবশ্যই।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়,  বাংলাদেশে চোখের চিকিৎসক সংকটের কারণেও কিন্তু চোখের রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ভালো চিকিৎসকের অভাবে অনেক চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয় না, যেটা  আমাদের একটা বড় ব্যর্থতা। এছাড়া দেশে কর্ণিয়া দানে মানুষের অনাগ্রহও আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পিছিয়ে রাখছে। আর গণসচেতনতার অভাব তো আছেই। আমাদের উচিৎ হবে দেশের সর্বত্র গণসচেতনতা তৈরি করা, এতে দেশে অন্ধত্ব কমানো যাবে। তবে হ্যাঁ বাংলাদেশে এখন ছানি পরা থেকে অন্ধত্ব রোগীর সংখ্যা কমছেও আস্তে আস্তে। যেমন, ১৯৯৯ সালের একটি জরিপে দেখা যায় দেশে ছানিজনিত অন্ধ রোগী ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার এবং ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর ২০২০ সালের জরিপে এ সংখ্যা কমে হয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার। তাহলে বলাই যায়  ছানি নিয়ে জনসচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটিই এখন আমাদের আশার আলো। আর বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের প্রাক্কালে আমরা আশা করি একদিন এই হার শূন্যের  কোঠায় নেমে যাবে।

চক্ষু চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে 

চোখের চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উপলক্ষে বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এই মন্তব্য করেন। তারা বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চক্ষু সেবায় বাংলাদেশ অসাধারণ অর্জন করেছে। তারা প্রত্যাশা করেন যে, বাংলাদেশে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিবারণ করা সম্ভব এবং সেই লক্ষ্যে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাচ্ছে। 

আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি এবং বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর লাইফ ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা অংশগ্রহণ করেন। সৈয়দ বোরহান কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনাটা দেখুন বাংলা ইনসাইডারের ইউটিউব চ্যানেলে।





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭