ইনসাইড টক

‘এই বিজয়ে কয়জন মানবধিকারকর্মী বিবৃতি দিয়েছে-উল্লাস করেছে’


প্রকাশ: 13/10/2022


Thumbnail

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, মানবাধিকার বর্তমান বিশ্বে অনেক রাষ্ট্র এবং অনেক সংস্থা মানবাধিকারকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার একটি প্রবণতা আমরা তাদের মধ্যে লক্ষ করি। বাংলাদেশের যে মানবাধিকারের যে পরিস্থিতি সেটি যদি একবাক্যে বলি খুব ভালো-আদর্শিক, এটি যেমন সত্যের অপলাপ হবে। আবার যদি বলি বাংলাদেশের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে চরম লঙ্ঘনের একটি চিত্র পাওয়া যায় সেটিও সত্যের অপলাপ হবে। সত্য হচ্ছে এখানে যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অর্জন রয়েছে বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সারাবিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে কথা বলার মত অবস্থান বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। কারণ, একমাত্র রাষ্ট্র যেটি নিজে ধনী রাষ্ট্র না হয়েও ১০ লক্ষের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। এর চাইতে বড় প্রমাণ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আর কি হতে পারে। অন্তত একটি কারণ হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের কাছে মাথানত করতে হবে, বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাতে হবে, বাংলাদেশের প্রশংসা করতে হবে এবং আমার বিশ্বাস যে, এই কারণেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য পদ অর্জন করেছে।

সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়া, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মীদের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের যে অনেক দূর যেতে হবে এটা তো বাস্তবতা। আমরা চাই এই দেশে যেন কোনো বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড না ঘটে, আমরা চাই এই দেশে যেন নারী নির্যাতন কমে যায়, আমরা চাই এই দেশে যেন শিশু শ্রমের অবসান হয়। আমাদের এই চাওয়াগুলোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক পথ এগিয়েছি কিন্তু আমাদের যেতে হবে আরও অনেকদূর। সেই জায়গাতেই আমরা রাষ্ট্রকে সবসময় স্মরণ করিয়ে দেই যে, আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। আজকে আমরা সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য হয়েছি, তারমানে আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগবে যে সবকিছু হয়ে গেল তা নয়। আমার যেমন স্বীকৃতি আছে, এই স্বীকৃতি আমাদের ওপরে একটি বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। সেটি হচ্ছে মানবাধিকারের প্রতি আমাদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে, সচেষ্ট হতে হবে এবং কোনোক্রমেই মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আমরা সহ্য করবো না। যেখানেই লঙ্ঘন হবে সেখানে প্রতিকারের ব্যবস্থা করার একটা দায়বদ্ধতা, বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বলবো যে ওভাবে তুলনা করাটা আসলে খুব সহজেই স্বরলিপিকরণ করা হয়ে যায়। এভাবে জিনিসটাকে ব্যাখ্যা করা ঠিক না। আসলে কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। কেননা আমার যেটা বিশ্বাস সেটি হচ্ছে যে বিশেষ করে এই রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে আমরা যে ভূমিকা পালন করেছি, সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা একাও চলতে পারি মানবিকতার সাথে, মানবাধিকারের সাথে এবং শুধু কথায় নয় কাজেই প্রমাণ তো আমরা দিয়েছি। এটা বিশ্বকে মেনে নিতে হয়েছে এবং এটা মেনে নেবার কারণেই আমাদের সমর্থন না করে কোন উপায় ছিলো না। অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের তুলনায় আমরা এ বোঝাটা আমরা নিজেদের কাঁধে আমরা নিয়েছি।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, এটি একদিকে যেমন সত্যি, ঠিক অন্যদিকে অনেকেই আমাদের এই অর্জনগুলোকে, আমাদের এই মানবাধিকারের প্রতি যে আনুগত্য বা শ্রদ্ধা এটিকে তারা না দেখে দুই একটা কিছু ঘটলেই সেটি নিয়ে তারা বেশি সোচ্চার থাকে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিভাবে বিনষ্ট করা যায়, বাংলাদেশকে হেয় করা যায় এটি যেন অনেকের ভেতরে কাজ করে। আজকে আমরা সদস্যপদ লাভ করেছি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে। কয়জন মানবধিকারকর্মী বিবৃতি দিয়েছে, কয়জন উল্লাস করেছে, কয়জন বলেছে যে, সরকার এবং রাষ্ট্র তোমাদেরকে ধন্যবাদ। আমরা গর্বিত যে, আমরা এতটা সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু আজকে যদি এখানে একটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে আপনি দেখবেন যে কত বুদ্ধিজীবী, কত মানবধিকারকর্মী বিবৃতি দিবে যে আমরা এর বিচার চাই, অবসান চাই। মানবাধিকার যখন লঙ্ঘন হয় আমরা সকলেই চাই যেন লঙ্ঘন না হয়। আমরা সুষ্ঠ তদন্ত চাই, আমরা বিচার চাই। কিন্তু যখন রাষ্ট্রের অর্জন হয় এবং সেটি আন্তর্জাতিকভাবে তখন তারা কিছু বলছে না কেন? এটা তো আর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নয় যে টাকা দিয়ে, ঘুষ দিয়ে আমরা ভোট পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি বিরাট গর্বের, দৃষ্টান্তের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কোথায় আমি তো সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে কাউকে দেখলাম না।তার মানে কি? আমরা কি তাহলে বলবো, এখানে যারা রয়েছেন তারা অপেক্ষা করেন কখন বাংলাদেশ বিপদে পড়বেন সেটা দেখবার জন্যে? কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিৎ ওই যুগটা কিন্তু এখন বাসি হয়ে গেছে। মানুষকে ছোট করে আনন্দ পাবার দিন শেষ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশই থাকবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রাণ সেটা হচ্ছে এই সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, আমাদের মানবিক মর্যাদা। এগুলোর সঙ্গে কোন কম্প্রোমাইজ কেউ করেনি এবং করবে না। অন্ততপক্ষে এই বর্তমান সময়ে তো কেউ করবে না, এ বিশ্বাস খুবই দৃঢ়ভাবে আমাদের মনে আছে। আমরা বিশ্বাস করি এটি এবং এটিই আমাদের মনে সাহস যোগায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭