ইনসাইড আর্টিকেল

একাত্তরের জননী


প্রকাশ: 14/10/2022


Thumbnail

"আমার ভিতর অনেক জ্বালা, অনেক দুঃখ। আমি মুখে বলতে না পারি, কালি দিয়ে লিখে যাব। আমি নিজেই একাত্তরের জননী" উক্তিটি রমা চৌধুরীর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে এদেশের হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন, স্বজন, সম্ভ্রম, আশা। রমা চৌধুরী তাদেরই একজন। দেশের শত শত বীরজ্ঞনার প্রতিনিধিত্বকারী । নিজের লেখা একাত্তরের জননী বইটির ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায় যিনি  লিখেছেন নিজের ধর্ষণ হওয়ার কথা, লিখেছেন নিজ সন্তান সাগর এবং টগরের মৃত্যুর কথা। আজ এই বীরাঙ্গনা মহীয়সী নারীর জন্মবার্ষিকি ।

রমা চৌধুরী ১৯৪১ সালের ১৪ই অক্টোবরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের ইচ্ছায় তিনি পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর ১৯৫২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বোয়ালখালীর মুক্তকেশী গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৫৬ সালে কানুনগোপাড়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। তিনিই দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর।

মাত্র ২০ বছর বয়সে রমা চৌধুরী শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর বিয়ে করে সংসারীও হন। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়  এক কঠিন জীবনের সামনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী তাকে ফেলে দেশান্তরিত হলেন,বৃদ্ধ মা এবং দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন জীবন যুদ্ধের সন্ধিক্ষণে। ১৯৭১ সালের  ১৩ মে সকালে তিনি হারালেন তার সম্ভ্রম, হারালেন ভিটেমাটি। এই দিন ভোরে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা হামলা করে রমা চৌধুরীর বাড়িতে, গান পাউডার দিয়ে শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ার সাথে সাথে কেড়ে নিল রমা চৌধুরীর জীবন থেকে সব স্বপ্ন । তাইতো তিনি তার বইয়ে লিখেছেন "পাকিস্তানি বাহিনী আমাকে প্রাণে না মারলেও আমার আত্মার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে, যার ফলে নেমে এসেছে জীবনে শোচনীয় পরিণতি"

মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে রমা চৌধুরী হারান তার দুই সন্তান সাগর এবং টুগরকে, সন্তানকে তিনি মাটি চাপা দিয়েছিলেন নিজ হাতে। দুই সন্তানের দেহ মাটিতে জড়িয়ে আছে বলে তিনি পায়ে জুতা পরা ছেড়ে দেন। এরপর আত্মীয়দের কথায় অনিয়মিত ভাবে পায়ে জুতা পরলেও আরেক সন্তান টুকুর মৃত্যুতে পুরোপুরি পায়ে জুতা পরা ছেড়ে দেন তিনি।

রমা চৌধুরী একজন লেখকও ছিলেন । যুদ্ধের পর জীবন নির্বাহের জন্য লেখাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এ যাবতকালে ১৮ টি মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। এবং এই বইগুলো তিনি ফেরিও করতেন নিজেই। রমা চৌধুরী একজন ভীষণ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী । চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ের লুসাই ভবনের  ৪০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ভালোবাসা ছিল বিড়ালের প্রতিও, চারটি বিড়াল এবং ছায়াসঙ্গী আলাউদ্দিন খোকনকে নিয়ে থাকতেন এই বাড়িটিতে। এই বাড়িটিতে থেকেই তিনি ফেরি করতেন তার নিজের লেখা বই। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করেছেন ‘দীপংকর স্মৃতি অনাথালয়’ নামের একটি অনাথ আশ্রমও। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পারি জমান আমাদের এই সাহসী, সংগ্রামী, মহীয়সী জননী।

রমা চৌধুরী একজন সংগ্রামী নারী, যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তিনি আমাদের জননী রমা চৌধুরী। তার জন্মদিনে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা, স্বরণ এবং ভালোবাসা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭