ইনসাইড থট

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ: সতর্ক হতে হবে


প্রকাশ: 14/10/2022


Thumbnail

গাইবান্ধা উপ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন কি বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা পর্যালোচনা। নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তথাকথিত (প্রশ্নবিদ্ধ) নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন বললে স্পষ্টত: ভুল হবে। নির্বাচন কমিশন এখানে স্পষ্টত নিজের ভালোই দেখেছেন।

আমি নিরপেক্ষ নই। তাই বলে কেউই নিরপেক্ষ নন সেটাও আমি বলতে চাই না। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছি, ছিলাম এবং থাকবো চিরদিন। সেই দিক থেকে আমি নিরপেক্ষ নই। আমি স্পষ্টভাবে জানি বাংলার জনগণ রাজাকারের দোসর খালেদা পুত্রদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যে কর্মকাণ্ড খুনি, খুনিদের দোসর, দুর্নীতির বরপুত্রদের ক্ষমতায়ন করে কিংবা তাদের শক্তি যোগায় সেই কর্মকাণ্ডকে আমি যৌক্তিক বিচারে মানতেও চাই না। এভাবে আমার পক্ষ নেয়াকে পক্ষপাতিত্ব বলা যেতে পারে।

গাইবান্ধা নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন নিজের পক্ষে কাজ করেছে, জাতির পক্ষে নয়। এমনকি বিরোধী দলের পক্ষেও নয়। তারা রাজনীতিবিদদেরকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে সুশীলদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। কারণ, তারা তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান এবং তাদের ফাঁদে অতীতে রাজনীতিবিদরা পা দিয়েছেন, এখনও পা দিচ্ছেন।

১৯৯১ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেয়েও নির্বাচনে হেরেছে। আবার ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিএনপি হেরেছে।  সুতরাং, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে যদি কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে থাকেন, তবে তারা এক গভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। যারা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরকে ইনডেমনিটি প্রদান করে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে তাদেরকে আমি অনন্ত কাল  ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আমি চাইনা খাম্বা নেতার হাম্বা হাম্বা শুনতে কিংবা রাজাকারদের তাফালিং দেখতে। আমি চাই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান। আমি চাই বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়বে চিরদিন।  বাংলা হবে আমাদের আগামী প্রজন্মর গর্বের ভাষা।

শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমান যে ভুল করেছিলেন সেই ভুল যেন আজকের নির্বাচন কমিশন না করেন। কারণ আপনি ভুলে যাননি বাবরদের নিপীড়ন অত্যাচার কিংবা ১৫ আগস্ট অথবা ২৫ ফেব্রুয়ারির বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে। আপনাদের মনে আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আহতদের আর্তনাদ আর নিহতদের বাঁচার আকুতি।

আমি স্বীকার করি আমার যেমন চিন্তার সীমাবদ্ধতা আছে তেমনি ভুল ত্রুটির অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। তাদের সকলেই সুনাগরিকের পরিচয় দিয়েছেন সেই দাবিও আমি করতে চাই না। এ কথায় সত্যি সুশাসন, সুবিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের কেউ কেউ ব্যর্থ হয়েছেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। আমি তাদের পক্ষে নই। আমি বঙ্গবন্ধু যে মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন সেই মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে যারা কাজ করেন আমি তাদের পক্ষে।

গাইবান্ধা নির্বাচন স্থগিত করে আমাদের যদি তিনি সতর্ক করতে চেয়ে থাকেন, তবে আমি মনে করি তিনি মস্তবড় ভুল করেছেন। আর যদি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা অর্জনের চিন্তা করে থাকেন তবে সেটিও ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের জনগণ যাদের বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে, বার বার হত্যা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তাদের আস্থা কি নৈতিকভাবে কাম্য হতে পারে? তাদের আদর্শ কি জাতির জীবনে প্রতিফলিত হতে পারে? সোজা উত্তর: পারে না!

যে নিরপেক্ষতা জাতিকে পিছিয়ে দেয়, যে নিরপেক্ষতা জাতির সর্বনাশের কারণ হয়, সেই নিরপেক্ষতা কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন কালে যেখানে অনিয়ম হচ্ছিলো সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা যেত। কিন্তু স্থগিত করে জাতিকে ভুল সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয়েছে, এতে করে আওয়ামী লীগ নয় বরং জাতির মস্তবড় ক্ষতি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আছে চলমান নানা ষড়যন্ত্র। বাঙালি যাতে মুক্তির স্বাদ না পেতে পারে সেজন্য ওঁৎ পেতে বসে আছে দেশি -বিদেশী হায়েনারা। গাইবান্ধার নির্বাচন স্থগিত করবার সিদ্ধান্তে  আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে ওই হায়েনাদের শিবিরে। তবে আমরাও  সতর্ক হয়েছি। আপনি নিজেকে সেরা প্রমাণে, নিজের স্বার্থে জাতিকে বিপদে ফেলতে পারেন সেই ধারনাটা আগে ভাগেই আমাদের জানিয়ে দিয়ে ভালো করেছেন। আপনার প্রতি আস্থা কেউই এখন খুঁজে পাবে না যারা আপনার সিদ্ধান্তে আনন্দ উৎসব করেছে এমন কি তারাও। তারাও আপনাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছে। সুতরাং, ভুলের মাশুল আপনাদেরকে দিতে হবে। কিভাবে সেই ভুলের মাশুল দেবেন সেটা না হয় জাতিই ঠিক করবে - সেটা যদি পদত্যাগের মধ্য দিয়ে হয় -আমার সেখানে কোনো আপত্তি থাকবেনা।

জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবার আগেই এভাবে ভুল করবেন আর সেটা সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে মনে করা যায় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখনও বিকাশমান। সেখানে এরকম একটি ঘটনা অশনি সংকেত হতে পারে!

ভালো মানুষগুলো যাতে নির্বাচিত হতে পারে সেজন্য যদি নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, জনগণ একসঙ্গে কাজ করে তবে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসার হতে পারে। গাইবান্ধার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মাহমুদুল হাসান রিপন ১/১১'র অশুভ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাকে হতাশ করে জাতির কি অর্জন হয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এই স্থগিত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। প্রার্থী হিসেবে রিপন একজন যোগ্য প্রার্থী ছিল এবং সে নির্বাচিত হলে জাতির কোনো ক্ষতি হতোনা। বরং, রিপনকে হয়তো ষড়যন্ত্র করে জিততে দেয়া হয়নি। সে যাতে শক্তভাবে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য এমনটি করা হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ হায়েনারা আবার মাঠে নেমেছে ! দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে যাতে বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য কোনোভাবে রাহু গ্রাস না করতে পারে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সম্মান হোক সকল সিদ্ধান্তের মাপকাঠি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭