এডিটর’স মাইন্ড

একটি টেলিফোন পাল্টে দিলো সিইসিকে


প্রকাশ: 14/10/2022


Thumbnail

১২ অক্টোবর, বুধবার। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারগণ। নির্বাচন কমিশন সবগুলো ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করেছিলো। সেই সিসিটিভি সংযুক্ত করেছিলো ঢাকায়। নির্বাচন কমিশনের সম্মেলনকক্ষে সকাল দশটার দিকে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা। সাথে তিনি গণমাধ্যমের কর্মীদেরকেও সেখানে আসার সুযোগ করে দেন। ওই সম্মেলন কক্ষে সিসিটিভি দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো বড় পর্দায়। আর সেখানেই তিনি নির্বাচনের অনিয়মগুলো খুঁটিনাটি দেখছিলেন, সেখান থেকে ফোন করছিলেন। একাধিক সূত্র বলছে, প্রথম আধাঘণ্টা সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বিষয়গুলো নজরদারি করছিলেন, কোথাও কোথাও নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু ১০টা ৩৫ মিনিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি টেলিফোন আসে। সেই টেলিফোনটি কে করেছিলো, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওই টেলিফোনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেন। প্রায় সাড়ে চার মিনিট টেলিফোনে অপরপ্রান্তে ব্যক্তির সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কথোপকথন হয় এবং পুরো কথোপকথন ছিল ইংরেজিতে। সেই সময়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, আই উইল বি নিউট্রাল, আই উইল নট স্পেয়ার এনিবডি (আমি নিরপেক্ষ, আমি কাউকেই ছাড় দেব না)। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুদ্রমূর্তি দেখা যায়। তিনি বিভিন্ন স্থানের যেখানে একাধিক ব্যক্তি দেখেছেন সেই ফুটেজগুলো দেখে সঙ্গে সঙ্গে ওই ভোটকেন্দ্র বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশে এখন ইভিএমে নির্বাচন হচ্ছে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। ইভিএমের সঙ্গে এখনো গ্রামের মানুষ অভ্যস্ত না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা কিভাবে মেশিনে চাপ দিতে হয়, কিভাবে ইভিএম চালাতে হয় ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে অবহিত নন। একাধিক প্রিজাইডিং অফিসার বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন যে, কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে যখন ভোটাররা মেশিন চালাতে পারছিল না বা কিভাবে ভোট দেবে সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন তখন তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়। কেউ কেউ গিয়ে তিনি কোথায় ভোট দিবেন জানতে চাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে সুইচ টিপতে বলা হয়। কিন্তু সিসিটিভির ফুটেজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেখেছেন বহিরাগত, যাদের গায়ে গেঞ্জি ছিল এবং গেঞ্জিতে নৌকার সীল ছিল। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী নৌকা প্রতীক সম্মিলিত গেঞ্জি পরে ভোট দিতে গেছেন। এটা নির্বাচন আইনে কোনো অপরাধ হতে পারে না। তাছাড়া অনেক জায়গায় ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে জড়তা ছিল, সেজন্য অন্যজন তাকে সহায়তা করেছে। এরকম ঘটনা বাংলাদেশের সব নির্বাচনেই কম বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে ইভিএম যেহেতু একটি প্রযুক্তিগত বিশয়, এর সঙ্গে গ্রামের মানুষ অভ্যস্ত নয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওই টেলিফোন পাওয়ার পর থেকেই এই ছোটখাটো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা শুরু করেন, বিভিন্ন ফুটেজ তিনি জুম-ইন করে দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করেন।

একটি ভোটকেন্দ্রে যদি এরকম দু'চারটা অনিয়ম হয় তাহলে সেখানে অন্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেত। সত্যি যদি কেউ অন্যের ভোট দিয়ে থাকে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যেত। সেই সম্পর্কে আরপিওতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেটি না করে কয়েকজনের দোষে পুরো ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া কেন হলো, সেটি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। তবে ওই সময় ওই টেলিফোনটি কার ছিল, কার সাথে সিইসি ইংরেজিতে কথোপকথন করছিলেন এবং তার নির্দেশনায় তিনি নির্বাচনের ভোট বন্ধ করলেন কিনা, এ নিয়ে নানারকম গুঞ্জন চলছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার গতকাল বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশন কোনো বাড়াবাড়ি করেনি এবং ভোটে অনিয়ম হয়েছে জন্যই তারা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ করেছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭