ইনসাইড আর্টিকেল

এই হায়নাদের থামাতে হবে


প্রকাশ: 15/10/2022


Thumbnail

ধর্ষণ, বাংলাদেশের নিত্যদিনের খবরের নিয়মিত শব্দ। প্রত্যকদিন সংবাদের পাতা কিংবা টিভির পর্দায় এক থেকে একাধিক ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়। এই তো ১১ই অক্টোবর রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায়,বাসায় ডেকে এক বিউটিশিয়ানকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিউটিশিয়ান মহিলাটি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা । একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও পাচ্ছেনা এই হায়নাদের থেকে রক্ষা। পাবেইবা কেন, যে সমাজ এখনো নারীকে দেখে বস্তু হিসেবে, নারীকে দাবিয়ে রাখার মানসিকতা থেকেই বের হতে পারেনা সে সমাজে নারীর প্রতি এমন হিংস্র হায়েনারা ওত পেতেই থাকবে। শিশু, কিশোরী,তরুণী, মাঝবয়সী, বৃদ্ধা কোন বয়সের নারীই রক্ষা পাচ্ছেনা এমন কুলাজ্ঞারের হাত থেকে। তাইতো পত্রিকা খুললেই, টিভি খুললেই প্রতিনিয়ত শুনতে হয় ধর্ষণের খবর।

বাংলাদেশে ধর্ষণের উপর অনেক সময় অনেক পরিসংখ্যান করা হয়েছে। ২০২১ সালের পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকাই, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ২৩৫ জন। এর মধ্যে ৬২৯ জন কন্যাশিশুসহ ১ হাজার ১৮ জন ধর্ষণের শিকার, ৬২ জন কন্যাশিশুসহ ১৭৯ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, ২২ জন কন্যাশিশুসহ ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৩১ জন, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। এ ছাড়া ১৪ জন কন্যাশিশুসহ ৩৩ জন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। ২৩ জন কন্যাশিশুসহ ৬৩ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী।  আর এই ২০২২ সালে এসে সেই সংখ্যা আরও  বেড়েছে।

দেশ নারীবান্ধব হচ্ছেনা তা উপরের পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়। আমাদের দেশে নারীরা কোন দিক দিয়েই নিরাপদবোধ করেন না। চলন্ত বাসে ধর্ষণ, কর্মক্ষেত্রে যৌণ হয়রানি, সামাজিক মাধ্যমে যৌন হয়রানি, নিজের বাসায় থেকেও অনেক সময় নিরাপদ নয় নারী। কিন্তু কেন, একান্তই কি ধর্ষণ ঘটে যৌন লালসার জন্যে?না, গবেষণা বলছে  অনেক পুরুষ ধর্ষণ করেন নারীর প্রতি ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করতে। ১৯৭৫ সালে নারীবাদী লেখক সুসান ব্রাউন মিলার বলেন, ধর্ষণের সঙ্গে যৌন লালসার সম্পর্ক নেই, যা আছে তা হলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং দাবিয়ে রাখা, ডমিনেট করা। এবং  যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব দ্য সাউথের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ও গবেষক শেরি হ্যাম্বির মতামতও ঠিক একই, তিনিও মনে করেন যৌন নির্যাতন, যৌন তৃপ্তি বা যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্য ধর্ষণ ঘটে না। বরং মানুষকে দমন করা এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের ভাব থেকে ঘটে থাকে।

বাংলাদেশ এখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।  এখনো এদেশে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়নি এক চুলও। এবং খুব দুঃখ করেই বলতে হয়, এদেশের শিক্ষিত পুরুষরাও নারীর ক্ষমতায়নকে কটু চোখে দেখে। তাইতো এখনকার শিক্ষিত তরুণ সমাজও নারীর পোশাকের বিরুদ্ধে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়াতে পারে। যতদিন নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর প্রতি পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শনের রীতি পরিবর্তন হবেনা ততদিন ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট কাজ থামানো যাবেনা। ধর্ষণ শুধুমাত্র যৌন লালসা থেকেই হয়না, ধর্ষণ পুরুষত্ব দেখানোর একটি মানসিক ব্যাধিও। এছাড়া বিচারব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব ধর্ষণ বাড়াচ্ছে। এবং অনেক সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে রাজনৈতিক সংস্পর্শে এসে অনেক অপরাধী ধর্ষণ করেও বিচার ব্যবস্থার বাইরে থাকে, যা সমাজে ভুল তথ্য সরবরাহ করে। অনেক মানবাধিকার কর্মী মনে করেন এই অপরাধীদের যদি নিশ্চিত আইনের আওতায় আনা যায় তাহলে ধর্ষণ কমে যাবে। আইনের আওতায় আসবেনা কিংবা দেশে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে ভেবেও অনেকে এ ধরণের অপরাধে জড়ায়। অর্থাৎ নারীর প্রতি এই ধরণের জঘন্য অপরাধের শাস্তি অনিবার্য করতে হবে। কেউ যেন ছাড় না পায় সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

ধর্ষণ থামাতে হবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে এত সোচ্চার হওয়ার পরেও কেন ধর্ষণ থামছেনা, এই প্রশ্ন খুঁজে বের করতে হবে এখনি। নারীর নিরাপত্তা জোড়দার করতে হবে এই  বলে বলে গলা শুকিয়ে গেছে,বরং বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, যিনি নারী ক্ষমতায়নে রেখেছেন অবদান, তার দেশে নারীর প্রতি এত সহিংসতা, ধর্ষণ মেনে নেয়া যায়না। সমাজকে নারী বন্ধব করার সময় এসেছে এখনি,এই মুহুর্তে।  ওত পেতে থাকা হায়নাদের থামাতে হবে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনকে হতে হবে কঠোর, এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে সব মামলার সুষ্ঠ তদন্ত এবং বাস্তবিক প্রয়োগ দেখাতে হবে। এই হায়ানাদের এখানেই থামাতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭