ইনসাইড থট

দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে অন্যরা, ভুগছে উন্নয়নশীল দেশগুলো!


প্রকাশ: 15/10/2022


Thumbnail

গত ১৩ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শক্তিশালী এবং প্রশ্নাতীত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাপক যোগাযোগ (সড়ক, রেল, আকাশ, নদীর পাশাপাশি মোবাইল ও ডিজিটাল), কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ শুরু করে করে। একই সাথে তিনি উন্মুক্ত অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং বাণিজ্য নীতির সাথে সাথে আমলাতান্ত্রিক লাল টেপ অপসারণ করতে শুরু করেন -এ সবগুলো আর্থ-সামাজিক এবং মানব উন্নয়নের দ্রুত বৃদ্ধির প্রধান উপাদান। বাংলাদেশ ক্রমশ মাথা উঁচু করে নিজের দুই পায়ে দাঁড়াতে শুরু করে। তিনি লোহার মুষ্টি দিয়ে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোকে গুঁড়িয়ে দেন। জনগণ তাদের পরিবারের জন্য স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মূল্য উপলব্ধি করতে শুরু করে এবং ক্ষমতার স্বার্থে ক্ষমতা অর্জনের জন্য হরতাল, নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারা এবং ধ্বংসাত্মক অশান্তি আর সমর্থন করছে না। এখন সাধারন জনগন তাদের এবং তাদের সন্তানদের সমৃদ্ধির জন্য শান্তি ও প্রশান্তি চায়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অদম্য নেতৃত্ব এবং প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীক আর্থ-সামাজিক এবং মানব উন্নয়ন নীতি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছে, এবং সমৃদ্ধি ও সুখের সাথে জীবনযাপনে সাহায্য করে দেশে বাস্তব পরিবর্তন আনার কারনে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইএমএফের মতো অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্থাগুলি বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম উদাহরণ হিসাবে দেখতে শুরু করে। তারা আমাদের সম্মান করতে শুরু করে এবং আমাদেরকে উন্নয়নের সমান এবং সম্মানজনক অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করে। ১৬০ মিলিয়ন/ ষোল কোটি মানুষ এবং জনগনের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার দেশ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমা দেশগুলি পারস্পরিক বাণিজ্য এবং সুবিধার সম্ভাবনা দেখে বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করে। এই ছিল কয়েকদিন/মাস আগে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া চিত্র ও অবস্থান। একবার আপনি শুধু দেশের গ্রাম বা শহুর গুলোতে ঘুরে বেড়ান, তাহলে দেখবেন কী বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটছে সবার জন্য। কেউ পিছিয়ে নেই। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।
 
প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ আর এর জনগণের জন্য সবকিছুই ছিল মঙ্গলজনক। দেশে শান্তি, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির হাওয়া বইছিল। তারপরে COVID-19 আঘাত হানলে, হঠাৎ যেন সবকিছু থমকে দাঁড়াতে শুরু করলো। জীবন এবং জীবিকাকে ধ্বংস করতে শুরু করলো। কিন্তু আবারও প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী নেতৃত্বে অন্যান্য অনেক প্রতিবেশী এবং ধনী পশ্চিমা দেশের তুলনায় মহামারীটি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করলেন। অর্থনীতি আবার বাড়তে শুরু করে। মানুষ আবার উন্নত ভবিষ্যতের জন্য উন্মুখ হতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় দুর্ভাগ্যজনক ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর জন্য কাকে দায়ী করতে হবে, এটা কার বা কাদের দোষ ছিল তা নিয়ে তর্ক না করা যাক, আমরা জানি এটা কোনো উন্নয়নশীল এশীয়, আফ্রিকান বা ল্যাটিন আমেরিকান দেশের দোষ ছিল না। তারা এ যুদ্ধ শুরু করেনি বা শুরু হউক তাও চাইনি। কিন্তু মার্কিন ও কিছু ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় রাখার সংকল্পের জন্য প্রক্সি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে শুরু করে এবং বিশেষ করে খাদ্য, গ্যাস, জ্বালানী এবং সারের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আলোচনার মাধ্যমে একটি কূটনৈতিক সমাধান এবং যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তিতে সক্রিয়ভাবে বাঁধা দিতে শুরু করে বা নাকচ করে। অন্যদের জীবন ও জীবিকার মূল্যে রাশিয়াকে পরাজিত করা তাদের একমাএ বিদেশী নীতি হয়ে ওঠে।। কে এই যুদ্ধে জয়ী বা কে পরাজিত হবে তা নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো চিন্তা করে না। এমনকি এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় তাদের নেই। তারা শুধু মাএ চায় তাদের নাগরিকরা যেন বিনা বাধায় খাদ্য উৎপাদন করতে পারে, তাদের থালায় দুবেলা খাবার জোগাত পারে, তাদের ঘরে বিদ্যুতের বাতি যেন জ্বলে, সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবহন নিয়ে তাদের ব্যাবসা চালাতে পারে এবং তাদের সন্তানরা লেখাপড়া শেষ করে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিতে পারে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। এটাই তাদের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা।

পশ্চিমা দেশগুলো যদি তাদের প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তারা ইউক্রেনকে যুদ্ধের সমস্ত আধুনিক অস্ত্র, যতটুকু চায় এবং যত খুশি দিতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তা বন্ধ করার ক্ষমতা নেই বা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে না। তারা শুধু চায় এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ হোক। যদি পশ্চিমা দেশগুলো সত্যিই অ-পশ্চিমা দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তাহলে গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্য ও সার-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে পারে যাতে অ-পশ্চিমাদেশগুলো সহজেই তা সংগ্রহ করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশ দেশগুলোকে তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে পারে যাতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে অর্থনীতি এবং জীবন রক্ষাকারী পণ্য কিনে উন্নয়নশীল দেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

রাশিয়ার আরও অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্য এবং সারের উপর নিষেধাজ্ঞার পশ্চিমা যুক্তি একটা বাজে কথা। রাশিয়ানরা জ্বালানি ও গ্যাস বিক্রি করে আগের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছে। ইউরোপ রাসিয়াকে দোষারোপ করে বলছে গ্যাস ও জ্বালানিকে রাশিয়া অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করছে। তারা দাবি করছে যে রাশিয়াকে তাদেরকে সস্তায় গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে, তাদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সহ। পরিহাস এই যে এমনকি নিষেধাজ্ঞার সাথেও (যা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে হয় না), কমবেশি রাসিয়ার গ্যাস এবং জ্বালানী ইউরোপে প্রবাহিত হচ্ছে। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল এই ধনী দেশগুলি বিলিয়ন বিলিয়ন ধার নিতে পারে বা আরও বেশি অর্থ ছাপতে পারে আর উপসাগরীয় দেশগুলি আর অন্যান্য গ্যাস ও জ্বালানি আমদানিকারক দেশ থেকে বেশী দামেও গ্যাস এবং জ্বালানী ক্রয় করতে পারে। তাদের বড় কোম্পানির গুলোর ক্ষতির জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রদান করতে পারে। অন্যদিকে তেল আর গ্যাস সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলি পশ্চিমা দেশগুলির চাহিদা মেটাতে অনেক উন্নয়নশীল দেশে গ্যাস এবং জ্বালানী সরবরাহের পূর্ব চুক্তি বাতিল করছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে গ্যাস এবং জ্বালানির প্রাপ্যতা সীমাহীন নয় এবং ইচ্ছামতো প্রবাহ রাতারাতি বাড়ানোর যায় না। উন্নয়নশীল দেশগুলি এই গ্যাস এবং জ্বালানী কিনতে পারছে না কারন হয় সেগুলি পশ্চিমা দেশগুলির চাহিদা মেটাতে শেষ হয়েছে বা তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
 
পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ মানুষও ভুগছে। জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশগুলির দরিদ্র মানুষ জানে না তারা এখন কঠোর শীত কাটিয়ে উঠতে বা এমনকি বেঁচে থাকার জন্য তাদের ঘর গরম করার ব্যবস্থা করতে পারবে কিনা। এমন কি দু বেলা খেতে পারবে কিনা! যুক্তরাজ্য সহ অনেক ইউরোপীয় দেশ শীতকালে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা লোড শেডিংয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে। সাধারন জনগন তাদের জীবন আর জীবিকার এই অসহনিয় কষ্ট আর কতদিন চলবে তা ভাবছে। তাদের অনেকেই এই অনিশ্চয়তার দ্রুত অবসানের দাবি জানাচ্ছে। জনগন কী চান তা জিজ্ঞেস না করে রাজনীতিবিদরা একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মানুষ তাদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য উন্নত ভবিষ্যতের দাবিতে রাস্তায় নামছে। জলবায়ুর উপর প্রভাব নেতিবাচক মোড় নিচ্ছে কারণ অনেক পশ্চিমা দেশ কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করছে, মানুষ তাদের ঘর গরম করার জন্য কাঠ ব্যবহার করতে প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেশে ডানপন্থী ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা দখল করছে। ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো ডানপন্থী দল বিপুল সংখ্যক সংসদীয় আসন পেয়েছে। ইতালি ও সুইডেনের ডানপন্থিরা সরকার গঠন করতে চলেছে। যুক্তরাজ্যে আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কী ঘটছে তা দেখছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচন সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হবে কি না। তাই এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হয়ে উঠছে। ধনী দেশগুলি তাদের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যাগুলির অনেকগুলি প্রশমিত করতে পারে তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে খুবই কম বিকল্প রয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ অনেক উন্নয়নশীল দেশের দরজায় কড়া নাড়ছে। এসবের একটাই সমাধান, বন্দুক দিয়ে নয়, কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। আপনার আধিপত্যের প্রচেষ্টা বন্ধ করুন এবং মানুষকে বাঁচতে এবং উন্নতি করতে দিন। আল্লার দোহাই অন্তত গ্যাস, জ্বালানি, সার এবং খাদ্যে একতরফা অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করুন।
 
বাংলাদেশে আমরা দেখছি গ্যাস ও জ্বালানির উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা, অপর্যাপ্ততা আর বিশ্ব বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ও মূল্যস্ফীতি; লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কলকারখানা গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলিতে উচ্চ ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার খরচের কারণে, সেখানে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের উপার্জন কমে গেছে এবং তারা আগের মতো বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করতে পারছে না। হ্যাঁ, অনেকে যুক্তি দেবেন কিছু দুর্নীতিবাজ লোক এখনও দেশের বাইরে অবৈধভাবে কঠিন উপার্জনের মুদ্রা পাচার করছে। দুর্নীতি এখনও তুঙ্গে। হ্যাঁ, দেশে যখন বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন বিদ্যুৎ লাইনে বসাতে বেশি বিনিয়োগ করা হয়নি, গ্যাস ও জ্বালানি অনুসন্ধানেও খুব বেশি বিনিয়োগ করা হয়নি। প্রশ্ন থেকে যায় যে সেই ফ্যাক্টরগুলো যুদ্ধের আগেও ছিল, তবুও দেশ তখনও এগিয়ে যাচ্ছিল। যদি আমাদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস এবং জ্বালানী থাকতো বা আমরা কিনতে পারতাম (সৌভাগ্যক্রমে আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য, সার এবং পাঁচ মাসের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে), তাহলে কি আমরা এই বর্তমান পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম? আমি চাই সবাই নিজকে জিজ্ঞাসা করুক এবং উচ্চস্বরে চিন্তা করুক যে এই পরিস্থিতিতে যখন পুরো বিশ্বের অর্থনীতি অশান্ত, তখন কোনো রাজনৈতিক দল বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের রাতারাতি বা শীঘ্রই বাংলাদেশর বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টানোর কোনো ক্ষমতা আছে? আপনি কি শুনেছেন যে তারা বলছে তারা ক্ষমতায় গেলে আপনাকে, আপনার জীবনকে আরও ভাল করতে কি করবে? কাউকে দোষারোপ করা খুব সহজ কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি যখন খারাপ তখন জীবন আর জীবিকা সংশোধন বা সহজ করার জন্য কাজ করা অনেক কঠিন বা এত সহজে সম্ভব নাও হতে পারে। শুধু চিৎকার করা, গলা ফাটানো সমালচনা নয়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের পরিকল্পনা শোনার জন্য আমি এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
 
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার নামে পশ্চিমা দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলছে যে দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর মতবাদ যেন অনুসরণ করে চলে এবং তারের একতরফাভাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যেন কঠোর ভাবে মেনে চলে, অন্যথায় তাদের কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এই শক্তিধর দেশগুলো যখন দরিদ্র দেশগুলোকে হুমকি দেয়, তাদের রাষ্ট্রদূতরা কোন দ্বিধাবোধ না করে দাম্ভিকতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে বা বক্তৃতা দেন, তখন সেসব দরিদ্র দেশগুলোর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কোথায় থাকে? কোথায় থাকে তাদের বাক স্বাধীনতা? কেন দরিদ্র দেশগুলি তাদের জনগণের জন্য কী ভাল তা নির্ধারণ করতে পারবে না? আমি ভুল করে ভেবেছিলাম উপনিবেশ শেষ হয়েছে, আর কোন সাম্রাজ্যবাদ নেই বা মাএ কিছুদেশের আধিপত্য শেষ হয়েছে, আজ উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের ভালের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন। দুর্ভাগ্যবশত তদের হাঁটু এখনও আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে আর আমাদেরকে ভালভাবে শ্বাস নিতে এবং বেঁচে থাকতে বাঁধা দিচ্ছে।
 
আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে একত্রে কাজ না করে কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে, অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। শাসক দলও আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের জাতির পিতার সমর্থক দলগুলোকে নিয়ে, একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য চেষ্টা করছে না। এটি একটি জরুরী পরিস্থিতি, সংকটময় সময়, আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে, যদি কিনা আমরা সত্যিকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। আগামীকাল বিএনপি এলে বা স্বার্থপর এবং ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতায় আসলে তারা কি রাতারাতি প্রয়োজনীয় গ্যাস-জ্বালানি আনতে পারবে? অতীত ইতিহাস আমাদের নগ্নভাবে দেখিয়েছে, যে দেশ বা রাষ্ট্রদূতরা তাদের প্রভাবিত করছে, আশ্বাস প্রদান করছে তারা তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। বরং দাসত্বের বলয় আমাদের পায়ের গোড়ালিতে বসাবে যদি আমরা আমাদের স্বচ্ছলতা এবং স্বাধীনতা বিক্রি করি। এই পরিস্থিতি এখন বিশ্বব্যাপী। আজ এটা একমুখী আধিপত্য ও ক্ষমতা বজায় রাখার ক্ষমতার লড়াই। আমাদের অধিকাংশই নীরব পথচারী, আমরা কেবল শুধু কষ্টগুলো পর্যবেক্ষণ করতে এবং গ্রহণ করতে পারি।
 
দূতাবাসে ছুটে যাওয়া, রাষ্ট্রদূতদের সাথে দেখা করা এবং তাদের সাহায্য ভিক্ষা করে দেশে কোন পার্থক্য বা উন্নতি আনবে না। পশ্চিমা দেশগুলি সর্বদা তাদের সুবিধা এবং যে কোনও উপায়ে তাদের আধিপত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা থেকে পিছু হাঁটবেন না। আমরা এর আগেও দেখেছি, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের মধ্যে ঐক্যের পতনের পর যখন একপোলার বিশ্ব তৈরি হয়েছিল তখন কী হয়েছে। তখন সেই একমাএ পরাশক্তি হয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত কারি, বিচারক এবং জল্লাদ। তারা তথাকথিত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আদেশকে সম্মান করেনি। তারা যা করতে চেয়েছিল তাই করেছে, যেখানে যেতে চেয়েছিল সেখানে গেছে বা আক্রমণ করেছে। তখন আমাদের কিছুই বলার অধিকার ছিল না।
 
রূঢ় বাস্তবতা হল যে শীঘ্রই প্রবৃদ্ধিতে কোন প্রত্যাবর্তন হবে না। নিম্ন বৃদ্ধি একটি বিশ্ব বাস্তবতা হয়ে উঠেছে; মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব, উদীয়মান জীবনযাত্রার খরচ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার, সবই নিশ্চিত করেছে যে প্রবৃদ্ধি অদূর ভবিষ্যতের জন্য স্থবির থাকবে। রূপকথার গল্প বলার পরিবর্তে, রাজনীতিবিদদের সত্যিই কী গুরুত্বপূর্ণ তার উপর মনোযোগ দিতে করতে হবে। আমাদের বৃদ্ধি হোক বা না হোক, মানুষ ভালো জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মূল্যবোধ, শক্তি এবং সম্পদের উপর ভিত্তি করে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা প্রয়োগ করতে হবে। শুধু কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নয়, বরং গণতান্ত্রিক নকশার মাধ্যমেও, নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রবৃদ্ধি হয় সকলের মালিকানাধীন এবং যাতে সকলে সমান ভাবে ভাগ নিতে পারে। আমাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা আর কাজ করা দরকার কীভাবে সাধারন মানুষ অর্থনীতিতে প্রকৃত অংশীদার হতে পারে সে সম্পর্কে।
 
এই ইউক্রেন যুদ্ধে শুধুমাত্র একটি বা দুটি সেক্টর বা দেশ বিজয়ী - গ্যাস এবং জ্বালানী কোম্পানি/দেশ এবং অস্ত্র উৎপাদনকারী শিল্প/দেশ। সাধারণ ও দরিদ্র মানুষ এর শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা সবাই শুধুই নীরব পথিক, শুধু আশা করছি এবং প্রার্থনা করছি ইউক্রেন যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হবে, শীঘ্রই আবার ভালো দিন, স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭