ইনসাইড পলিটিক্স

রাজপথের নেতাদের কদর বাড়ছে আওয়ামী লীগে


প্রকাশ: 15/10/2022


Thumbnail

বিরোধী দল আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, দেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হচ্ছে তখনই আওয়ামী লীগের রাজপথের নেতাদের কদর বেড়েছে। যারা এতদিন ছিলেন উপেক্ষিত, যাদেরকে সরকারের নীতিনির্ধারণী বা অন্যান্য বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হতো, এমনকি যে সমস্ত রাজপথের লড়াকু নেতারা এমপি বা মন্ত্রী হতে পারেননি তারাই এখন দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে মাঠ থেকে উঠে আসা কর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা নেতারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এবং তারাই নীতিনির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে যতই বিরোধীদলের আন্দোলন বাড়বে, যতই সরকার নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে পড়বে ততই রাজপথের কর্মীদের গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময় আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন মাঠ থেকে উঠে আসা নেতারা। আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় দলের সভাপতিকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হলেন দলের প্রাণভোমরা। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন, তার নির্দেশনা প্রদান করেন এবং সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে এ ধরনের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাদের যোগাযোগ বেড়েছে এবং তাদেরকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজের দায়িত্ব দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতা এবং নানামুখী বাস্তবতার কারণে তিনি এখন অনেকটা আলংকারিক হয়ে গেছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে একটি করে লিখিত বিজ্ঞপ্তি পাঠ ছাড়া সাংগঠনিক বিষয়ে তার তেমন কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। বরং সাংগঠনিক কাজের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় নিয়েই তিনি অন্ধকারে থাকছেন। আওয়ামী লীগে এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবে যারা সারাদেশে সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখভাল করছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন-

১. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন না দেয়ার পরও তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশে দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম করেছিলেন, বেশ কিছুদিন তিনি একটু উপেক্ষিতও ছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনের পর তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হন এবং আস্তে আস্তে লাইমলাইটে এসেছেন। এখন দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয়ে দায়িত্ব তার ওপর দিচ্ছেন। শুধু দলের বিষয়ে নয়, সরকারের অনেক নীতিনির্ধারণী বিষয়েও জাহাঙ্গীর কবির নানক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন বলেও একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে।

২. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমানও জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতই তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। তিনিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তারপর তাকেও প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে। তিনিও এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।

৩.  আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া নেতা এবং কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তারপর তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে অন্যতম প্রাণভোমরা মনে করা হয় বাহাউদ্দিন নাছিমকে। সাম্প্রতিক সময়ে দল গোছানো, সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

৪. মির্জা আজম: মির্জা আজম আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম। তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক। মাত্র একবার মন্ত্রী হয়েছিলেন, একবার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাও পাটবস্ত্র মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং দলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা বিভাগ মির্জা আজমের দায়িত্বে থাকার কারণে সাংগঠনিকভাবে তিনি একটি স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

৫. এসএম কামাল হোসেন: এসএম কামাল হোসেনও সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনিও এমপি হননি কখনো। তারপরও এখন দলে তার গুরুত্ব অনেক বেশি বেড়েছে।

৬. মাহবুবউল আলম হানিফ: মাহবুবউল আলম হানিফ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন তিনি একমাত্র নেতা যিনি প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে সকালবেলা উপস্থিত হচ্ছেন এবং কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। সকাল-সন্ধ্যা দুইবেলা দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।

আর এই নেতারা এখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছেন এবং সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। এটাকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭