খাদ্য, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম। আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস। নানাভাবে আজকে পালিত হবে এই দিবসটি। কিন্তু শুধু দিবস পালন হলেই হবেনা আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে কিছু সত্যকে। পুরো বিশ্বের ভাবনায় রাখতে হবে সে বিষয়গুলোকে।
এক মুঠো ভাত, আপনার বা আমার কাছে খুব সামান্য কিছু হলেও অনেকের কাছে এই এক মুঠো ভাতই সুধাতুল্য। এক মুঠো ভাতের জন্যে হাহাকার করে এই মানুষগুলো ।তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে রয়েছে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ। করোনা মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে এরইমধ্যে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে।
এশিয়া ও আফ্রিকার দারিদ্র্য-পীড়িত দেশের মানুষেরা এই তালিকায় আছে সবার শীর্ষে । আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বেড়েছে। বাংলাদেশের ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ মাঝারি ও তীব্র খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। সংখ্যাটি ২০১৮ থেকে ২০২০ সময়ের মধ্যে আরও বেড়েছে। এই সময়ে নতুন করে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বেড়েছে ১২ লাখ।
অপরদিকে২০১৭-২২ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বেড়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে আর খাদ্যোৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে।খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের দিক থেকে তথ্যটি উদ্বেগজনক। পুরো বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানিপণ্য নিয়ে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে। অর্থ দিয়েও অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য মিলছেনা। ফলে অধিকাংশ দেশই খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে, উৎপাদন বাড়াতে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ।
খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসাকে তখনই "খাদ্য নিরাপদ" বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাবে উপবাসের কোন আশঙ্কা করেন না। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যেনর কারণে বহুদিন যাবৎ ক্ষুধার্ত। প্রায় ২০০ কোটি মানুষের বিভিন্ন মাত্রার দারিদ্র্যেবর কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াই বাস করছেন (উৎস: বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ২০০৩)। ২০০৭ সালের শেষ দিকে জৈবজ্বালানির জন্য বিশেষ কৃষিকাজের প্রসার, ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রভাব, বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের দামের উচ্চমূল্য, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, আবাসিক প্রয়োজনে ও শিল্পকারখানার কারণে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, এবং সম্প্রতি চীন ও ভারতে ভোক্তাদের চাহিদায় বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে খাদ্য সংকট হয়েছে। দারিদ্র্য ও খাদ্য গ্রহণের হারের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে। যেসব পরিবারের চরম দারিদ্র্যা এড়ানোর সামর্থ্য আছে, তারা কদাচিৎ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার শিকার হয়। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারগুলি কেবল ক্ষুধার শিকারই নয়, খাদ্যস্বল্পতা ও দুর্ভিক্ষের সময় এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্ববাজারের এ রকম সম্ভাব্য ভারসাম্যহীন অবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ভেতরেও এখন করোনাভাইরাসের সময়, নানাবিধ সংঘর্ষ, ধনী-দরিদ্রের ফারাক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর বড় এক অংশকে লকডাউনের সময় ঘরে বসে থাকতে হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আরেকটি সংকট দেখে দিয়েছে। একই অবস্থা খুচরা পণ্য বিক্রি খাতেরও। কিন্তু আঘাতটা আবারও তাই বেশি করে আসছে গরিবের ওপর। রাষ্ট্রের সেখানে কী করণীয় আছে তা মনে হয় আরও গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। প্রয়োজন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং এমন এক ব্যবস্থা গড়ে নেওয়া রাষ্ট্র যেখানে সত্যিকার অর্থে কল্যাণমুখী হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবে এবং ভাববে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। যেন এক মুঠো ভাতের জন্য কাউকে হাহাকার করতে না হয়।