ইনসাইড আর্টিকেল

নাগেশ্বরীতে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর


প্রকাশ: 16/10/2022


Thumbnail

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। এখন সেই মাটির ঘরটি কাল হয়তো তার স্থান হবে ইতিহাসে অথবা যাদুঘরে। সময়ের তালে ও মানুষের আর্থিক সামর্থ্য আর রুচির পরিবর্তনের ফলে গ্রাম থেকে হারিয়ে গেছে এ মাটির ঘর।

জানা যায়, এক সময় এ অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই দেখা যেত নজরকাড়া মাটির একতলা কিংবা দোতলা বাড়ি। শুধু মাটির বাড়িই নয়, ছিল ধান-চাল রাখার জন্য মাটির তৈরি গোলা ঘর ও কুঠি। তবে দিন দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এখন হারিয়ে যাচ্ছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটির তৈরি ঘর সৌন্দর্য এবং অত্যন্ত আরামদায়ক। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। এখন এই মাটির ঘর ভেঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের তৈরি পাকা দালান। মাটির ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতের উষ্ণ। বর্তমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মতো। এ অঞ্চলে এক সময় মাটির ঘর হিসেবে খ্যাত ছিল। 

কিন্তু এখন আর তা নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব মাটির ঘর হারাতে বসেছে। সাধারণত এটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিণত করা হয়। সেই কাদা ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ এক সঙ্গে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১২ থেকে ২০ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। এরপর এই দেয়ালের ওপর তালের আড়ং, কাঠের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় ৯০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।

মাটির ঘরের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ব্যক্তি আবদুল হক জানান, মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক। তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করা হয়। এ সমস্ত ঘর বেশি বড় হয় না। মা, চাচি ও গৃহিণীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুণভাবে কাদা দিয়ে লেপে মাটির ঘরের দেয়ালগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এখন আর সেই মাটির ঘর চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে এখনো বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দুই একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের এলাকায় মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো। মাটির ঘরগুলো বন্যা ও ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছর মাটির ঘরে খরচ না করে একবারে বেশি খরচ হলেও পাকা ঘর-বাড়িই নির্মাণ করছেন। 

তবে এখন মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি। হয়ত সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন মাটির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছে মাটির ঘর রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে। 

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছেলে-মেয়েরা মাটির ঘরের গল্প, কবিতার ছন্দে বা সাহিত্যর পাতায় বা যাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। নতুন প্রজন্ম ছেলে-মেয়েদের কাছে শুধু নাটক, সিনেমা ও গল্প কাহিনী রয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭