ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ করেও তারা আওয়ামী লীগের নেতা কিভাবে?


প্রকাশ: 18/10/2022


Thumbnail

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একরকম ভরাডুবি ঘটেছে। জেলা পরিষদের মোট ৫৭টি জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে ২৫জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই একক প্রার্থী হিসেবে সকলে মেনে নিয়েছে। বাকি ৩৪টি জেলায় নির্বাচনে ১০টিতেই আওয়ামী লীগ হেরেছে। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার বিষয়ক মনোনয়ন বোর্ড। এই বোর্ডের সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন, তখন তার বিরুদ্ধাচরণ করাটাই সংগঠনবিরোধী এবং আওয়ামী লীগবিরোধী তৎপরতা বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তৃণমূলের কর্মীরা মনে করেন, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ করেন তারাই আওয়ামী লীগের আসল শত্রু, তারাই একেকজন মোশতাক। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল মনে করলে কি হবে, ভোটের মাঠে যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের এবং আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা। এই সমস্ত নেতাদের পেছনে মদদ দিয়েছেন কোনো না কোনো মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। আর এর ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, যারা এভাবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করে তারা কতটুকু আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কিনা।

এর আগেও এ নিয়ে কথা উঠেছিল যখন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বিরোধিতা করে এমপি, নেতা এবং মন্ত্রীদের সমর্থিত প্রার্থীরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিল এবং বিভিন্ন স্থানে তারা বিজয়ী হয়েছিলো। সেই সময়ে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো, যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করবে তাদেরকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই অবস্থানে থাকতে পারেনি। বরং ওই সমস্ত নেতা ও সংসদ সদস্যদের চাপেই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে তার অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়। পরে তাদের ব্যাপারে একটু নমনীয় হয় আওয়ামী লীগ। বলা হয় যে, তাদেরকে বহিষ্কার করা না হলেও তারা ভবিষ্যতে কোনো পদ পাবে না। কিন্তু এধরনের সিদ্ধান্তের পরও জেলা পরিষদের মত সীমিত ভোটারের ভোটেও আওয়ামী লীগে বিদ্রোহীদের বন্যা বয়ে যায় এবং বিদ্রোহীরাই যেন এই নির্বাচনকে তাতিয়ে তুলেছে। এই নির্বাচনে একটি জেলা পরিষদেও আওয়ামী লীগের হারার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ হেরেছে নিজেদের পারস্পরিক কোন্দল এবং বিরোধের কারণে। আর এটি আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় অশনিসংকেত হয়ে উঠেছে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, যারা দলের সভাপতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা আসলে কতটা দলের শুভাকাঙ্ক্ষী বা আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের আস্থা কতটুকু। দিনাজপুরে সবাই আওয়ামী লীগার কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ পেয়েছে মাত্র ৭৮টি ভোট। এটা কিভাবে সম্ভব, এই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেই উঠেছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দম্ভ করে প্রার্থী দিয়ে ফরিদপুরের মত গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিজয়ী হয়েছে। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য দুইজন হেভিওয়েট নেতা ফরিদপুরে গিয়েছিলেন। এরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। কিন্তু তারা গিয়েও আওয়ামী লীগের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। এরকম যেই জায়গাগুলোতে আওয়ামী লীগ হেরেছে প্রত্যেকটি স্থানে দেখা গেছে যে, বিদ্রোহীরা অনেক ক্ষমতাবান, আওয়ামী লীগের নেতা। আসলে তারা কি আওয়ামী লীগের নেতা নাকি এরাই আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিকারক, সেটি এখন ভাবার সময় এসেছে বলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭