ইনসাইড আর্টিকেল

শৈশবের বিকাশ না হোক অসহিষ্ণুতা দিয়ে


প্রকাশ: 19/10/2022


Thumbnail

কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্বনামধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু ভিডিওতে দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থী পথ রোধ করে আন্দোলন করছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে  প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল এই শিক্ষার্থীরা। সেই সময়  দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে বিকেল চারটা পর্যন্ত ধানমন্ডিতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এই যান চলাচল বন্ধ থাকার সময়কারই ভিডিও ফুটেজ গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। আমি ভিডিও গুলো দেখে কিছুটা স্তম্ভিত হলাম। যে শিক্ষার্থীদের  ভিডিতে দেখা যায়, বয়সের দিক দিয়ে হিসেব করলে ছোটই বলা যায় তাদের। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, তাদের রূঢ় ব্যবহার। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হতে চলেছে ভীষণ আক্রমনাত্বক। 

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবীতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, আন্দোলনের যৌক্তিকতা আছে অবশ্যই । তবে  একটি অভ্যন্তরীন বিষয়, যেটি তারা সমাধান করতে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষকেনিয়ে বসে, কিংবা বলা  যেতে পারে  মানববন্ধন করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে, রাস্তায় অবরোধ এবং রাস্তায় যান-চলাচল বন্ধ করে খারাপ আচরণ করা এগুলো কোমলমতী শিক্ষার্থীদের কে শেখালো? ভিডিওগুলোতে তাদের আচরণকে অনেকটা অসহিষ্ণুই মনে হয়।  কিন্তু প্রশ্ন হল এতটা অসহিষ্ণু, বেয়াদব  আচরণ তারা কোথা থেকে পেল? আর কিছু হলেই রাস্তা অবরোধের বিষয়টি হয়তো আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিক নানা ঘটনা প্রবাহ থেকে শিখেছে বলে ধরে নেয়া যায়  কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এই রূঢ়তাআমরা আশা করতে পারিনা। অন্তত এই বেড়ে ওঠাৎ প্রজন্মটির কাছ থেকে তো অবশ্যই না।

কিন্তু আমাদের সন্তানেরা এতটা অসহিষ্ণু কিভাবে হচ্ছে, তা কি আমরা খুঁজে দেখেছি? পৃথিবী এখন বদলে গেছে। পুরো পৃথিবী এখন ইন্টারনেটের। আর করোনা মহামারী শিক্ষার্থীদের আরও ইন্টারনেটের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। শিক্ষাব্যাবস্থা করোনাকালে নতুন মোড় নিলে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যস্থ হয়ে পরে। আর গবেষণায় দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়। আর এসবের সব থেকে বেশি প্রভাব পরে শিশু মনে। আর এর ফলে বড় থেকে ছোট, মানুষের মনে  বাড়ছে হিংসা-বিদ্বেষ ও ভিন্নমত দমনে আগ্রাসী মনোভাব।  শিশুরা যা দেখে, যা তাদের সামনে যেভাবে আসে তাকেই তারা বিশ্বাস করে। অনেক সময় খারাপটাই হয়ে যায় তাদের আইডল।

শিশুদের মনে অসহিষ্ণুতা তৈরির ব্যাপারটা শুধু সোস্যাল মিডিয়ায় না, এর দ্বায়ভার পরিবার এবং সমাজের উপরেও বর্তায়। এখন যৌথ পরিবার ভেজ্ঞে একক পরিবার গড়ে উঠেছে। আর এই পরিবারগুলোতে অনেক সময়ই বাচ্চারা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সান্নিধ্য পায় না। তারা বেড়ে ওঠে একা এবং নিঃসঙ্গ ভাবে। আর এতে সামাজিক বন্ধনের গুরুত্ব তারা বুঝতে শেখেনা। তারা যেমন সামাজিক আচার-আচরণের পরিচর্যা করার সুযোগ পাচ্ছেনা তেমনি  ছিটকে পড়ছে সামাজিক দ্বায়বোধ থেকে। অনেক সময় বাবা-মা চাকরি করায় সন্তানটি থাকছে বাসায় সারাদিন একা, ফলে সে তার একা জীবনকে বন্দি করছে অনলাইনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই ইন্টারনেট তাকে নিয়ে যাচ্ছে আলাদা এক দুনিয়ায় যেখানে ভালো কিংবা মন্দের পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত জটিল।ফলে এই কোমলমতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে উগ্রতা ও বিচ্ছিন্নতা। তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ভিন্নমত প্রদর্শনকারীর প্রতি আক্রমানত্বক মনোভাব। 

এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার প্রয়াস কিংবা সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় খুব কম পাওয়া যায়। শিক্ষাব্যবস্থা এখন হয়ে গেছে শুধুমাত্র প্রতিযোগীতার। 'এ' প্লাসের পেছনে ছোটা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এখন শিক্ষার্থীরা শেখেনা নৈতিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও নৈতিকতা শেখা ও পরিচর্যা করতে শেখে । কিন্তু এই চর্চা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। ফলে এখন শিক্ষার্থী শিক্ষককে অবমাননা করতে লজ্জিত হয়না, লজ্জিত হয়না পিতা-মাতা কিংবা গুরুকে অসম্মান করতে। বরং অসহিষ্ণু  আচরণকে 'হিরোইজম' ভেবে বসে।  

আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এভাবেই   অসহিষ্ণু, অসামাজিক রখে যাই, আমরা পাব একটি অন্ধকার ভবিষ্যৎ। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হবে ফুলের মতই কোমল, যারা বড় হবে সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়ে, সামাজিক মানুষ হিসেবে। এজন্য আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে যেমন সন্তানকে নীতি-নৈতিকতা শেখাতে  হবে তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে এর চর্চা। ধর্মীয় মূল্যবোধ, বড়দের সম্মান করা, শিশুদের শেখাতে হবে। তাদের তফাৎ শেখাতে হবে অপরাধ ও অপসংস্কৃতি  সম্পর্কে। এছাড়া  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কেও তাদের ধারণা দিতে হবে আমাদেরই।কোন সন্তানের শৈশবের বিকাশ না হোক অসহিষ্ণুতা দিয়ে। কারণ একটি জাতির  সফলতাই আসে আদর্শ শিক্ষার্থী ও তরুণ-যুবসমাজের হাত ধরে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭