ইনসাইড থট

সরকারি কর্মচারীর রাজনৈতিক চরিত্র: আমরা শংকিত


প্রকাশ: 19/10/2022


Thumbnail

সরকারি কর্মচারীর রাজনৈতিক চরিত্র বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরানো।স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজনৈতিক চরিত্রে আবির্ভুত হয়েছেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে নির্মম হত্যাকান্ড সামরিক বাহিনীর বিপথগামী সদস্যরা সংঘটিত করেছিল তার একটি রাজনৈতিক চরিত্রের প্রতিফলন।  রাজনীতিবিদরা মেধা ও সাহসে ব্যর্থ হয়ে রাজনীতি করেন। কুট কৌশলে তারা ক্ষমতার শীর্ষ পদ দখল করেন।  গণতন্ত্র সেখানে লেবাশমাত্র। ঠিক এইরকম একটি মনোভাব থেকেই জন্ম নেয় বিকল্প একটি রাজনৌতিক চেতনা।  প্রশাসন তখন মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিসিএস এর মতো একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক হন না।সামরিক অফিসার মনে করেন তিনি অনেক কষ্ট করে, নিয়ম শৃংখলা মেনে সর্বোচ্চ পদে যান।  কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ হয় পরিবারের উত্তরাধিকার অথবা মেধাশুন্য জনতার তথাকথিত গণতন্ত্রের লেবাসে তথাকথিত নির্বাচনের ফসল! সরকারি কর্মকর্তাদের , সেটা সামরিক বা বেসামরিক  উভয়ই হতে পারে, এইরকম মনোভাবের বহির্প্রকাশ বিদ্রোহ এবং তা থেকে সামরিক অভ্যুর্থান কিংবা অন্য কিছু। 

সম্প্রতিকালে এইরকম মনোভাব এতটাই প্রকট হয়েছে যে সরকারি কর্মকর্তারা কাউকেই মানেন না।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , সামরিক অফিসার তাদের যেন অধীনস্ত কর্মচারী ! এমনকি রাজনীতিবিদরাও ! এমন মনোভাব পুলিশের মাঝেও প্রকট দেখা যাচ্ছে।  তারাই নাকি সরকার বানায় !

এরকম মনোভাব দেশের উন্নয়নের সহায়ক নয় যেমন  এবং তেমনি জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। পলাশী থেকে ধানমন্ডি - ইতিহাস সেটাই বলে।  

বিষয়টি বুঝতে একজন আমলাকে প্রশ্ন করেছিলাম - তিনি বলেছেন ফাইল এ শেষ সইটি করেন রাজনীতিবিদ।  সুতরাং, দুর্নীতির দায় অযোগ্য মেধাশুন্য লোভী রাজনীতিবিদ। আমলারা দেশের সবচে মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে মনে করেন অযোগ্য, দুর্নীতির প্রোডাক্ট, দুর্বল চিত্তর অধিকারী একজন মানুষ।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফাঁকিবাজ , লোভী তাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটেন টাকার জন্য।  সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসেন এমনকি বিদেশ থেকে লোন বা চাকরি নিয়ে আসেন আর বাকিরা বসে বসে খায়। 

এক পেশার মানুষ সম্পর্কে আরেক পেশার মানুষের এরকম নেতিবাচক মনোভাবের শিকার হচ্ছে জনগণ। তারা কষ্ট করে উৎপাদন করে আর সুফল ভোগ করে অন্যরা। সরকারি কর্মচারীদের আরেকটি দিক হলো চাটুকারিতা। চাটুকারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও এসময়ে কম যাচ্ছেন না। ফলে রাজনৌতিক লেজুড়বৃত্তি চরম ও অসহনীয় হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা শিক্ষক - সরকারি কর্মকর্তার চাটুকারিতা দেখে। তাদের চাটুকারিতা দেখে আমাদের তরুণ সমাজ রাজনৈতিক দলে ভিড়ছে। তারা মনে করছে মেধার বা সাহস থাকলেও চাকরি হবে না। সুতরাং রাজনীতিতে যাও।

এবং যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলে যোগ দিয়ে থাকে।  সেখানে থাকেনা আদর্শ।  এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় , প্রশাসন , পুলিশ মারাত্মকভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে সুবিধাবাদী ও পেশাদারীত্বহীন হয়ে পড়ছে।  শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা  নিয়োগ বা  পদোন্নতিতে যদি দল দেখা হতো তাহলেও কিছুটা সততার স্থান থাকতো।  এখন সবখানেই টাকাটা খেলা চলছে।  নিয়োগ বাণিজ্য এখনকার অন্যতম আয়ের মাধ্যম।  নিয়োগ বাণিজ্য এমন পর্যায়ে গেছে যে সেখান থেকে ফিরে আসতে আমাদের রেভলিউশনারী বা বিপ্লবাত্মক কিছু করতে হবে।  সমাজ রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুণে ধরে গেছে।  পেশি শক্তির স্বর্গরাজত্ব কায়েম হতে পারে যদি না আমরা সচেতন হই। 

পত্রিকায় এসেছে আমলারা ষড়যন্ত্র করছে এবং একজন আমলাকে অবসর দেয়া হয়েছে যে কিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতো।  রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়তো তিনি পদোন্নতিও পেয়েছেন বিগত সময়গুলোতে।  আমাদের মাঝে একটি প্রবণতা আছে রাজনৌতিক পরিচয়কে বিবেচনা নেয়ার।  সেটা যে মঙ্গল কিছু দিতে পারছে না তা বোঝার ক্ষমতাও হয়তো আমরা হারিয়ে ফেলেছি।  আমরা কি যে এক সুবিধাবাদী চরিত্রের মানুষ হয়ে যাচ্ছি যে জাতির সামনে অমানিশা অন্ধকার দেখা দিয়েছে। 

আমরা কিভাবে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারি ? দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের এমন একটি প্রশ্নর মুখোমুখি হতে হচ্ছে তারা দায় আমাকেও নিতে হবে। আমি হয়তো আমার কাজটি সঠিকভাবে করছি না।  আমার কাছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক , রাজনৈতিক সম্পর্ক , ব্যক্তি স্বার্থ এতটা প্রকট হয়েছে যে, আমি নিরপেক্ষ থাকতে পারছি না।  আমাদের এখন উচিত রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থ অতিক্রম করে কাজ করা।  দেশ এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। কিন্তু আমাদের মাঝে আসর করেছে সুবিধাবাদীরা ভূত।  সেই ভূত তাড়ানোর এখনই সময়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন - দল , সরকার থেকে শুদ্ধি অভিযান এখনই করতে হবে।  নুতবা যে বিদ্রোহ সৃষ্টি হবে তাকে থামাতে অনেক রক্তপাত হতে পারে। আপনি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা।  আপনার যে সাহস আছে তার এদেশের কারোই থাকবার কথা নয়।  আমাদের মাঝে সাম্প্রদায়িক চিন্তা যেভাবে মুক্তি যুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করছে তা ভয়াবহ রূপ লাভ করতে পারে।  আমরা অনেকেই মনে করি নামাজ পড়ে সুতরাং সে সৎ।  এই ধারণা ভুল প্রমান করছে। আবার আমরা মনে করি যে মুক্তি যুদ্ধের চেতনার কথা বলে সে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে।  কিন্তু সেটাও ভুল।  আমাদের মাঝে হাইব্রিড ভূত ঢুকে পড়েছে।  যেসব কারণে নৌকাডুবির সম্ভাবনা তৈরী করছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুদ্ধি অভিযান ব্যাপক আকারে করতে হবে।  আপনার কাছে সঠিক তথ্যটি যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমরা সন্ধিহান।  আমার শংকিত।আপনার ত্যাগী কর্মীরা পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে।  না জানি কোনদিন হয়তো আপনিই বঙ্গবন্ধুর মতো বলবেন সবাই পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি আর চাটার দল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাঁচাতে আপনার বিজ্ঞচিত সিদ্ধান্ত একান্তভাবে কাম্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭