ইনসাইড থট

সুবিধাবাদীরা দর্শন বুঝেন না


প্রকাশ: 20/10/2022


Thumbnail

বর্তমানে বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব তারা সেটা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তারা এখন বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করছেন এবং তাদের কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। এতে আমাদের বিরাট লাভ হবে। সেটি হলো দেশে বিরোধী মতবাদের চর্চা হচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, তিনিও বিভিন্নভাবে সরকারের সমালোচনা করেছেন এবং তার দল  গাইবান্ধার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এগুলোকে রাজনীতিতে ইতিবাচক বলে আমি মনে করি। সাম্প্রতিক সময়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে, বিরোধী দলের দায়িত্ব বিরোধিতা করা। তারা তাদের কাজটা যদি সঠিকভাবে আগের থেকে আরও বেশি করে করতে পারে তাহলে তো আমাদের দেশ আরও বেশী উন্নত। আমাদের গণতন্ত্র আরও ম্যাচিউর হবে। আমি সব সময় একটি কথা বলি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক  শেখ হাসিনা দর্শন দিয়ে দেশ চালান। দেশ চালাতে গিয়ে তিনি কখনো ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের কথা ভেবে দেশ চালান না। পচাঁত্তরে তিনি তার বাবা-মা, ভাই এবং নিকটাত্মীয়দের হারিয়েছেন। এখন আপনজন বলতে দেশের মানুষই তার আপনজন। সেটি তিনি একাধিকবার তার বিভিন্ন ব্ক্তব্যে বলেছেন। তার যত স্বপ্ন সব কিছু দেশকে নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশের উন্নতি নিয়ে। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে দলকে সংগঠিত করলেন এবং পরে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নতিতে নিজেকে মনোনিবেশ করলেন এবং এখনো তার সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অনেকেই বলে থাকেন যে, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কেন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। যদি তিনি দায়িত্ব না নিতেন তাহলে ওই সাড়ে তিন বছরে তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হতো না। বয়সের বিবেচনায় বেশ কম বয়সেই একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক মহাযজ্ঞে হাত দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন ছয় দফা দিলেন তখন আওয়ামী লীগে অনেক বড় বড় নেতা ছিলেন। তারা অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধু গ্রামে গ্রামে ঘুরে দলকে সংগঠিত করেছিলেন এবং এই দলের মাধ্যমেই তিনি দেশ স্বাধীন করলেন। সে সময় যারা, বিশেষ করে একটা তরুণ গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা করেছিলেন পরবর্তীতে তারা জাসদ নামে আলাদা হয়ে গেলেন। দুভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতাকারীরা সবাই নিয়ে এই জাসদে যোগদান করেছিলো এবং বঙ্গবন্ধুর লোকজনকে হত্যা করা শুরু করলো। সব রিঅ্যাকশনেরই একটা কাউন্টার রিঅ্যাকশন হয়। সুতরাং দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক লোক মারা গেলেন। সে সময় কর্নেল তাহের আর্মির ভেতর থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা সব ক্ষেত্রে তার তৎপরতা ছিলো। খুনি মোস্তাক তো ছিলেন শুধুমাত্র অন দ্যা স্পট নেতা। তার ইচ্ছা ছিল তিনি বঙ্গবন্ধুকে যেকোনোভাবে পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দিয়ে একসময় রাষ্ট্রপতি হবেন এটা তার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু তার তো বাকি বুদ্ধি ছিল না। বাকি সমস্ত কিছু করেছেন এই জাসদের প্রতিভাবান সমস্ত লোকজন। যাদেরকে বঙ্গবন্ধু তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত স্নেহ করেছেন। যে আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশ স্বাধীন করলেন সেই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নীরব ছিলো। এটা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করছে। জেনারেল শফিউল্লাহ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনরূপ প্রতিবাদ করেননি। সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ছিলেন যারা ডাক দিলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রাস্তায় নেমে যেতো প্রতিবাদে। কিন্তু সাহসের অভাব থাকার জন্য কেউ সেদিন ডাক দেয়নি।

কোনো এক সময় আমি শিখেছি যে, সঠিক মানুষ হতে হবে, সঠিক সময় হতে হবে এবং সঠিক জায়গায় হতে হবে। বঙ্গবন্ধু সঠিক মানুষ হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সঠিক মানুষ হতে পারিনি। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারিনি। সঠিক মানুষ হতে পারলে সেদিন প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতাম। বঙ্গবন্ধু যাদেরকে সঠিকভাবে নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তারা আসলে সঠিক নেতা হতে পারেন নাই। তারা আর সঠিক সময়ে তাদের নেতৃত্ব দেখাতে পারেন নাই। তারা যদি শুধুমাত্র জনগণকে ডাক দিয়ে পালিয়ে যেতেন তাহলে এদেশের ইতিহাস অন্যরকম লেখা হতো। তারপর পচাঁত্তরের পর কোনো রকম দল টিকে ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগকে টিকে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে আনা হলো।

দার্শনিক শেখ হাসিনার কথা বলতে গেলে অবশ্যই তার ছাত্র জীবনের রাজনীতি থেকে শুরু করে সবই বলা প্রয়োজন। উনাকে যারা আনলেন তারা ভেবেছিলেন তিনি হাতের পুতুল হবেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে না, তার নিজস্ব দর্শন নিয়ে তিনি দল চালাতে চান তখন আওয়ামী লীগের যে আসল ক্ষমতা, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা সেটির পুনরাবৃত্তি হলো। তখন আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দিয়ে কেউ কেউ আব্দুর রাজ্জাকের সাথে চলে গিয়েছিলো। ফলে দার্শনিক শেখ হাসিনাকে আবার শুরু থেকে আরম্ভ করতে হলো। আমার মতে, তখন যারা ‘বি’ টিম টাইপের নেতা ছিলেন তাদেরকে

রাষ্ট্রনায়ক ‘এ’ টিম টাইপের নেতা বানালেন এবং ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসলেন। অর্থাৎ দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ‘বি’ এবং ‘সি’ টিম টাইপের নেতাদের নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করলেন। এর মধ্যে যখন ওয়ান ইলেভেন আসলো তখন দেখা গেল এই সব নেতারা বলতেন যে, কি কাজ করবো? নেত্রী তো আমাদের কাজ দেয় না। তারা তখন নিজেরাই দায়িত্ব ছিলেন এবং সংস্কারপন্থী হলেন। এখনো যারা নেত্রী আশেপাশে ঘোরাফেরা করেন, তাদের ভিতর কেউ কেউ খন্দকার মোশতাক আছে কিনা বা কোনো রকম সুবিধাবাদী আছে কিনা অথবা ভয়বাদী আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। সঠিক সময় যদি আপনি ঠিক মতো কাজে লাগাতে না পারেন তাহলে তো একই কথা। একজন দার্শনিকের আশেপাশে যারা বসে থাকেন, যারা দর্শনের কথা শুনেন তাদের দায়িত্ব কি? দায়িত্ব হলো দার্শনিকের দর্শন বুঝে কাজগুলো করা। এমনকি তার দর্শনকে ধারন করা যেন ভবিষ্যতে তার দার্শনিকের দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা আমাদের দেশে হয়নি। না হওয়ার ফলে সবাই দার্শনিক শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে থাকেন। উনি তো প্রতিটি বক্তব্যে একেকটি করে দর্শনের কথা বলেন।প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা তো কমন। যেমন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা সব বক্তৃতায় বলেন। কি জন্যে বলেন কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে অন্য কথায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। সুতরাং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর কমিউনিটি ক্লিনিক এক সমার্থক নাম। আমাকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয় আমি এটা ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি যে, দুটির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

দার্শনিক শেখ হাসিনার বক্তব্য যদি আওয়ামী লীগের নেতারা সঠিকভাবে বুঝে থাকেন তাহলে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে যখন পাকিস্তানের জয়গান করলেন, এর আগে বিএনপি মহাসচিব যখন পাকিস্তানের পক্ষে কথা বললেন তখন  নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কেন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রত্যেক জায়গায় কোনো আওয়াজ উঠলো না। আমার মতে, এরা এখনো দার্শনিকের দর্শন বুঝেন না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। দার্শনিকের দর্শন সবাইকে বুঝতে হবে। দার্শনিকের ৮০ ভাগ সমর্থক যারা আমি তাদের মধ্যে কাজ করি। সেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা ডলারের দাম বুঝে না, যারা অর্থনীতির কোনো সমীকরণ বুঝে না কিন্তু তারা এটা স্বীকার করছে যে, মুজিরের মেয়ে তাদের খাওয়াচ্ছে। তারা শুধু ওই দার্শনিক শেখ হাসিনাকেই বুঝে।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অবশ্যই সঠিকভাবে নির্বাচন করা। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছে যে, তারা ঠিকমতো তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতখাবে মনে করি, কেউ নামে, কেউ বেনামে সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। শুধু সামনের নির্বাচন নয়, পরবর্তী নির্বাচনেও দার্শনিক শেখ হাসিনাই দেশ পরিচালনা করবেন। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে যদি দার্শনিক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্বে না থাকতেন তাহলে এ দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেত। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ লোক মারা যেত। কিন্তু সেটা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এ দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। দেশও ঠিকমতো চলবে এবং এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই আমাদের দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন। বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭