ইনসাইড ইকোনমি

ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/01/2018


Thumbnail

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকির মহোৎসবের মধ্য দিয়ে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৩তম আসর। মেলায় অংশ নেওয়া বড় প্রতিষ্ঠান বা প্রিমিয়াম স্টলগুলো নিয়ম মাফিক ভ্যাট প্রদান করলেও ছোট স্টল ও বিদেশি প্যাভিলিয়নের স্টলগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাট না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নানা অপকৌশলে ভ্যাট এড়িয়ে যাচ্ছে স্টল মালিকরা। মেলায় এমনটি দেখা গেছে যে, অনেক স্টল মালিকরা ভ্যাটের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। তাদের ভাষ্য, এরকম মেলায় আবার ভ্যাট কিসের? তবে ভ্যাট আদায়ে কর্তৃপক্ষের প্রচারপ্রচারণায় চরম অবহেলা লক্ষ্য করা গেছে।

সারাদিন বেচা বিক্রি শেষে স্টল মালিকরা ভ্যাট হিসেবে যা দিচ্ছেন তা নিয়েই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন বাণিজ্য মেলার তদারকির দায়িত্বে থাকা ভ্যাট কর্মকর্তারা। মেলা মাঠে তাদের উপস্থিতি থাকলেও গেটে ডিউটি পালন করতে দেখা যায়নি।

ভ্যাট কর্মকর্তারা শুধু অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। মাঝে মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে স্টলে স্টলে ভ্যাটের তদারকি অভিযান পরিচালনা করছেন। কোনো স্টল ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে সন্দেহ হলে খাতাপত্র জব্দ করে নিয়ে আসছেন। অথচ বিক্রিত মালামাল অনায়াসে গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চালান ছাড়াই। সেখানে ভ্যাটের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাখা হয়নি। অর্থাৎ বাণিজ্য মেলায় শুধু অনুমানের ওপর নির্ভর করে ভ্যাট আদায় চলছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্টল মালিকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় কয়েকটি কাটলারি প্রতিষ্ঠান শুধু নগদ টাকার বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে কোনো রশিদ বা ক্যাশ মেমো দেওয়া হচ্ছে না।

মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে থাই প্যাভিলিয়ন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্যাভিলিয়নটির মাঝ বরাবর ক্রেতা-দর্শণার্থীদের চলাচলের রাস্তা রাখা হয়েছে। এ রাস্তার দুপাশে রয়েছে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি স্টল।

এসব স্টল থেকে নারীদের বিভিন্ন পণ্য, শিশুদের খেলনা, শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে প্যাভিলিয়নটির কোনো স্টল ক্রেতাদের ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে এক শোপিস বিক্রেতা বলেন, শোপিস বিক্রির বিপরীতে ক্যাশ মেমো দেয়ার তো দরকার নেই। আমাদের পণ্যের মান ভালো তা ক্রেতারা জানেন। ক্রেতারাও আমাদের কাছে ক্যাশ মেমো চান না।

প্যাভিলিয়নটির এক স্টল থেকে গলার হার কেনা ফার্মগেটের হুমায়রা জান্নাত বলেন, আমি টাকা দিয়েছি, আমাকে হার দিয়েছে। কোনো ক্যাশ মেমো তো দেয়নি। আমিও চাইনি। ক্যাশ মেমো দিয়ে কী করবো? যে পণ্যটি চেয়েছি সেই পণ্যই তো দিয়েছে।

মেলায় দিল্লী প্যাভিলিয়ে ভ্যাটের দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রেতা জানান, আমরা মোটের উপর একটা ভ্যাট দিচ্ছি।

ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে, মেলায় ভ্যাট অফিসের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে কোনো স্টল কর ফাঁকি দিতে না পারে। মেলায় মোট ৫৮০টি স্টল রয়েছে এগুলো দতারকি করার লোকবল সংকটও রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, মেলার শুরু দিন থেকে (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ১০ লাখ টাকা বেশি।

মেলায় মাত্র গুটি কয়েক খাবার দোকান ও অন্যান্য স্টলে ইসিআর মেশিন থাকলেও বেশিরভাগই স্টলে ইসিআর মেশিন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর থেকে বাণিজ্য মেলার প্রত্যেকটি স্টলে ইসিআর মেশিন ব্যবহার করার ব্যাপারে কড়াকড়ি নজর দেওয়া হবে। যাতে মেলায় অংশ নিয়ে কেউ ভ্যাট ফাঁকি দিতেপারে না।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭