ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের সিদ্ধান্তে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকরা


প্রকাশ: 21/10/2022


Thumbnail

চট্টগ্রামে বিএনপির মহাসমাবেশে এলডিপির নেতা কর্নেল অলি আহমেদ যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কর্নেল অলি আহমেদ চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা। একসময় তিনি চট্টগ্রাম বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেলিফোনে কর্নেল অলি আহমেদকে জানান যে, এটি শুধুমাত্র বিএনপির সমাবেশ, অন্য কারো যোগদানের প্রয়োজনীয়তা নেই। এজন্য শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি বিএনপি থেকে চলে যাওয়া এলডিপি নেতা কর্নেল অলি আহমেদ। একই ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহে। আগামীকাল খুলনায় বিএনপির জনসভা। এই জনসভায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও না করে দেওয়া হয়েছে। আর এ সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। আর তার এই সিদ্ধান্তে  ক্ষুব্ধ বিএনপির শরিকরা। গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার পথ খুঁজছিল। এই লক্ষ্যে বিএনপি ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম দফায় বৈঠক করে। কিন্তু এই বৈঠকের মাঝপথেই বিএনপি প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই ধারাবাহিকতায় শেষ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে ১০ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের পর বিএনপির নিয়ন্ত্রণে দেশ চলে যাবে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। যদিও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবেনা, ওইদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু মুখে তিনি যাই বলুক না কেন, বিএনপির মধ্যে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে একটি চাপা উত্তেজনা রয়েছে। ওইদিন বিএনপি ঢাকা শহর অচল করে দিতে চায় এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর কি হবে না হবে সেটি পরের বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির একলা চল নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শরিকরা।

বিএনপি ১৯৯৮ সাল থেকে ৪ দলীয় জোট গঠন করেছিল। এই জোটের মূল দুটি দল ছিল বিএনপি এবং জামায়াত। তাদের নেতৃত্বে ২০০১ সালে ভূমিধ্বস বিজয় পায় বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ৪ দল আস্তে আস্তে সম্প্রসারিত করা হয় এবং ২০ দলীয় জোটে এটিকে রূপান্তরিত করা হয়। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারেই ২০০৯ এর পর থেকে বিএনপি বিভিন্ন রকম কর্মসূচী পালন করছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হয়। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া যখন শুরু হচ্ছিল সে সময় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। কিন্তু সে সময় বিএনপি কোনো অবস্থাতেই জামায়াতকে না ছাড়ার নীতি গ্রহণ করে। এ জন্য দলটি সমালোচিত হয়। ২০১৮ এর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ২০টি আসন ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির মোহভঙ্গ ঘটে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপির ওপর জামায়াত ছাড়ার চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপের প্রেক্ষিতেই বিএনপি প্রকাশ্যে এখন জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রক্ষা করছে। ২০ দলীয় জোটকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সংস্রব নেই এমন একটি বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতও বিএনপির সঙ্গে নেই বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে এবং জামায়াত বলেছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যার ফলে বিএনপি এখন নতুন মিত্র সন্ধান করছিল। 

নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে গিয়ে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। অনেকেই মনে করেছিল বিএনপি বোধয় নতুন জোট করছে। কিন্তু নতুন জোটের ব্যাপারে মাঝপথেই বিএনপি থেমে গেছে। তারেক জিয়া একা বিএনপিকে আন্দোলন করতে বলেছে। সেই একক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ঢাকায় ১৭টি পয়েন্টে সমাবেশ করেছে। এখন মহাসমাবেশ গুলো করছে। এগুলো কোথাতেও শরিকদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না এবং তাদেরকে ডাকাও হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ছোট ছোট দলগুলো যারা বিএনপির আশায় থেকেছিল, যারা আওয়ামী লীগের পতনের পর জাতীয় সরকার গঠন করা হবে এমন বার্তা দিচ্ছিল তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না, আ.স.ম আব্দুর রব, কর্নেল অলি আহমেদ, রেজা কিবরিয়াসহ বিভিন্ন শরিক দলের নেতারা এখন ক্রমশ বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে কিনা এ নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিএনপির পরবর্তী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭