ইনসাইড আর্টিকেল

নির্বাচন নাকি ব্যবসায়?


প্রকাশ: 22/10/2022


Thumbnail

গত কয়েকদিন ধরে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ভাইরাল খেলা চলছে। এক নেতা আজ ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছেন তো আরেকজন নেত্রী কাল। এই ভাইরাল হওয়ার পেছনের কারণ হল ভোট বাণিজ্য। ২০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা নিয়েও ভোটাররা ভোট দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সামশাদ রানু নামে এক নারী প্রার্থী। তিনি ফেসবুকে দীর্ঘ পোষ্টের মাধ্যমে তার অভিযোগ তুলে ধরেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্যপদে হেরে রফিকুল ইসলাম ওরফে সংগ্রাম নামের এক নেতা জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া টাকা ফেরত চেয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। ১৮ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে টাকা ফেরত চান রফিকুল, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। আবার ১৯ অক্টোবর টাকা নেওয়ার পরও ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বরগুনার জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এক ইউপি সদস্যকে মারধর করা হয়েছিল। 

এমনিতেও আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। তার উপর জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে থাকা এসব নেতাদের কান্ড নির্বাচন নিয়ে আরও সংশয়ের সৃষ্টি করবে বইকি। তাহলে আমরা কি ভাববো? নির্বাচন তাহলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেনা বরং এটি এখন বাণিজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে? নেতা-নেত্রীর ফেসবুক পোষ্ট দেখে জনগণ হয়তো তাই চিন্তা করবে। যদি নির্বাচনের আগেই জনপ্রতিনিধিরা এমন ভোট বাণিজ্য খুলে বসেন তাহলে এরা নির্বাচিত হলে কি করত, ভাবাই যায়। এই ছা-পোষা নেতারা হয়তো টাকা ঢেলেছেন, তাই হয়তো নির্বাচনে হেরে গায়ের ঝাল মেটাতে ফেসবুককে ব্যবহার করেছেন প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু তারা কি ভেবে দেখেছে তারা নিজেরাও কিন্তু সমান দোষের ভাগীদার। তারা কেন নির্বাচিত হওয়ার জন্য অর্থ দিলেন? একজন নেতাকে নির্বাচিত করবে জনগণ, জনগণ যাকে যোগ্য প্রার্থী ভাববে, তাকেই জনপ্রতিনিধি করবে,তাহলে এই অর্থ প্রদান করে নিজেকে নির্বাচিত করাটাও কি অপরাধের পর্যায়ে পরল না?

নির্বাচনের নামে ভোট বাণিজ্য করা এসব নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়না, তা বোধগম্য নয়। এমন অযাচিত কান্ডজ্ঞানহীন অনৈতিক কাজের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে দেশের জন্য কাজ করা অনেক রাজনৈতিক নেতার নির্বাচন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই যখন এ ধরণের খবর ছড়িয়ে পরে তখন জনগণের মনে প্রশ্ন উঠে। কেন নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য টাকা ঢালতে হয় এবং আসলেই আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা নিরপেক্ষ তা নিয়ে জনগণ দ্বিধায় ভোগে। ফলে  এই ধরণের বিক্ষিপ্ত ঘটনার রেষ পরে সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন গুলোতেও। 

তবে পৌরসভা নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বরাবরই এমন অভিযোগ উঠে। কারণ এই নির্বাচনগুলো হয় পরোক্ষ নির্বাচন। আর যেহেতু এই নির্বাচনগুলোতে সীমিত সংখ্যক ভোটার থাকে তাই সহজেই এই অপকর্মগুলো করতে পারে এসব ছা-পোষা নেতারা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এই নির্বাচন জনকল্যাণের জন্য হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সীমিত সংখ্যক ভোটার থাকায় এইসব নেতারা টাকাটাকে শক্ত ভাবে কাজে লাগানোর ব্যবসায় নামে। ফলে কলুষিত হয় আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন, কলুষিত হয় আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা।

ব্যবসা অর্থই টাকার বিনিময়ে কোন কিছু লেনদেনের মাধ্যম। আর যেহেতু নির্বাচনকে পুঁজি করে টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচা হয়, তাহলে এটাও তো একটি বাণিজ্যে রূপ নিয়ে নিলো। নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা এই বাণিজ্যে রূপ দিয়েছেন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা এখনি নেয়া উচিৎ। যেসকল ঘটনা গণমাধ্যমে আসছে সেগুলোর তদন্ত করা উচিৎ। মাঠ পর্যায়ে কারা এসব অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করা উচিৎ। আবার এসব অপকর্ম কোন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হচ্ছে কিনা, সেটির তদন্ত এবং বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন, সেই নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরণের ছোট নির্বাচনগুলোকে ইচ্ছাকৃত প্রশ্নবিদ্ধ  করা হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিৎ । সুষ্ঠ নির্বাচনকে কলুষিত করে তা প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি এটি বোঝাবার সময় হয়েছে। জনগণ চায় একজন দেশ সেবায় ব্রত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু দিনের পর দিন যদি এভাবে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে তাহলে জনগণ আস্থা হারাবে রাজনীতির প্রতি, জনপ্রতিনিধির প্রতি। টাকা দিয়ে কেনা ভোট বাণিজ্য বন্ধ হোক। এবং যারা এসবের পিছে কলকাঠি নাড়ছে তাদেরকেও পর্দার আড়াল থেকে বের করে আনা হোক এখনি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭