ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ কি ভুল করছে?


প্রকাশ: 22/10/2022


Thumbnail

আজ শেষ পর্যন্ত খুলনায় বিএনপির জনসভা হয়েছে। এর আগে বিএনপি চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহে জনসভা করেছে এবং সন্দেহ নেই এই জনসভাগুলো ভাল হয়েছে। বিশেষ করে অতীতে বিএনপি যে অবস্থায় ছিল, যেভাবে কর্মসূচি পালনে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিত সেখান থেকে তাদের একটা উত্তরণ ঘটেছে। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে, বিএনপির এই সমাবেশগুলো সফল হওয়ার পেছনে যতটা না তাদের নিজেদের অবদান, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের অবদান। কারণ, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু অতি উৎসাহী নেতা এমনভাবে পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে এই সমাবেশ গুলোর দিকে সাধারণ জনগণের দৃষ্টি গিয়েছে এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি ভুল করছে?

বিএনপি ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে মূলত ক্ষমতাচ্যুত। এই অবস্থায় বিএনপি তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটিতে অংশগ্রহণ করেছে, একটি বর্জন করেছে। দুটি নির্বাচনেই বিএনপির সীমাহীন ভরাডুবি ঘটেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন বাদ দেওয়া যাক। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি আসলে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এসময় বিএনপি প্রায় অস্তিত্ববিহীন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। এরপরও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ইমেইজ এবং বাংলাদেশে আওয়ামীবিরোধী একটি ভোটব্যাঙ্ক থাকার কারণে বিএনপি রাজনীতিতে টিকে থাকে। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে বিএনপির রাজনীতি একটা সংকটের মধ্যে পড়ে। এরপর জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নানা ভুল পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিল কৌশলী এবং অত্যন্ত সফল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পরও ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন। এসময় তিনি একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন করেছেন, অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপিকে গণভবনে চায়ের দাওয়াত করেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছেন। কিন্তু বিএনপি এসব প্রত্যাখ্যান করে নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এই সময় আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, সেই বিচক্ষণতা এখন অতি উৎসাহীদের কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার জনসভায় যেভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে সেটি অগ্রহণযোগ্য এবং অন্যায্য বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এই জনসভা যদি শেষপর্যন্ত সফল হতো তাহলে কি হতো? এই প্রশ্নটি উঠছে। আওয়ামী লীগ কি ভয় পেয়েছে নাকি আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহীরা ভুল পথে পরিচালিত করেছে। একটি রাজনৈতিক দল যদি জনসভা করে তাহলে সেই জনসভায় লোকসমাবেশ যতই হোক না কেন, তারা কর্মসূচি পালন করে শেষ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ তখন পরবর্তী একটা তারিখে বা ওই তারিখে অন্যত্র একটি জনসভা ডাকতেই পারি এবং সেই জনসভাতেও আওয়ামী লীগ তার চেয়ে বেশি লোকসমাগম করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে বিএনপির জনসভাকে বাধা দেওয়ার যে প্রবণতা, এই প্রবণতার ফলের বিএনপি উৎসাহ পাচ্ছে এবং বিএনপি চাঙ্গা হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।

বিভিন্ন মহল মনে করছে যে, আসলে আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতির কারণেই বিএনপি এখন উৎসাহিত হচ্ছে এবং বিএনপি'র জনসভাগুলোতে লোকসমাগম হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণভাবে যদি বিএনপির জনসভা গুলোকে বাধা না দেয়া হতো বা এনিয়ে উপেক্ষারনীতি অনুসরণ করা হতো তাহলে এই জনসভাগুলোতে শেষ পর্যন্ত যে লোকই হোক না কেন, সেটি রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলত না। কিন্তু এখন গত তিনদিন ধরে খুলনায় যা ঘটেছে সেই বাস্তবতায় এখন জনসভা অন্যরকম একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব পেয়েছে। আওয়ামী লীগ কেন বিএনপিকে টেনে তুলতে চাইছে, এর পিছনে কি রাজনৈতিক চিন্তা হচ্ছে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ হয়তো ভুল করছে। কারণ, বিএনপিকে এভাবে মোকাবেলা করতে গিয়ে আসলে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী করারই পরিকল্পনা নিচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭