ইনসাইড গ্রাউন্ড

শ্বাসরুদ্ধকর জয় ভারতের, রাজসিক প্রত্যাবর্তন ভিরাটের


প্রকাশ: 23/10/2022


Thumbnail

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা। ম্যাচের রঙ বদলেছে ক্ষণে ক্ষণে। চালকের আসনে কখনো ভারত, কখনো পাকিস্তান। ভারতের শুরুর দাপটের পর পাকিস্তানের দুর্দান্ত কামব্যাক। আবার ম্যাচ যখন পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে, তখন আবার ভারতের বাজিমাত। এইরকম দৃশ্যপটের সাক্ষী হলো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ৯০ হাজরের বেশি দর্শক। কানায় কানায় পরিপূর্ণ স্টেডিয়ামের দর্শকরা বাড়ি ফিরবেন এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে। তবে এদের কেউ উচ্ছসিত নিজ দলের জয়ে, কেউ ফিরবেন ভগ্ন হৃদয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত।

সুপার টুয়েলভের ম্যাচে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। গত বিশ্বকাপে এই পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটের হারের স্মৃতি এখনো তাজা। ম্যাচের শুরুতেই পাকিস্তানকে চেপে ধরে ভারত। উইকেটের সবুজ ঘাস ও কন্ডিশনের সুবিধা ব্যবহার করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন ভারতীয় বোলাররা। পেসারদের সামনে মুখ থুবড়ে পরে পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোহাম্মাদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আর্শদ্বীপ সিংয়ের প্রথম বলে আউট হন বাবর। রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আরেক ওপেনার রিজওয়ানকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন আর্শদ্বীপ। ৪ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রিজওয়ান।

তাদের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ। ধীর গতিতে রান তুললেও অক্ষর প্যাটেলের করা ১২তম ওভারে ৩ ছক্কা হাকিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান ইফতেখার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৭৬ রান। দলীয় ৯১ রানে শামির শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। খেলেন ৩৪ বলে ৫১ রানের ইনিংস।

ইফতেখারের বিদায়ের পর মাত্র ৭ রানের মধ্যে ৩ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় পাকিস্তান। ১৪তম ওভারে হায়দার আলী ও শাদাব খানের উইকেট তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। শান মাসুদ একপ্রান্তে থাকলেও বাকিরা সামিল হয়েছেন আসা যাওয়ার মিছিলে। ভারতীয় বোলারদের পেসে পরাস্থ হন মোহাম্মাদ নওয়াজ ও আসিফ আলী।

তবে শান মাসুদের ফিফটিতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় পাকিস্তান। ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া মাসুদ অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। ২০ ওভার শেষে জয়ের জন্য ভারতকে ১৬০ রানের টার্গেট দেয় পাকিস্তান। শেষ ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৯৯ রান। ভারতের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া ও আর্শ্বদীপ সিং। ১টি করে উইকেট পান ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মাদ শামি।

লক্ষ্য তাড়া করেতে নেমে শুরুটা ঠিক পরিকল্পনা মত হয়নি ভারতীয় দলের। পাকিস্তানের পর পাওয়ার প্লে'তে ধুঁকেছে ভারতও। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। পাকিস্তানি পেসারদের তোপে খোলস ছেড়ে বের হতে পারেন নি লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দলীয় ৭ রানে রাহুল ও ১০ রানে বিদায় নেন রোহিত। নিজের প্রথম ওভারে রাহুলকে বোল্ড করেন নাসিম শাহ। বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই ভারতীয় অধিনায়কের উইকেটটি তুলে নেন হারিস রউফ। ভিরাট কোহলির সাথে সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখছিলো ভারত। তবে আবারও আঘাত হারিসের। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফর্মের তুঙ্গে থাকা সূর্যকুমার যাদবকে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। দলের রান যখন ৩১, তখন রান আউটে কাঁটা পড়েন অক্ষর প্যাটেল। প্রথম ১০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাড়ায় ৪ উইকেটে ৪৫। এই সময়ে ৩২টি ডট বল করেন পাকিস্তানি বোলাররা।

ভিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা চালান। তাদের লড়াইয়ে নিভে যাওয়া আশার পালে জয়ের বাতাস লাগে।

হারিস রউফের করা ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে ২ ছয় মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ভিরাট কোহলি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিলো ১৬ রান। ৫ম উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৯৯ রান।

নাটকের তখনো অনেকটা বাকি। নওয়াজের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে ভাগ্য বিধাতা ভেবে রেখেছিলেন অন্যকিছু। তৃতীয় বলে নওয়াজের ফুলটসকে সীমানার বাইরে পাঠান ভিরাট কোহলি। বলের উচ্চতা কোমরের উপরের থাকায় ছয়ের সাথে নো-বল উপহার পায় ভারত। ফ্রী-হিটের বলটি সরাসরি ভিরাট কোহলির স্ট্যাম্পে আঘাত করে থার্ডম্যান অঞ্চলের দিকে চলে যায়। বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠানোর আগে ৩ রান নিয়ে সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখে ভারত। না, তখনো শেষ হয়নি গল্প। পরের বলে স্টাম্পিং এর ফাঁদে পড়ে আউট হন দিনেশ কার্তিক। শেষ বলে দরকার ১ রান। এই সমীকরণে শেষ হাসিটা হেসেছে ভারতই। ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো আরো একটি ক্রিকেটিয় ক্লাসিক।

এ ম্যাচে ভারতের জয়ের নায়ক ভিরাট কোহলি। তার মহাকাব্যিক ইনিংসেই প্রায় ছিটকে যাওয়া ম্যাচকে জয়ে রূপ দিলো ভারত। ৫৩ বলে ৮২ রান করে ভেঙেছেন নিজের রেকর্ডই। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটিই ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও তাই তারই প্রাপ্য। ম্যাচশেষে বাজে ফর্মের সময়ে সাথে থাকার জন্য ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেন নি ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭