ইনসাইড গ্রাউন্ড

ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারবে কি বাংলাদেশ?


প্রকাশ: 23/10/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ দলের গায়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে না পারার তকমাটা বেশ পুরনোই। অষ্টম বিশ্বকাপ খেলতে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা যখন তাসমান সাগর পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়, তখনও তাদের সঙ্গী এই পুরনো তকমা। চাঁদ-সূর্য যেমন নিয়ম মেনে তাদের আবর্তন সম্পন্ন করেন, তেমনি বাংলাদেশ দলও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ব্যর্থতার আবর্তন সম্পন্ন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। হঠাৎ কিছু ম্যাচে সফলতা আসলেও, ব্যর্থতার চক্রে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে থাকাকে ডাল-ভাতের মত স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করেছেন তারা।

কখনো অসহায় আত্মসমর্পণ, কখনো খানিকটা লড়াই কিংবা তীরে এসে তরী ডোবানো- বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গল্পটা এমনই। এক-দুই ম্যাচে তাদের লড়াই পরিবর্তনের আভাস দিলেও, পরের ম্যাচগুলোতে যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকেন ক্রিকেটাররা। মাঠে তাদের বাজে পারফরম্যান্স ভক্ত, সমর্থক, বিশ্লেষক কিংবা সমালোচকদের টি-টোয়েন্টি খেলতে না পারার স্লোগানকে আরও ভারী করে তোলে।

শুরুটা ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর। মোহাম্মাদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন তরুণ দলটি এ ফরম্যাটের দাপুটে দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চমক দেখায়। যেখানে শুরু, সেখানেই শেষ- বাংলাদেশ দলের অবস্থাও ঠিক তাই। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ঐ জয়ই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোন দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয় হয়েই রয়েছে। এরপর বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে আরও ৬টি বিশ্বকাপ। তবে বদলায়নি চিত্র। সময়ের সাথে সাথে মলিন ও বিবর্ণ হয়েছে আরও বেশি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৭ ম্যাচে। এদের ৬টিই আইসিসির সহযোগী দেশের সাথে বাছাইপর্বের খেলায়। হার ২৫টিতে। পরিত্যক্ত হয়েছে ১টি ম্যাচ। জয়ের হার ২১.৮৮ শতাংশ।

দরজায় কড়া নাড়ছে আরও একটি বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দল নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। ২০২১ বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচ খেলে টাইগাররা জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পরিবর্তন এসেছে দল ও কোচিং স্টাফে। এই সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। বাজে ফর্মের কারণে অধিনায়কত্ব হারানোর পর বিশ্বকাপ দলেও জায়গা পাননি বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা মাহমুদল্লাহ রিয়াদ। এতসব পরিবর্তন নতুন যুগের শুরুর আভাস দিলেও মাঠের খেলার তার ছাপ পড়েনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এক দল নিয়েই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলতে মাঠে নামবে সাকিব আল হাসানের দল। এর আগে কখনোই অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি বাংলাদেশের।

দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গার নাম ব্যাটিং। টপ অর্ডারের টানা ব্যর্থতা কপালের ভাজ বাড়িয়েছে সকলের। মিডল অর্ডারেও রয়ছে ফাঁকফোকর। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও আসেনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। দীর্ঘদিন নিজের ছায়া হয়ে ঘুরছেন দলের পেস বিভাগের কাণ্ডারি মোস্তাফিজুর রহমান।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক সাকিব আল হাসান। ১০৩ ম্যাচে ২ হাজার ১৯৯ রান এই অলরাউন্ডারের। দলের হয়ে সর্বাধিক অর্ধ শতকের রেকর্ডও তার দখলে। ১২২ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি। এই বিশ্বকাপে সফলতা পেতে সাকিবের ব্যাটিং-বোলিংয়ের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল টাইগাররা। আর বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রতিভা প্রমাণের সুযোগ থাকবে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারদের।

এখন পর্যন্ত টোয়েন্টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সফলতা সুপার এইটে খেলা। টি-–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট, সুপার টেন ও সুপার টুয়েলভ পর্বে ১৬ ম্যাচ খেলে জয়শূন্য থাকার লজ্জার রেকর্ডও রয়েছে বাংলাদেশের। সেই সাথে বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৩৮বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

এতকিছুর ভিড়ে আসন্ন বিশ্বকাপের আগে আরও একবার নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন সকলে। প্রত্যাশা ব্যর্থতার ঘোরাটোপ থেকে বেরিয়ে নতুন আলোয় লেখা হবে সফলতার গল্প।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭