ইনসাইড আর্টিকেল

ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বসবাস


প্রকাশ: 24/10/2022


Thumbnail

চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় 'আসানি' ১১ মে বাংলাদেশে আঘাত হানে এবং এই ফিচারটি লেখা পর্যন্ত আরেকটি ঘূর্নিঝড় বাংলাদেশের দ্বার-গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদশে বারবার কেন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে? চরম জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশ দেখছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবগুলোই আমাদের মতো উন্ননয়নশীল দেশগুলো ভোগ করে। সেক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বরাবরই চোখ কান তালা মেরে রেখেছে। উন্নত দেশে যে পরিমাণ কার্বন নির্গত হয়, তার প্রভাব বাংলাদেশকে ভুগতে হয়। কিন্তু এ নিয়ে উন্নত বিশ্বের ভাবনা নেই।

এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘ঘূর্ণিঝড়' শব্দটিই অতি পরিচিত হয়ে উঠছে। প্রতিবছর এদেশে আঘাত হানে ভয়ংকর প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড়। এছাড়া বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বলে এর প্রভাব আমরা বেশি দেখতে পাই । যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ ১৬৯৯ সাল থেকে মৃত্যুর সংখ্যার বিচারে বিশ্বের ৩৫টি সবচেয়ে ভয়ংকর মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা করেছে। এই তালিকার ২৬টি ঘূর্ণিঝড়েরই উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর। যার ১৯টিই বড় ধরনের ক্ষতি ঘটিয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে চিন্তাই করা যায় বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে থাকে। 

পৃথিবীজুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিই ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে নিয়মিত ভাবেই। সাধারণত বাংলাদেশে বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় মে মাসে। চলতি বছরের বড় প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় ছিল ‘আসানি’। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসেই আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ফলেই এইসব ঘূর্ণিঝড় হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও পুনরাবৃত্তির হার এবং একই সাথে ঝড়ের দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে।

ঘূর্ণিঝড় আমাদের দেশের জন্য আতঙ্কের নাম। ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে আতঙ্কিত থাকে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের মানুষ। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সব থেকে খারাপ প্রভাব দেখে উপকূল অঞ্চলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবের শিকার এই মানুষগুলো সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশের সব প্রলয়ঙ্ককারী ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড দেখলেই তা সহজে বোঝা যায়। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ আঘাতে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ উপকূল। প্রাণ হারায় তিন হাজরের বেশি মানুষ। জরের বেশি মানুষ মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ মানুষ। ২০০৯ সালে আঘাত হানা ‘আইলায়’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুভিটা হারায়। ২০১৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ প্রাণ হারান ১৭ জন।  ২০১৬ সালের ২১ মে পূর্ণিমায় ভরা জোয়ারে আঘাত হানে ‘রোয়ানু’। সেই ঝড়ে লাখ খানেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রামে মৃত্যু হয় ২৪ জনের। ২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ কেড়ে নেয় অন্তত ৯ জনের প্রাণ। তবে ফসলের ক্ষতি ছিল অনেক বেশি।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চরম। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, যার প্রভাব দেখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নিচু ও উপকূলীয় এলাকা বেশি বন্যা ও ঘূণির্ঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, আগামীতে এ ধরনের দূযোর্গ আরও শক্তি নিয়ে আসবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার  জোরদার করা উচিত আমাদের। ঘূর্নিঝড় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি আমাদেরও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশকে এ ধরণের প্রাকৃতিক দূযোর্গের হাত থেকে রক্ষা করতে সুন্দরবন সব সময় ঢাল হিসেবে কাজ করে। আমাদের সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শুরুতেই বলেছি বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খেসারত দিচ্ছে সেহেতু  আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একক কোন দেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সুতরাং সমাধান করতে হবে সবাইকে মিলে। যাতে বাংলাদেশের মত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতির মুখে না পড়ে, প্রাণহানি না দেখে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭