ইনসাইড আর্টিকেল

প্রতিবন্ধকতায় নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহন


প্রকাশ: 25/10/2022


Thumbnail

সাত মাস আগে এক সহকর্মীর বিয়ে হল। বেশ ধুমধাম করে বিয়েতে আমরা গেলাম, আনন্দ হলো অনেক। এরপর এক মাস পরে দেখলাম সহকর্মীটি চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলেন। বিদায় বেলায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চাকরিটা সে ছাড়ছে কেন। উত্তরে সে জানালো সংসারে মনোযোগ দিতে চায়, আর তাছাড়া শ্বশুর বাড়ি  থেকেও চাচ্ছেনা চাকরিটা সে নিয়মিত করুক, তাই সে চাকরিটা ছেড়েছে। তবে আমি অবাক হলাম সে এই আবদার মেনে নিয়েছে এবং চাকরিটা ছাড়ায় তাকে খুব একটা অনুতপ্তও মনে হল না।  কিন্তু এই মেয়েটি আমাদের সেই অফিসে বেশ ভালো বেতনেই চাকরি করতো এবং কাজের ক্ষেত্রেও সে ছিল দক্ষ।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে না। আবার দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে যোগদান করলেও নানা কারণে চাকরিতে তারা স্থায়ী হচ্ছে না। চাকরি ছাড়ার পেছনে অনেক সময় তাদের নিজের ইচ্ছা কাজ করে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক চাপ বাধ্য করে চাকরি থেকে অব্যহতি নিতে। ২০২১ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় ৮০ শতাংশ পুরুষ শ্রমবাজারে অংশ নেন কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ। আবার বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু সাক্ষরতার হারের সাথে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের তুলনা করলে দেখা যায় এই হার অনেক কম।

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন কম হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত নারীর কর্মক্ষেত্র এখন পর্যন্ত নারী বান্ধব হয়নি। নারীরা যেন কর্মক্ষেত্রে পরগাছা। কর্মক্ষেত্র নারী বান্ধব করার নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও নারীরা এখনো কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর শিকার হয়, বৈষম্যের শিকার হয়। এছাড়া এখনো সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হওয়ায় নারীর সাফল্য এখনো অনেক পুরুষ ভালো চোখে দেখেন না। যেটা কর্মক্ষেত্রে নারীকে নানা রকম মন্তব্য শুনতে বাধ্য করে, ফলে তারা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েও নারীকে প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়। অনেক সময় ছুটি চাইলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়, যা নারীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নারীতে নারীতেও বৈষম্য হয় চাকরি ক্ষেত্রে, প্রথমেই তাকে মূল্যায়ন করা হয় বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় নারী সহকর্মীরাই থাকেন যারা অন্য সহকর্মীকে সংসারে মন দেয়া, কিংবা বাচ্চার দিকে মনোযোগ দিতে বলেন। ফলে অনেকেই বিষন্নতায় ভুগেছেন, এমন নজিরও আছে। এছাড়া আছে সন্তান জন্মদানের পর পরিবার থেকে অসহযোগিতা। সন্তানের দায়িত্ব পালন শুধু মায়ের, সন্তান জন্মদানের পর সন্তানের দেখভাল করার দায়িত্ব শুধু মায়ের এমন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা তাদের বাধ্য করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে।

মেয়েদের মধ্যেও দেখেছি, অনেকেই বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে মূলত ভালো বিয়ে হওয়ার জন্য। তাই, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে আয়-উপার্জনের কোনো একটা ব্যবস্থা করার জন্য তেমন সিরিয়াসনেস আর লক্ষ করা যায় না। ইদানীং অবশ্য এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হচ্ছে।

শহরের দিকে নারীরা কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহন করলেও গ্রামের দিকের নারীরা কর্মক্ষেত্রে কম অংশগ্রহন করছে। এর পেছনের প্রধাণ দুটি কারণ হল বাল্যবিবাহ এবং পারিবারিক সমস্যা। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার কমার চেষ্টা করলেও এখনো লুকিয়ে বাল্য বিবাহ হচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী শুরুতেই ঝড়ে পরছে। এছাড়া পরিবার বা স্বামী যোগ্যতা থাকা সত্বেও চাকরি করতে দিচ্ছেন না। যেহেতু সামাজিকভাবেই নারীকে এ সমাজে দূর্বল করে রাখা হয় ফলে সংসার টিকিয়ে রাখার চাপে নারীরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও  কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেন না।

নিজ ইচ্ছায় কর্মসংস্থানে অংশগ্রহন করেন না অনেক নারী। অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে বড় করা হয় বড় হলে বিয়ে হবে এই মানসিকতা। এছাড়া সামাজিক ভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের নামে নারী পর্দা করতে হবে বলে অনেক নারীই কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন না। আবার অনেক নারী ছোটবেলা থেকেই নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন থাকেন না, ফলে তার ইচ্ছা থাকা সত্বেও পরিবারের কথা ভেবে চাকরিক্ষেত্রে অংশগ্রহন করেন না। 

মূলত  অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা  না থাকাই  কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন কমায়। কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। নারীরা যেন নির্বিঘ্নে বাইরে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে। এছাড়া  যাতায়াতের সুব্যবস্থা, সন্তান লালনপালনের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ  বাড়াতে হবে। এছাড়া নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষ হলে নারীরা নিজেদের কর্মসংস্থানও নিজেরা তৈরি করতে পারবে। এছাড়া কেন নারীরা ঝড়ে পরছে সে ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে গবেষণা করতে হবে। এছআমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা দেয় না। আবার এদেশে নারী শিক্ষার প্রতিও সব অভিভাবক সচেতন নয় ফলে যখন একজন নারী অদক্ষ ভাবে গড়ে উঠবে তখন এমনিতেও তিনি চাকরির বাজারে পিছিয়ে পরবেন। সুতরাং নারীর শিক্ষাদানের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনের ব্যপারটিও নজরে রাখতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭