ইনসাইড আর্টিকেল

চিনি নাকি চিরতার রস?


প্রকাশ: 26/10/2022


Thumbnail

চিনিকে এখন চিনির মতো মনে হয়না। চিনি যেন  চিরতার রসের মতোই তেতো জনসাধারণের কাছে। বর্তমানে চিনির দাম যেভাবে আকাশ ছুঁয়েছে তাতে অভিযোগের পাহাড় বাড়ছে জনগণের মনে । বাজারে চিনি এখন বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪ টাকা আর প্যাকেটজাত ৮৯ টাকা। নির্ধারিত দামে চিনি সরবরাহ না দেয়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার। কিন্তু বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে চিনি। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই এখন সেই চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা ১০০ টাকায়।

প্রশ্ন হচ্ছে চিনির দাম বাড়ছে কেন? জনগনকে জিম্মি করে ব্যাবসায়ীরা নিজের ইচ্ছামত দাম বাড়ানো কমানো করছে।  চিনির দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে বলা যায় এর পেছনে কাজ করে বড় একটি সিন্ডিকেট। আবার বাংলাদেশের বড় দুটি চিনি পরিশোধনকারী দুই শিল্পগ্রুপ সিটি ও ফ্রেশ উৎপাদন কমানোর পেছনে গ্যাস সংকটকে দায়ী করছে। আর এই উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে তারা একটা দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে। আবার সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাষ্যমতে ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়। আর এবার চলমান সংকটের কারণে গত এক বছরে ১০ লাখ টন চিনি কম আমদানি হয়েছে, ফলে বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। যা মূল্য বৃদ্ধির কারণ। আবার দোকানিরা বলছে তারা ডিলারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনির সরবরাহও পাচ্ছেনা ফলে তারা চিনি বাড়তি দামে বিক্রি করছে।   

তবে বাজারের দাম বৃদ্ধির পেছনে ক্রেতারা মনে করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি মজুদ করছেন। এর প্রমানো পাওয়া যাচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়। যেমন ২৪ অক্টোবর রাজশাহীর সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ১৩৪ বস্তা চিনির মজুদ উদ্ধার করে। আবার ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় মেঘনা সুগার রিফাইনারির ৩ হাজার মেট্রিক টন সক্ষমতা থাকলেও ২০ অক্টোবর তারা ১ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদনের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশ কম উৎপাদন করেছে। এবং আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারির সক্ষমতা ৭০০ মেট্রিক  টন সক্ষমতা হলেও ২২ অক্টোবর ৬৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে। এস আলম সুগার রিফাইনারি প্রতিদিন ৮০০-৯০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করছে। তাদের উৎপাদিত চিনির ৫০ কেজির বস্তায় ক্রয় মূল্য লেখা থাকলেও বাজারে তা পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করছে এই চিনি পরিশোধনাগার গুলো। আর বাজারে যে সংকটগুলোর কথা বলছে ব্যবসায়ীরা তাতেও এই সংকটে  ৯০ টাকার চিনি রাতারাতি ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হওয়াটাও যুক্তিযুক্ত নয়। 

চিনির দাম কারা বাড়াচ্ছে এবং কেন বার বার সরকার নির্ধারিত দাম বেঁধে দেয়া সত্বেও সেটি মানা হচ্ছেনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। চিনি পরিশোধনকারী কারখানায় গ্যাস আর বিদ্যুতের সংকটের কারণে  উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করছে, সেটিও আমলে নেয়া উচিৎ।এইসব শিল্প খাতগুলোতে গ্যাসের এবং বিদ্যুতের যাতে চাপ ঠিক থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। এইসব শিল্লপকারখানায় যাতে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস উৎপাদন ব্যাঘাত না ঘটায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া বাজারে চিনির মজুদ হচ্ছে কিনা এর জন্য ভোক্তা অধিকার কেন্দ্র নানা অভিযান পরিচালনা করছে, এর বাইরেও গোয়েন্দা নজরদারি জোড়দার করা উচিৎ। এছাড়া মূল্য নির্ধারণকারীদের নিয়মিত সভা করতেও হবে। যাতে জনসাধারণ একটা নির্দিষ্ট দামের ধারণা পায় এবনহ সঠিক মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারে। আর একটি অভিযোগ ব্যবসায়ীরা করে থাকে, সেটি হল ডিলারের অভাব। তাই এলাকাভিত্তিক ডিলার নির্ধারণ করতে হবে এবং বড় বড় পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের চাহিদামত সরাসরি মিল থেকে চিনি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

নিত্যপ্রইয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এখন আকাশ ছোয়া।  সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধোগতিতে এমনিতেও চাপে আছে। তেল চালের দাম বৃদ্ধির পর এখন চিনির দামেও বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আপাতত বাজারে সরবরাহ সংকটের মধ্যেই চিনির মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়েছে। তাদের এই আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহে নতুন দাম নির্ধারণ হতে পারে বলে তারা জানিয়েছে। এখন  চিনির দামে মিষ্টতা থাকে নাকি চিনি চিরতার রসে পরিণত হয়  এটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭