প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলোতে সরকারি বিজ্ঞাপনের উৎসব


প্রকাশ: 26/10/2022


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন তিনি প্রথম আলো পড়েন না এবং গণভবনে রাখেন না। এই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে বিরাজনীতিকরণকে উস্কে দেয়া এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একতরফা মিথ্যাচারের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের পুরনো। প্রধানমন্ত্রী কোনরকম রাখ-ঢাক ছাড়াই এ বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, তার সামরিক উপদেষ্টাসহ অনেকেই আছেন যারা প্রথম আলোর বিদ্বেষের স্বীকার হয়ে প্রথম আলোকে বর্জন করেছেন। সরকার প্রধানের যখন এরকম অবস্থান, ঠিক তখন প্রথম আলোতে সরকারি বিজ্ঞাপনের উৎসব চলছে।

আজকের পত্রিকার কথাই ধরা যাক। প্রথম পৃষ্ঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোতে। ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধ বিষয়ক স্বাস্থ্যবার্তা শিরোনামে এই বিজ্ঞাপনটি এক-চতুর্থাংশ পাতা জুড়ে দৃশ্যমান আছে। এই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথেই রোজিনার ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিলো। সেই দ্বন্দ্বের জের হিসেবে সাংবাদিক রোজিনা নিগৃহিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। এখনো তার এক্রেডিশন কার্ড আটকে রাখা হয়েছে। ‘অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট' এ তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রথম আলো আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোপনে কোন আতাত করে তাদের মীমাংসা করেছে কি না সেটি আর জানা যায়নি। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন সমালোচনা প্রথম আলোয় দেখা যায় না।। বরং প্রথম আলো এই বিজ্ঞাপন পেয়েই গদ্গদ। তার চেয়েও মজার ব্যাপার হলো যে সাংবাদিক রোজিনার বিষয় নিয়েও প্রথম আলো এখন আর কোন কথা-বার্তা বলে না। প্রথম আলোর এই ব্যাপারে এক ধরণের নীরবতা ইঙ্গিত করে যে প্রথম আলো আসলে শুধু ব্যবসায় বোঝে, নীতি-আদর্শ সব তার কাছে ফাঁকা বুলি।

রোজিনার ঘটনার কি হলো বা এই মামলার বিচার শেষ হবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে প্রথম আলোর যেমন কোনো উদ্বেগ নেই, তেমনি এই নিয়ে কোন আগ্রহ নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও। এটি যদি সত্যি সত্যি একটি অপরাধ হয়ে থাকে তার আইনি বিচার হওয়া উচিত। আর যদি এটি অন্য কোনো উদ্দেশে হয়ে থাকে তবে সেটিরও সুরাহা হওয়া উচিত।

প্রথম আলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপন একটি নয়। সপ্তম পৃষ্ঠায় আবার দেখা যায় অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার- এএমসির বিজ্ঞাপন। যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। যার লাইন ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ আবু জাহেদ। তার পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞাপনটি প্রথম আলোয় দেয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এছাড়া সপ্তম পাতাতেই সোনালী ব্যাংকেরও একটি বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। নানারকম সঙ্কটে জর্জরিত সোনালী ব্যাংক এখন কেন প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদেরকে কৃতার্থ মনে করলো সেই উত্তরটি তারাই দিতে পারবে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন প্রথম আলোতে ঝুঁকেছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির এবং তিনি একসময় প্রথম আলোর আক্রোশের লক্ষ্যবস্তুতে ছিলেন। আজকের পত্রিকার ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় এবং ১৩ পৃষ্ঠার পুরোটা জুড়েই প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিজ্ঞাপন রয়েছে। যমুনা ব্যাংক সরকারি দুইজন মন্ত্রীর মালিকানাধীন একটি ব্যাংক। সেই ব্যাংকেরও বিজ্ঞাপন পাওয়া যাচ্ছে প্রথম আলোর ৬ নম্বর পৃষ্ঠায়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞাপন দিয়েছে প্রথম আলোর ১৩তম পৃষ্ঠায়।  একই দিনে অন্য সবগুলো পত্রিকা ঘেটে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে প্রথম আলোর সমকক্ষ বিজ্ঞাপন কেউ পায়নি। যদিও ডিএফপি’র হিসাব মতে প্রথম আলো দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। সেখানে শুধু প্রথম আলোতেই এই বিজ্ঞাপন ছাপানোর কারণ কি, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো সরকারের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে। সরকারের চুলচেরা নানা সমালোচনায় প্রতিদিন প্রথম আলো মুখর থাকে। অনলাইনে এবং প্রিন্ট ভার্সনে প্রথম আলোর এই তীব্র সমালোচনা থেকে রক্ষার জন্য কেউ কেউ কি প্রথম আলোকে এখন কাছে টানার পরিকল্পনা নিয়েছেন? যদি সেটা হয়ে থাকে তাহলে তা কি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন এবং অভিপ্রায়ের লঙ্ঘন নয়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭