ইনসাইড বাংলাদেশ

সড়কে দুর্ঘটনা থামবে কবে?


প্রকাশ: 26/10/2022


Thumbnail

দেশে সড়ক-মহাসড়ক প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। সড়ক যোগাযোগের বিস্তৃত এই নেটওয়ার্কে প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। অগণিত সড়ক দুর্ঘটনা মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের করে দিচ্ছে পঙ্গু। সড়ক দুর্ঘটনা একজন ব্যক্তি বা তার পরিবারের জন্য সারাজীবনের অসহনীয় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে নিহত এবং আহত হওয়া কর্মক্ষম মানুষের পরিবারের জীবনযাত্রা দুর্দশা ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে পরিণত হয়। এমনকি সরকারি-বেসরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এইসকল পরিবারগুলোর পরবর্তীতে কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। কেবল আহত-নিহত হওয়ার পরিসংখ্যানই প্রকাশিত হয়। 

প্রতিটি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায় অসংখ্য পরিবার! যেমন গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এবং ওই গাড়িতে থাকা নবদম্পতি গুরুতর আহত হন। আপনজন হারিয়ে সেই নবদম্পতি বর্তমানে কিভাবে চলছে, সেই সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই কারো। এরকম অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজ জানা নেই আমাদের।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন । এছাড়াও আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। 

এছাড়াও চলতি বছর শুধুমাত্র অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে ৩২২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের এবং আহত হয়েছেন আরও ২৪৪ জন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য রোডে’র প্রতিবেদনে এ তথ্য গুলো উঠে আসে। প্রতিবেদনটি করা হয় ১ থেকে ৭ অক্টোবর বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে। সংগঠনটি বলছে, শুধুমাত্র ৭ অক্টোবর (শুক্রবার) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বেসরকারি এইসকল সংগঠনগুলো মূলত গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তৈরি করে। তবে এ সবই সেকেন্ডারি তথ্য, পূর্ণাঙ্গ তথ্য বা হিসাব নয়। এগুলো ছাড়াও গণমাধ্যমের নজরের বাইরেও প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে থাকে।
 
ক্রমবর্ধমান এই সকল দুর্ঘটনা কেন ঘটছে, তার কারণ সবারই কমবেশি জানা। সড়কে চালকদের বেপরোয়া আচরণ, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের দুর্দশা, ধীরগতির অবৈধ যানবাহন ইত্যাদি নানা কারণ চিহ্নিত হয়ে আছে। তবে বেপরোয়া যাত্রী ও রাস্তায় চলাচলকারী জনগণের অসচেতনতা নিয়ে খুব একটা কথা বলা হয়না। 

যেমন- ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার না হওয়া, হেলমেট পরিধান না করা, অসতর্ক ভাবে রাস্তা পার হওয়া, গাড়ি চলাকালীন সময়ে ফোনে কথা বলা, বেপরোয়া ভাবে বাস ও লেগুনায় উঠা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভার টেকিং, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পাবলিক বাসের ড্রাইভার রা বেশি ট্রিপের আশায় বিরতিহীন ভাবে গাড়ি চালিয়ে এক পর্যায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যার পরিনাম হেমায়েতপুর এর মত ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা।

পত্রিকার পাতা, টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গায় রোজ চোখে পড়ে সড়ক দূর্ঘটনার খবর। সড়ক দুর্ঘটনা এখন আর দুর্ঘটনা নয় বরং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে। 

একটু সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা বদলে দিতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান গতি। এবং প্রিয়জন হারানো থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার পরিবার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭