প্রকাশ: 27/10/2022
বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ৭০.৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ নিয়ে দেশে
দারিদ্র্যের শীর্ষে অবস্থান করছে কুড়িগ্রাম জেলা।
রংপুর
বিভাগের এই জেলাটিতে পাকিস্তান আমলেও ৯৮ ভাগ মানুষই ছিল গরিব। স্বাধীনতার পরও প্রায়
প্রতি বছরই মঙ্গাপীড়িত হয়ে এক বেলা, আধবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে এই জেলার
অসংখ্য মানুষকে। তবে নানামুখী প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলে এখান থেকে মঙ্গা ঘুচে গেছে
দুই দশক আগেই। তবুও দারিদ্র্যের সঙ্গে কুড়িগ্রামবাসীর লড়াই থামেনি।
কুড়িগ্রাম
জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলার আয়তন প্রায় ২
হাজার ২৫৫ দশমিক ২৯ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ
প্রদেশের কুচবিহার জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম প্রদেশের ধুবড়ী
ও মেঘালয় রাজ্যের তুরা পার্বত্য জেলা, পশ্চিমে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলা।
জেলার
৯টি উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার সঙ্গেই ভারতের ৩ রাজ্যের সীমান্ত প্রায় ২৭৮ দশমিক ২৮ কিলোমিটার।
এর মধ্যে প্রায় ৩২ কিলোমিটার সীমানা জুড়ে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই।
কুড়িগ্রাম
জেলা সদরের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে রৌমারী এবং ৩টি
ইউনিয়ন নিয়ে চর রাজিবপুর উপজেলা গঠিত।
বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, চর রাজিবপুরই দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা।
এই উপজেলার প্রায় ৭৯.৮ ভাগ মানুষই হতদরিদ্র। এমনকি কুড়িগ্রামের সবচেয়ে কম দরিদ্র ফুলবাড়ি
উপজেলায়ও ৬৯ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র জীবন-যাপন করে।
কুড়িগ্রামে গরিব মানুষের এমন ছড়াছড়ির জন্য প্রধানত নদ-নদীর ভাঙন আর কর্মসংস্থানের অভাবকেই দায়ী করা হয়। সারা বছরই নদ-নদীর ভাঙনে গৃহহীন হয় এই জেলার কয়েক হাজার পরিবার। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বেকার থাকতে হয় এখানকার মানুষদের। এর মধ্যে নারী শ্রমিকরা কোনো কাজ পায় না বললেই চলে। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। কিন্তু সারা বছরে তাদের ফসল হয় মাত্র একটি। তাই বছরে বড়জোর ৩-৪ মাস তাদের হাতে কাজ থাকে।
অন্যদিকে
এই জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ভারত অংশে বাঁধ দেয়ার কারণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে
চর পড়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে প্রচণ্ড খরা দেখা দেয় সেসব অঞ্চলে। নদীটির নাব্যতা না থাকায়
বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় বন্যা। এ ছাড়া প্রচণ্ড শীতল আবহাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ
সামলাতে হয় এই জনপদকে।
অন্যান্য
জেলার তুলনায় কুড়িগ্রামে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়নে
বিনিয়োগ পিছিয়ে থাকায় এর সুফল প্রত্যন্ত জনপদে পৌঁছায় না। ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পায়
খুবই কম।
বিভিন্ন
জরিপ অনুযায়ী, এ জেলার একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় বড়জোর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বর্তমানে
এই আয়ে একটি পরিবারের পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করাও সম্ভব হয় না। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা
ও বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদার খরচ মেটাতেও হিমশিম খেতে হয় জেলাবাসীকে।
জেলার
দারিদ্র্যের বিষয়ে চিলমারী, রৌমারী, চর-রাজিবপুর নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি
ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের
রোল মডেল। আমাদের দেশে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু
নির্মাণ অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামবাসীকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। দেশের উন্নয়নে
মেগা প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্র সেতু প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্য
থেকে উত্তরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে কুড়িগ্রাম।’
কুড়িগ্রামে
ইতোমধ্যে স্থলবন্দর, নৌবন্দর, ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন চলাচল বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হলেও এই জেলা থেকে
দারিদ্র্য অনেকাংশে কমে যাবে বলেও দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭