ইনসাইড থট

সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে


প্রকাশ: 27/10/2022


Thumbnail

বাংলাদেশে সম্প্রতিকালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, জ্বালানি সংকট, ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কিছু মহল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু দেশের স্বার্থেই মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করা সমীচীন নয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের আয়ও বেড়েছে। বর্তমানে একজন দিনমজুর/কৃষিশ্রমিকের আয় কয়েকগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সহ অন্যান্য ভাতাদি ও সুযোগ সুবিধাও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন আয়, তেমন ব্যয়। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছেনা, এমন ঘটনা কিন্তু নাই। আমার পৈতৃক নিবাস জুড়াইনে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের বসবাস। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সেখানে কোন হা-হুতাশ নেই। স্থানীয় বাজারে পণ্যের কমতি নাই। মহল্লার অলিগলিতে শাকসবজি ও দেশী-বিদেশী ফলমূলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পশরা সাজিয়ে ভ্যানগাড়িতে ফেরিওয়ালারা ঘুরে ঘুরে বিক্রয় করে। দিনশেষে দোকানীর সব পণ্য বিক্রয়ও হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আছে বিধায় দোকানীর সাজানো মালামাল সব বিক্রয় হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সবই স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তাহলে, সমস্যা কোথায়? সমস্যা রাজনৈতিক। কিছু কিছু মহল বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য অস্থীতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এটা ঠিক। বর্তমানে প্রতি কেজি সাধারণ চালের দাম ৬০ টাকা, সবজির মূল্য ৮০ টাকা সত্য। কিন্তু কেউ না খেয়ে থাকে এমন খবর আমরা দেখি না। বিএনপির আমলে প্রতি কেজি চালের দাম ছিল ৩০ টাকা। একজন দিনমজুরের আয় ছিল ৪.৫ থেকে ৫ কেজি চাল ক্রয়মূল্যের সমপরিমাণ অর্থাৎ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। কি নিদারুণ কষ্টে সে সময় তারা দিন কাটিয়েছে, তা কিন্তু সবাই জানে। কিন্তু বর্তমানে একজন দিনমজুর/শ্রমিক দৈনিক আয় করে বর্তমান বাজারে ১০ কেজি সাদ চাল ক্রয়ের সমপরিমাণ মূল্য অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, একজন রিকশাচালকের আয় এর চেয়েও বেশি। উপার্জিত এ আয় দিয়ে যে কেউই তার প্রয়োজন মোতাবেক নির্বিঘ্নে সংসার চালাতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে, মাছ-মাংস, ফলমূল কম হলেও কিনতে পারে। বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান মূল্য অনুযায়ী কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন, এতে করে কৃষকরাও খুবই খুশি। যদি কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের দাম না পেত তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হত।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় ইউরোপিয়ান দেশগুলো খাদ্য গ্রহণে সাশ্রয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মানীতে জ্বালানি সংকটের প্রতিবাদে লক্ষ লোকের মিছিল হয়েছে। ব্রিটেনে গত ১৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত The Guardian website এ Social policy editor Patrick Butler ব্রিটেনের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার নিবন্ধের শিরোনামে বলেছেন,  "Millions forced to skip meals as UK cost of living crisis deepens.

More people – including children – going hungry than during first weeks of Covid lockdown".

ব্রিটেনসহ বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী বসবাস করে। সে সকল দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা হওয়ায় আমাদের রেমিটেন্স কমেছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশেও সাময়িক সমস্যা হচ্ছে, আর এই সমস্যা আমরা সবাই মিলেই মোকাবেলা করবো।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমরা অপেক্ষাকৃত অনেক ভাল আছি। সত্যিকার অর্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আমলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বাড়ছে বলেই মানুষের বেশি দামে জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা বাড়ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কৃষিবিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে ফসলের ফলন বাড়িয়েছে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। শীতকালীন ফসল পেয়াজ সংকট মোকাবেলায় গ্রীষ্মকালীন পেয়াজের চাষাবাদ শুরু করেছে। ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সমাধানে সূর্যমুখী সহ বিভিন্ন জাতের তৈলবীজ উৎপাদনের কর্মসুচি গ্রহণ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বসতবাড়ীর আশেপাশে এবং ছাদবাগানে শাক-সবজির আবাদ করে নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ফসলের ফলন বাড়াতে কৃষককে প্রযুক্তি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও মৎস্য প্রানীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদসমূহে নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সত্যিকার অর্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আমলে বৈশ্বিক কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও পাশাপাশি মানুষের আয় বাড়ায় বেশি দামে জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা বাড়ছে। বাংলাদেশে ফসলের ফলন বেড়েছে বিধায় খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। এছাড়া যে কোন পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে সংকটাপন্ন দেশে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

সুতরাং সচেতন নাগরিকদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। অকারণে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭