ইনসাইড গ্রাউন্ড

শেষ বলের সমীকরণে পাকিস্তানকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ইতিহাস


প্রকাশ: 27/10/2022


Thumbnail

একেই বলে তরী এসে তরী ডোবা। ম্যাচের ভাগ্য দুলছিলো পেন্ডলামের মতো। ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগোতে থাকা পাকিস্তান সিকান্দার রাজার এক স্পেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায়। তবে লক্ষ্যটা যে খুব বেশি না। মাত্র ১৩১। জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ৩৭ রান। হাতে আছে ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টির যুগে এটি মোটেই কোন বড় লক্ষ্য নয়। হেসে খেলেই এই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা যায়। সে পথেই ছিলো পাকিস্তান। তবে ম্যাচের রঙ বদলে দিলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। তাদের বোলিং ও ফিল্ডিং দিয়ে এই ছোট লক্ষ্যকেও বানিয়ে ফেললেন দূরের বাতিঘর।

ক্রিজে রয়েছন মোহাম্মাদ নওয়াজ ও ওয়াসিম। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ১১ রান। পার্থে খেলা দেখতে আসা দুই দলের সমর্থকদের মাঝেও বইছে ঝড়ো বাতাস। তবে কঠিন এই সমীকরণ মিলিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করলো জিম্বাবুয়েই। পাকিস্তানকে ১ রানে হারিয়ে লিখলো নতুন ইতিহাস। আর টানা দ্বিতীয় হারে আরো খাদের কিনারায় চলে গেলো পাকিস্তান। এবারের বিশ্বকাপকে তাই ঘটন-অঘটন পটিয়সী বলাই যায়। নিখাদ এক ক্রিকেটিয় লড়াই দর্শকদের দিলো উপভোগের রসদ।

জিম্বাবুয়ের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না দুই ওপেনার। তাদের গতি আর বাউন্সের কাছে ভুগছিলেন টি-টোয়েন্টির দুই সেরা ব্যাটসম্যান। ফলস্বরূপ ১৩ রানে বাবর আজম ও ২৩ রানে সাজঘরে রিজওয়ান। ভারত ম্যাচের পর আরো একবার দলের হাল ধরার চেষ্টা চালান শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ। তবে এ যাত্রায় গল্পটা নিজের মত করে লিখতে পারলেন না ইফতিখার। ক্রিজে আসার ৩ ওভারের মধ্যেই ফেরত যান ডাগআউটে। আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান এ ম্যাচে করেন মাত্র ৫ রান। ৮ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে তার দলও।

তবে শান মাসুদ ছিলেন ভরসার প্রতীক হয়ে। শাদাব খানকে নিয়ে সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। তবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো রাজার ঝড়ে। ১৪তম ওভারে বল করতে এসে তুলে নেন শাদাবের উইকেট। কিছু বুঝে উঠার আগে ঠিক তার পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন হায়দার আলীকে। মরিয়া পাকিস্তান রিভিউ নিলেও কোন লাভ হয়নি।

এক ওভার পর আবার যখন তার হাতে বল তুলে দিলেন ক্রেইগ আরভিন। সে ওভারের প্রথম বলেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন সিকান্দার রাজা। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করলেন পাকিস্তানের আশার মধ্যমণি শান মাসুদকে। ম্যাচে নিয়ে আসলেন টান টান উত্তেজনা।

এদিন পার্থে পাকিস্তান সমর্থকরাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন, তবে যে অল্প কিছু জিম্বাবুইয়ান সমর্থক এসে ছিলেন মাঠে তাদের চিৎকারে ঢাকা পড়ে গেলো পাকিস্তানিদের স্বর। তখনো নিভু নিভু করে জ্বলছিলো বারবদের আশার আলো। ভরসা মোহাম্মাদ নওয়াজ। তার সামনে সুযোগ খলনায়ক থেকে নায়ক হওয়ার। আগের ম্যাচে এই নওয়াজের ওভারেই যে ১৬ রান করে জয় কেড়ে নিয়েছিলো ভারত। তবে আশা জিঁইয়ে রাখলেও, নায়ক হতে পারলেন না নওয়াজ। ব্রাড ইভান্সের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে আরভিনের তালুবন্দী হলে নিভে যায় পাকিস্তানের জয়ের ক্ষীণ আলোটিও। শেষ বলে ৩ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে রান আউট শাহিন আফ্রিদি। ৮ উইকেটে ১২৯ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।

আর তাতে উল্লাসে মেতে উঠার উপলক্ষ্য পায় জিম্বাবুয়ে। আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে না খেলা দলটি প্রথমবারের মত মূলপর্বে উঠে হারিয়ে দিলো পূর্ণশক্তির পাকিস্তানকে। দাবিদার হয়ে উঠলো কৃতিত্বেরও। এ ম্যাচে তারা যে লড়েছে সমানে সমানে। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে খেলার গতিপথ বদলে দেয়া সিকান্দার রাজা হন ম্যাচ সেরা

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে আসে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের শুরুটাও হয় বেশ ভাল। প্রতিপক্ষের বোলারদের আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও ওয়েসলি মাদভেরে। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪২ রান। তবে এক বলের ব্যবধানে দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরলে প্রথম ধাক্কা খায় আফ্রিকার দলটি। 

শন উইলিয়ামস ও মিলটন শুমবা ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। ৬৪ রানে শাদাব খানের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন শুমবা। একাই দলকে টেনে নেন উইলিয়ামস। তবে আজ ব্যাট হাতে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি সিকান্দার রাজা। দলীয় রান যখন ৯৫ তখন শাদাব খানের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন উইলিয়ামস। পরের বলেই রানের খাতা খোলার আগে রেগিস চাকাভাকে আউট করে পাকিস্তানকে পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন এই লেগস্পিনার। 

সেই রেশ না কাটতেই ১৫তম ওভারে টানা দুই বলে রাজা ও জংউইকে নিজের শিকারে পরিণত করেন মোহাম্মাদ ওয়াসিম। ৪ উইকেটে ৯৫ থেকে স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ না করেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। ধসে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। ৮ উইকেটে জিম্বাবুয়ে পায় ১৩০ রানের সংগ্রহ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন শন উইলিয়ামস।

এ ম্যাচেও বল হাতে ব্যর্থ হয়েছেন ইনজুরি থেকে ফেরা শাহিন আফ্রিদি। ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন মোহাম্মাদ ওয়াসিম। ৩টি উইকেট পান শাদাব খান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭