এডিটর’স মাইন্ড

৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টাকে নিয়ে আওয়ামী লীগে ক্ষোভ


প্রকাশ: 28/10/2022


Thumbnail

আজ বিকেল চারটায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। এই বৈঠকে অনেকগুলো নীতিনির্ধারণী এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বৈঠকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রীর কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্বহীনতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এবং বৈঠকের আগে পরে কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় এ সমস্ত ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। শুধু আওয়ামী লীগের আজকের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক নয়, গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফোরামে এই পাঁচ মন্ত্রীকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা এবং নিন্দার ঝড় চলছে। তারা মনে করছে যে, বর্তমান সরকার যে সংকটে পড়েছে তার জন্য এই ৫ জন মন্ত্রীর ব্যর্থতা অনেকাংশে দায়ী। যে সমস্ত মন্ত্রীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন-

১. অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। দেশে যখন অর্থনৈতিক সংকট, ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং নানা রকম অর্থনৈতিক সমস্যা তীব্র হচ্ছে তখন অর্থমন্ত্রী এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলছেন, ব্যাপারটা এমন  "রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।" এই অবস্থা চলতে পারে না। আওয়ামী লীগের অন্য একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন যে, সাবেক অর্থমন্ত্রীরা যেভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সময় দিতেন এবং দেশের অর্থনীতি সামলাতেন তাঁর ধারে-কাছেও নেই অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী যদি অসুস্থ থাকেন তাহলে তিনি অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন বা তিনি সড়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু সেটি না করে দায়িত্ব পালন করে সরকারের সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে যদি এরকম উদাসীন থাকেন তাহলে সেটি তার জন্য শুধু ক্ষতিকর নয়, দলের জন্য এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পিছনে অর্থমন্ত্রীর উদাসীনতাকে দায়ী করছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই।

২. বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি: আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও আজ বেশ কয়েকজন কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা মন্ত্রীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, সরকারের বর্তমান মেয়াদে প্রায় চার বছর সময় দ্রব্যমূল্যের বাজার একটা নৈরাজ্য চলছে। কখনো পেঁয়াজের দাম, কখনো কাঁচা মরিচের দাম, কখনো চিনির দাম, কখনো চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সীমাহীন ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতাই নয়, আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন যে, বাণিজ্যমন্ত্রী মাঝে মাঝে মানুষের সাথে প্রহসন করেছেন। তাঁর কিছু বক্তব্য জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে বলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন।

৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা: আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহীকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হরহামেশাই হচ্ছে, প্রতিনিয়তই হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটের জন্য জ্বালানি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, জ্বালানি উপদেষ্টার বিরুদ্ধে যে বিভিন্ন রকম অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন তাই আজকে বিদ্যুৎখাতে সর্বনাশের মূল কারণ।

৪. বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা মনে করছেন যে, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন এবং যেভাবে কথাবার্তা বলছেন তাতে তিনি শুধু হাস্যকর হচ্ছেন না, আওয়ামী লীগকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। তিনি একের পর এক কথা বলছেন এবং সেই কথাগুলো কোনটাই শেষ পর্যন্ত পূরণ করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে তার কথাবার্তা এখন জনবিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

৫. পররাষ্ট্রমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, 'ভারতকে বলেছি যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে' কিংবা 'বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে' জাতীয় বক্তব্যগুলো দিয়ে ড. মোমেন প্রমাণ করেছেন যে, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন এবং তিনি আওয়ামী লীগের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, সেদিনও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্বন্ধে এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন যা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষা হওয়া উচিত কূটনীতিক। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী অকূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকেই একটি সংকটের মধ্যে ফেলছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭