ইনসাইড আর্টিকেল

সপ্তপর্ণী ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত সাতক্ষীরা


প্রকাশ: 29/10/2022


Thumbnail

হেমন্ত ঋতুর শেষার্ধে ও শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাতিয়ান(ছাতিম) ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আগোলঝাড়া গ্রাম। বিকালের সূর্য যখন গোধূলিতে, তখন থেকেই যেন একটু একটু করে ছড়াতে থাকে মায়াবী এ ঘ্রাণ।

শীতের আগে ফোটা সর্বশেষ এই ছাতিম ফুলের গাছটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আগোলঝাড়া গ্রামের পিচঢালা রাস্তার পাশে। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত্র পর্যন্ত এই চির সবুজ বৃক্ষের ঘ্রাণ আহরণ করতে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ পথচারীরা গাছটির আশে পাশে। শীতের আগমনী নিয়ে আসা এ বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাতিম ফুলের গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। চিরসবুজ এই বৃক্ষে সাদা ফুলে পুরো গাছ ঢেকে আছে।

ছাতিম ফুলেল তথ্য, ছাতিম এপোক্যানাসেই গোত্রের উদ্ভিদ। সারাবিশ্বে এর প্রায় ৪০-৬০টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বড় বড় যে ছাতিম গাছ দেখা যায় সেটির বৈজ্ঞানিক নাম আলস্টোনিডা পন্ডিত।

ছাতিম গাছের পত্রটি যৌগিক পত্র। এর বৃন্তের গোড়ায় পাঁচ থেকে আট-নয়টি পর্যন্ত পত্রক থাকে। তবে সাধারণত এতে সাতটি পত্রক থাকায় সংস্কৃত ভাষায় একে সপ্তপর্ণ বা সপ্তপর্ণী উদ্ভিদ বলে। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাতিম গাছের কাঠকে বলা হয় ‘হোয়াইট চিজ উড’ বা শ্বেত নমনীয় কাঠ। ছাতিম গাছকে ইংরেজিতে ডেভিল’স ট্রি বলে। নামটি বাংলা করলে দাঁড়ায় শয়তানের গাছ। এ শয়তান শব্দটি অঞ্চলভেদে বিকৃত হয়ে বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এটিকে ছয়তাইন্যা গাছ কিংবা ছাতিয়ান, ছাইত্তান, ছাইত্তান্না গাছ নামে ডাকা হয়।গাছটির তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। এ গাছের ফুল ও ফল বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বানর-হনুমানরা খায়। কাঠেরও তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। জ্বালানি, হালকা আসবাবপত্র, লেখাপড়ার ব্ল্যাকবোর্ড, দিয়াশলাইয়ের বাক্স প্রভৃতি তৈরিতে ছাতিম গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য: এ গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটি বহু শাখা বিশিষ্ট। এর ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর। কাঠের রং সাদা। এর কাঠ বেশ নরম। এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। একই মূলাবর্তে ৪-৭টা পর্যন্ত পাতা থাকে। পাতাগুলো ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। চওড়া হয় ২-৪ সেন্টিমিটার। ছাতিম পাতা চামড়ার মতো পুরু। এর বোঁটা ০.২৫-০.৬০ সেন্টিমিটার হয়। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর থাকে।

ওষুধি গুণ: ছাতিমের কষ অনেকে ওষুধরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। ছাতিম গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়ে। দীর্ঘস্থায়ী অতিসার এবং আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় আগোলঝাড়া গ্রামে ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসা পথচারী আল আমিন ও শেখ হাবিবুর রহমানবলেন, এলাকায় এই ফুলকে ‘ছাতনি ফুল’ বলে খুব মিষ্টি গন্ধ মন ভরে যাই বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে পর থেকে মিষ্টি গন্ধে এলাকায় ছড়াতে শুরু করে। আমরা সহ পথচারীরা এই ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ নিতে এসেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই হাতিম গাছ গুলো এক সময় বাংলাদেশে জুড়ে থাকলেও এখন সেটি বিপন্ন হয়ে গেছে।

তালা উপজেলা ওয়াইল্ড লাইফ সেভ কাউন্সিল (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদ) সভাপতি সাংবাদিক এসএম হাসান আলী বাচ্চু,সমন্বয়কারী সাংবাদিক বিএম বাবলুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ফয়সাল হোসেন জানান, আমাদের সংগঠন মূলত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও শিকার হতে প্রাণীদের বাঁচাতে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। তবে এই সব প্রাণী গুলো একটি অংশ বসবাস করে গাছে। তাছাড়া গাছের গুরত্বও অপরিসীম। ধীর ধীরে ছাতিম গাছের মতন সকল গাছ বিপন্ন হয়ে গেলে বিপাকে পরবো।

তারা আরও বলেন, ছাতিম গাছটির বাণিজ্যিক কোন মূল্য নেই বলে নার্সারিতেও ছাতিম গাছের চারা পাওয়া যায় না।ছাতিমকে কেউ তাদের বাগানে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে লাগায় না। অযত্নে অবহেলায় গাছটি বেড়ে ওঠে। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় গাছটি রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭