ইনসাইড থট

বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় নীরবতা বজায় রাখুন


প্রকাশ: 30/10/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবু জাফর সালেহ, দর্শন বিভাগ, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ফেসবুকে একটি আকুতি- তিনি নীরবতা চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুনির চৌধুরী ভবনে থাকেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল এর উল্টো দিকে এই বাড়িটিতে ৫০ জন শিক্ষক থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি বিবেচনা করে একেবারেই রাস্তার সঙ্গে ভবনটি নির্মাণ করেছেন জানিনা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভবন নির্মাণ যেমন আজ কষ্টের কারণ তেমনি মেট্রো রেল।  যেখানে শিক্ষা, প্রার্থনা চলে, যেখানে রোগী থাকে সেখানে আমাদের সমাজ নীরবতা বজায় রাখার নৈতিক আদেশ দিয়ে থাকে।  কিন্তু হতভাগা জাতি আমরা।  

আমাদের হাসপাতালের পাশ দেয় জোরে জোরে হর্ন চাপতে চাপতে ড্রাইভার মহাসুখে গাড়ি চালান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১শে  হল, বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল একেবারেই অত্যন্ত ব্যস্ত সড়কের পাশে। নতুন সুফিয়া কামাল হল একইভাবে শব্দদূষণে শিক্ষার্থীরা হাহাকার করে। কিন্তু কেন এভাবে অত্যাচার? কেন আমরা শিক্ষার পরিবেশ দিতে পারছিনা তা কি কেউই ভেবে দেখছেন? এভাবে আর কতকাল চলবে ধাতব যন্ত্রের চিৎকার আর হর্নের অত্যাচার? শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা কি মানুষ নন? তাদের কি ঘুমোবার প্রয়োজন হয় না ? 

আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেও একই লঙ্কা কান্ড।ভাসানী হলের পাশ দিয়ে কিংবা কলা ভবন, রেজিস্ট্রার অফিস, উপাচার্যের বাসভবনের পাশ দিয়ে চিৎকার আর চিৎকার তিনচাকার অটো রিক্সার। শিক্ষার জন্য যে পরিবেশ দরকার তা আমাদের সমাজের মানুষ যেন ভুলে গেছে। তারা ভুলে গেছে মানবিক মূল্যবোধ। আর তাই শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা এক অসহনীয় জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে? এভাবেই কি আমাদের দেশ চলবে? কোনো দিন কি আমাদের হুশ হবে না? আমরা কি তবে সবসময় অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত হবো? আজকাল রিকশা চালকও যাত্রীদের একহাত দেখে নেয়। রোগী নিয়ে এম্বুলেন্স চিৎকার করে। সেগুলো আমাদের কানে বাজে না। আমরা নির্বিকার হয়ে দেখি! এম্বুলেন্সটাকে একটু পথ করে দেই না।  একদিন হয়তো আপনার মা কিংবা সন্তানকে ঐভাবে এম্বুলেন্স করে হাসপাতালে যাওয়া লাগতে পারে। সেদিন যদি সকলেই আজকের মতো আচরণ করে। কেমন লাগবে আপনার? পথের মাঝেই আপনার সন্তান কিংবা আপনার মা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়বে। সেদিন কি তবে আপনার হুশ হবে?

আমাদের বোধ বিবেক শুকিয়ে কিংবা মরে গেছে। আমাদের রাজনীতিবিদরা আবার বিরাট বিরাট জনসমাবেশ করবার প্রতিযোগিতা করছেন। ক্ষমতায় থাকা আর ক্ষমতায় যাবার প্রতিযোগিতা এভাবে যদি চলে তবে জনগণের কষ্ট লাঘব হওয়ার পরিবর্তে আরও বাড়বে। রাজনীতি যদি হয় জনসেবা তবে কেন জনদুর্ভোগের কর্মসূচি?

আজ জাহাঙ্গীরনগর যাবার পথে দেখলাম প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট। মানুষ হেটে আসছে যানজটে আটকে থেকে। এবং এই যানজটের কারণ যেমন জনসভা তেমনি খুলনা রংপুর বরিশালের জনগণ আছে ভোগান্তিতে। সেখানে চলছে রাজনীতির নামে ভোগান্তির খেলা। এই খেলা আগুন নিয়ে খেলা- দেশের সর্বনাশের খেলা জনগণ কিন্তু রুখে দেয়ার ক্ষমতা রাখে! সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য সবাই একটু নীরবতা খুঁজছে। আসুন একটু কষ্ট করে নীরবতা বজায় রাখুন জাতির স্বার্থে!

রাতের বেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় রাত ১২-১ টা পর্যন্ত আড্ডা চলছে। এবং যারা আড্ডা দিচ্ছেন তারা বহিরাগত।  সরকার অফিস সময় কমিয়ে দিয়েছেন- কিন্তু আড্ডা কমেনি। ফলে শিক্ষার পরিবেশ হুমকিতে। তেমনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই অবস্থা বিরাজ করছে। নিশুতি রাতে একজন পোশাক নির্মাতা কর্মী ঘরে ফিরছেন। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে ঘুমোতেও পারেন না। আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম মেডিকেল কলেজ একেবারেই ব্যস্ত সড়কের পাশে। সুতরাং দয়া করে  করে শব্দ দূষণ থেকে শিক্ষাকে বাঁচান। আসুন আমরা সুনাগরিকের পরিচয় দেই- হাসপাতাল, শিক্ষাঙ্গন, আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকি। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তবে তাকে শক্ত করে দাঁড়াতে দিন। সরকারের অগ্রণী ভূমিকা এখানে একান্তভাবে কাম্য।

গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এখন ক্ষুব্দ। সেখানে অটো রিকশার শব্দদূষণ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরাও অনেককাংশে দায়ী।  হলগুলোতে গেলে অসংখ্য মটর সাইকেল। তাদের দেয়া হর্ন শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। একবার ভাবুন আপনার পড়বার সময় কেউ শব্দ করছে। আপনি কি তা মেনে নেবেন?
 
এক রিপোর্টে দেখছিলাম- আমাদের ট্রাফিক পুলিশও শব্দদূষণের শিকার। আসুন আমার সকলে মিলে সুন্দর জীবন যাপনের জন্য শব্দদূষণ থেকে নিবৃত হই।

আজকাল রেস্টুরেন্টে গেলেও শান্তি নেই। সেখানে আমরা অনেকেই চিৎকার করে কথা বলি। আমাদের সৌজন্যতা বোধ কি তবে হারিয়ে যাবে? আমরা কি তবে ফিরে যাবো অসভ্য বর্বর যুগে! আমাদের চিৎকারে ঘুমন্ত শিশু ভয়ে কেঁদে উঠে।  আমাদের চিৎকারে আমাদের স্ত্রীরা, মায়েরা, শিশুরা, বাসার কাজের লোক ভীত। আমাদের এই অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় নিজের মাঝে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার বোধ জাগানো এবং সেই বোধ থেকে যেন আমাদের সকলের মাঝে ভালো কাজের বোধ জেগে উঠে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭