ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ কি এবার সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক পাচ্ছে?


প্রকাশ: 30/10/2022


Thumbnail

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এবার আওয়ামী লীগ একদিনেই কাউন্সিল অধিবেশন করছে। কাউন্সিলকে ঘিরে নানা রকম জল্পনা কল্পনা এবং আলাপ-আলোচনায় জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক আড্ডাগুলো। আর এই আলাপ-আলোচনায় একটি বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। তা হলো কে হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এত আকাশচুম্বী যে তার কোনো বিকল্প নিয়ে কেউ ভাবতেও রাজি না, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেও আগ্রহী নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন যে, একজন কাউন্সিলরও যদি তাকে না চায় তিনি সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগে এমন যে এরকমটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই কাউন্সিলের সব আলো সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, সেটিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সামনে নির্বাচন, দলের ভেতর অন্তঃকলহ-বিভক্তি প্রবল আকার ধারণ করছে, বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছেন, চেইন অব কমান্ড রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। এরকম অবস্থায় এমন একজন নেতৃত্ব দরকার যিনি পুরো দলটিকে আবার এক সুতোয় গাঁথবেন, ঐক্যবদ্ধ করবেন। আর এ জন্যই আওয়ামী লীগে একজন সাধারণ সম্পাদক প্রয়োজন যিনি সার্বক্ষণিক ভাবে দলের দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি মন্ত্রী-এমপি থাকবেন না।

গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এবং দলকে আলাদা করার একটি নীরব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আর এই নীরব উদ্যোগের অংশ হিসেবেই তিনি যারা মন্ত্রী থাকছেন পারতপক্ষে তাদেরকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখছেন না। কয়েকজন এখানে বিরল ভাগ্যবান ব্যতিক্রম রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। তবে এবার এই প্রবণতাও সংকুচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, খুব অবাক হবার কিছু নেই যদি শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একজন সার্বক্ষণিক নেতা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতের রাজনীতিতে এটি এখন খুব জনপ্রিয় একটি প্রবণতা এবং এই প্রবণতার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেউই দলের মন্ত্রিত্বে থাকেন না এবং পুরোপুরি দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন যে, আওয়ামী লীগ এখন একটি বিশাল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী তাদের নানা রকম চাহিদা এবং বিভিন্ন রকম ইস্যু রয়েছে। এ কারণে যিনি সাধারণ সম্পাদক হবেন তিনি যদি একদিকে মন্ত্রিত্ব পরিচালনা করেন, অন্যদিকে দল পরিচালনা করেন সেটি তার জন্য প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আবার পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজ ইত্যাদি দেখাশোনা করার পর আবার দলীয় সাংগঠনিক বিষয়ে সবকিছু দেখাশোনা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। পাশাপাশি একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সারা দেশে যে সাংগঠনিক তৎপরতা তাতে সাধারণ সম্পাদকের সার্বক্ষণিক নজরদারি প্রয়োজন হয়। সেটি একজন সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদকের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। আর এই বিবেচনাগুলো এবার সামনে আসছে। যদি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয় তাহলে সেই দৌড়ে অবশ্যই এগিয়ে আসবেন এখন যারা মন্ত্রী-এমপি নন এমন ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে অনেকে বলছেন, এর বাইরে যদি কেউ মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে যদি সরাসরি দল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চান সেক্ষেত্রে তিনিও সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে এবার এমন একজন সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার ভাবনাটি প্রবল যিনি সবসময় দলের জন্য নিবেদিত থাকবেন এবং দলের বাইরে অন্য কিছু করবেন না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭