ইনসাইড আর্টিকেল

ভূতদের সন্ধ্যে "হ্যালোইন"


প্রকাশ: 31/10/2022


Thumbnail

মুখে রং, অদ্ভুতুরে পোশাক এবং ভূতের আকৃতি নিয়ে নিজেকে সাজানো যে কোন উৎসব হতে পারে তা "হ্যালোইন এলেই বোঝা যায়। নানান অদ্ভুতুরে জিনিস দিয়ে ভূত সেজে, ঘর সাজিয়ে এই উৎসব পালিত হয়। একসময় এই উৎসব শুধুমাত্র পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তার তুজ্ঞে থাকলেও এখন সারা বিশ্বেই এই উৎসবটি মানুষ পালন করে বেশ আগ্রহ নিয়ে,নানা রঙ্গে নানা ঢংয়ে।

"হ্যালোইন" বা "হ্যালোউইন" শব্দটির উৎপত্তি ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। "হ্যালোইন" শব্দের অর্থ "শোধিত সন্ধ্যা" বা "পবিত্র সন্ধ্যা। আইরিশ, যুক্তরাজ্য, ওয়েলশ সম্প্রদায়ের লোকেরা ধারণা করে ৩১শে অক্টোবর মৃত্যুর দেবতা সব মৃত আত্মকে ডাক দেয়। আবার লোককাহিনী থেকে বর্ণিত আছে যে,  সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা ৩১শে অক্টোবর রাত্রিতে জীবিতদের বিশ্বে আসে আগামী বছরের নতুন দেহ নেওয়ার জন্য। এত সব  ভৌতিক মীথের মাঝখানে কিন্তু সেই ভৌতিক লোকগল্প মানুষ ভুলেই গেছে,  বরং  এখন এই উৎসব ভয়ের থেকে  হয়ে উঠেছে মজার একটি উৎসব।

"হ্যালোইন  পশ্চিমা বিশ্বে বেশি জনপ্রিয়। তবে হ্যাঁ, শুরুর দিকে আমেরিকাতেও  হ্যালোইন পালিত হতো না। কিন্তু স্কটিশ ও আইরিশরা যখন আমেরিকায় প্রবেশ করতে থাকল, তখন এর প্রচলন হলো ব্যাপকভাবে। ধারণা করা হয় ১৯ শতকে আমেরিকায় এই উৎসবটি  পালন করা হতো শুধুমাত্র অভিবাসীদের মাঝে কিন্তু বিশ শতকের প্রথমদিকে এসে ভূতের রাজ্যে সরাসরি পা দিয়ে ফেলে  মার্কিন সমাজ, শুরু হয় হ্যালোইন পালন। তবে ১৯৫০  সালের দিকে হ্যালোইন পালনে কিছু নির্দিষ্টতা বেধে দেয় কর্তিপক্ষ, কারন ছিল সে সময় এই উৎসব ঘিরে অরাজকতা এবং অনেক  অনৈতিক কাজ সংগঠিত হত।

এবার প্রশ্ন আসতে পারে "হ্যালোইনে কেন অদ্ভুত পোশাক পরা হয় তা নিয়ে। এই অদ্ভুত পোশাক পরার পেছনে আবারো আছে আরেকটা লোকগল্প। লোকগল্প থেকে জানা যায় "হ্যালোইনের  দিনে মৃত আত্মারা সুযোগ পায় প্রতিশোধ নেয়ার। জীবিত থাকা অবস্থায় যারা তার সাথে অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি দেয়ার। ফলে অদ্ভুত পোশাক পরে ভূত সেজে বসে থাকে জীবিত ব্যক্তিরা, যাতে মৃত আত্মারা তাদের চিনতে না পারে। আর এর মধ্যে দিয়ে "হ্যালোইনে যুক্ত হয় অদ্ভুত পোশাক পরে উৎসবটি পালন করার। এছাড়া "হ্যালোইনের আরেকটি  মজার অংশ হছে "ট্রিকস অর ট্রিট" । ছোটবাচ্চাদের কাছে এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়। কারন এই "ট্রিকস অর ট্রিতে" পাওয়া যায় অনেক অনেক চকলেট। অদ্ভুত পোশাক পরে বাচ্চারা ঝুরি নিয়ে হাজির হয় প্রতিবেশীদের দরজায়। "ট্রিকস অর ট্রিট" দিয়ে বুঝান হয়  যে, হয় চকলেট দিতে হবে নয়তো ট্রিকস করা হবে তার সাথে। বেশ মজার ছলে করা এই ইভেন্টটি তাই বাচ্চাদের কাছে অসম্ভব প্রিয়।অদ্ভুত সব কস্টিউম পরে বাচ্চারা তাই হইহুল্লোড় করে ঝুড়ি হাতে ঘুরতে থাকে প্রতিবেশিদের দরজায়, আর সংগ্রহ করে প্রতিবেশিদের দেয়া চকলেট।

হ্যালোইনের আরেকটি মজার বিষয় হলো কুমড়ো খোদাই করা। কুমড়োতে চোখ মুখ নাক কেটে ভেতরে রাখা হয় মোমবাতি। এর পেছনের লৌকিক গল্প হলো হ্যালুইনের দিনে আকাশে ঘুরে বেড়ায় হ্যালুইন ডাইনি, যে মানুষের ক্ষতি করে। আর যেহেতু অক্টোবরে কৃষকরা পাকা ফসল ঘরে তোলে তাই ডাইনি যদি ফসলের গন্ধ্যে ঘরে আসে তাই কুমড়োকে প্রতিনিধিত্ব করতে মৃত পূর্বপুরুষদের নামে মোম জ্বালিয়ে কুমড়ো খোদাই করে রাখা হয়। এছাড়া কুমড়োকে সমৃদ্ধি, বৃদ্ধি এবং প্রাচুর্যের প্রতীক বলে থাকে।

এখন বিশ্ব বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষ সহজেই তাদের চিন্তা-ভাবনা,সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি এক দেশের সাথে আরেক দেশে প্রদান করতে পারে। ফলে বাংলাদেশেও এখন "হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়। তবে এটা ঠিক, "হ্যালোইন  বাংলার সংস্কৃতির সাথে জড়িত নয় বলে এর প্রচলন বাংলাদেশে খুব বেশি নেই, তবে হ্যা, বাংলাদেশের অভিজাত অঞ্চলগুলোতে এর বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যায়।এছাড়া মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টগুলোও সাজে "হ্যালোইনের সাজে। আবার বাংলাদেশের কিছু কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেও বাচ্চাদের মজা দেয়ার জন্য ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এই উৎসব পালন করা হয়।

"হ্যালোইন এখন ক্রমশ বেশ জনপ্রিয় একটি উৎসবে পরিণত হচ্ছে। আজ ৩১ অক্টোবর ভূতেদের সন্ধ্যে। এই মজার উৎসবটিতে নেচে গেয়ে উৎযাপন করবে অনেকেই।  আর এই উৎসবে আদৌ কোন ভূত এসে  মানুষের সাথে উৎসব পালনে যোগ দেয় কিনা কে জানে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭