ইনসাইড পলিটিক্স

হ্যাটট্রিকের জন্য মরিয়া কাদের


প্রকাশ: 31/10/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগ তার কাউন্সিল অধিবেশনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এবার প্রধান আকর্ষণ হলো সাধারণ সম্পাদক পদটি। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করার পরই কর্মচঞ্চলে ভরপুর দেখা যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরকে। ওবায়দুল কাদের শুক্রবারের পর থেকেই কর্মমূখর, দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন, বিরোধী দলের প্রতি টিকা-টিপ্পনী করছেন। এমনকি বিরোধী দলের ৭ জন সদস্য সংসদ থেকে চলে চলে গেলে কি হবে এ প্রশ্ন করে এক ধরনের কৌতুক অনুভবও করছেন। হঠাৎ করে ওবায়দুল কাদের রাজনীতিতে এতো সরব এবং সচল হলেন কেন এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন চলছে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অন্যতম দাবিদার ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের যদি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তাহলে পরে এটি আওয়ামী লীগের ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি হবে। আওয়ামী লীগে অতীতে ৩ বার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ঘটনা বিরল। ওবায়দুল কাদের দুই দফা সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি কতটুকু কার্যকর ছিলেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে শারীরিক অসুস্থতা, করোনা পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে তিনি প্রেস কনফারেন্স এবং লিখিত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, সাধারণ সম্পাদকের দরজা যেভাবে উন্মুক্ত থাকা উচিত, নেতাকর্মীরা যেভাবে অবাধে সাধারণ সম্পাদকের কাছে যেতে পারেন সেই জায়গা থেকে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান অনেক দূরে।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জনবান্ধব সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয় আব্দুল জলিলকে। অব্দুল জলিল আওয়ামী লীগ বিরোধী দল থাকা অবস্থায় এক কঠিন সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি কর্মীদের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে দেখভাল করা, ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় সার্বক্ষনিকভাবেই তৎপর ছিলেন আব্দুল জলিল। ওয়ান ইলেভেনের ঝড়ে আব্দুল জলিল বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন এবং এই সময়ে তার রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগে উপেক্ষিত এবং মোটামুটি অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে ছিলেন। এ সময়ে সৈয়দ আশরাফ প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সৈয়দ আশরাফ ছিলেন এক ধরনের প্রচার বিমুখ এবং অন্তর্মুখী মানুষ। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে খুব একটা সাক্ষাৎ দিতেন না, আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী ছাড়া যেতেন না এবং দুই-একটা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার বাইরে তেমন কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন না। কিন্তু তার দৃঢ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক সততা ছিলো প্রশ্নাতীত। যখন দুই-একটি কথা তিনি বলতেন সে কথাগুলো সাধারণ মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করতো যার একটি আলাদা ইমেজ তৈরি হয়েছিলো। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন পরিচ্ছন্ন, সৎ ব্যক্তিত্ববান রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। 

সৈয়দ আশরাফের পর ওবায়দুল কাদের প্রথম দফায় সাধারণ সম্পাদক হয়েই নিজেকে একজন জনবান্ধব নেতায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা, সব বিষয়ে নেতাকর্মীদের সাথে নজরদারি রাখা, সারাদেশের খোঁজ খবর নেওয়া ইত্যাদি কাজে তিনি শুরুতে প্রশংসিত হয়েছিলেন। যদিও তার মেজাজ, আচার-আচরণ,  ইত্যাদি নিয়ে দুই-একটা ঘটনা ঘটেছিলো। তবে অনেকেই এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মনে করতে চায়। কিন্তু অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে তিনি নিজেকে সংকুচিত করে ফেলেন আর করোনার পর তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব তৈরি হয়। অনেকের অভিযোগ ওবায়দুল কাদেরকে ফোনে পাওয়া যায়না, তিনি ফোন ধরেন না। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করা যায় কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাথে সাক্ষাৎ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে এ ধরনের অভিযোগ ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠরা একেবারেই নাকচ করে দেন। তিনি বলেন যে, ওবায়দুল কাদের সার্বক্ষনিকভাবেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এখন এরকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তার কাউন্সিল অধিবেশন করছে। যেখানে কেউ কেউ মনে করছে নির্বাচনে আগে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনে যাওয়া উচিত নয়, ওবায়দুল কাদেরের এ মূহুর্তে কোনো বিকল্প নেই। এমন ভাবনা থেকেই ওবায়দুল কাদেরকে আরেকবার দলের সাধারণ সম্পাদক রাখার একটি নীরব প্রচেষ্টা কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে। যারা এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত তারা অনেকেই প্রভাবশালী। আর এ কারণেই ওবায়দুল কাদের অনেকটা ফুরফুরে। দলীয় কার্যালয়ে তিনি নিজেকে চনমনেভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাটট্রিক করতে পারবেন কাদের?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭