ইনসাইড পলিটিক্স

জাসদ আছে, জাসদ নেই


প্রকাশ: 31/10/2022


Thumbnail

আজ ৩১ শে অক্টোবর। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করাই ছিল জাসদের প্রধান কাজ। জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, লুটতরাজ এই ছিল জাসদের রাজনীতি। জাসদের মূলমন্ত্র ছিল ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’। কিন্তু ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ আড়ালে গণবাহিনীর বীভৎসতা এবং সরকার উৎখাতের জন্য সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগের এক বিভ্রান্ত কৌশল গ্রহণ করেছিল জাসদ। জাসদ মনে করেছিল এভাবেই ক্ষমতায় আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে অস্থিতিশীল এবং দুর্বল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিল জাসদ। অনেকেরই ধারণা পচাঁত্তরের ১৫ ই আগস্টের যে ষড়যন্ত্র তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাসদের জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতির একটি বড় ভূমিকা ছিল। পঁচাত্তরের পনের আগস্টের পর জাসদের মধ্যে কোন কোন নেতাদের আত্মপ্রসাদ আত্মতৃপ্তি দেখা যায়। অনেকেই বঙ্গবন্ধুর নিশৃংস নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে জাসদের বিজয় হিসেবে অভিহিত করার চেষ্টা করেন। এমনকি জাসদের অন্যতম তাত্ত্বিক নেতা কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত তাহের বঙ্গবন্ধুর লাশ বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার মতন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাসদ ক্ষমতায় যেতে পারেনি। বরং আরও নতুনভাবে নিষ্পেষিত হয়েছে। তখনই জাসদের বোধহয় ঘটে। এই সময়ে পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের তথাকথিত অভ্যুত্থানের পর জাসদের নেতা কর্নেল তাহেরকে জিয়াউর রহমান গ্রেফতার করে এবং প্রহসনের মামলায় তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ শুধু নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একজন পঙ্গু ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো বীভৎসতা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এসময় জাসদের ওপর স্টীম লোলার চালান জিয়া। তখনই জাসদের একাংশের মোহভঙ্গ ঘটে। এরপর জাসদ ইতিহাস ক্ষয়িষ্ণু  অধ্যায়ে পরিণত হতে থাকে। একের পর এক জাসদ বিভক্ত হয়। কখনো শাজাহান সিরাজ এর নেতৃত্বে জাসদ, কখনো আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ। এই মুহূর্তে জাসদের তিনটি ভগ্নাংশ রয়েছে। একটি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে। একটি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নেতৃত্বে। অন্যটি অন্যটি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে। কিন্তু কোন জাসদেরই কোন গণ ভিত্তি নেই এবং নেই জনসম্পৃক্ততা। বরং জাসদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে কোনরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। অন্য আরেকটি অংশ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেও কোন সুফল পায়নি। বরং আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ওই জাসদটি একটি বক্তৃতা বিবৃতি নামসর্বস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের পরিণত হয়েছে। 

যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় জাসদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের শেষ ধারা এখন জাসদের এই তিনটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই তিন নেতাসহ যারা ওই সময় কার নেতৃত্ব যুগের অবসান ঘটার পর জাসদ থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনো জাসদ আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন। কাগজে-কলমে জাসদ আছে। জাসদের নেতা হাসানুল হক ইনু জাতীয় নেতার পরিচিতি পেয়েছেন। একই অবস্থা আ স ম আব্দুর রব এর ক্ষেত্রে, শরীফ নুরুল আম্বিয়া জাতীয় পর্যায়ে নেতা হিসেবে তেমন পরিচিত না হলেও বাম রাজনৈতিক অঙ্গনে তার আবার একটা মর্যাদা জায়গা আছে। কিন্তু নেতা সর্বস্ব জাসদ শুধুমাত্র বক্তৃতা বিকৃতির মধ্যে আছে। কিন্তু বাস্তবে জাসদ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ বাহাত্তরে যে জ্বালাও-পোড়াও এবং হঠকারিতার রাজনীতির মাধ্যমে পথ যাত্রা শুরু করেছিল ৫০ বছর পর জাসদ এখন মুখ থুবরে পড়েছে। জাসদ আছে কিন্তু বাস্তবে জাসদ নেই। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭